হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
বিগত কয়েক দিনে সরকারি বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা হয়েছে। সরকারি বিরোধী দল বলা হচ্ছে এজন্য যে, জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভায় রয়েছে। দলীয় প্রধান এরশাদ নিজেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছেন। ফলে সংসদে বিরোধী দল বলতে যা বোঝায়, জাতীয় পার্টি তেমন দল নয়। এটা সরকারের আজ্ঞাবহ বিরোধী দল। সরকার যা বলে তাই করে এবং বলে। এর কারণ হচ্ছে, দলটি মন্ত্রিসভায় রয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে বলা মানে তার বিরুদ্ধে বলা। ফলে জাতীয় পার্টিকে আক্ষরিক অর্থে বিরোধী দল বলা যায় না। সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার হলে একটা কথা থাকতো যে, সবাই মিলে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। সরকারেও আছে আবার বিরোধী দলেও আছে, এমন দলকে কি বিরোধী দল বলা যায়? এ ধরনের বিরোধী দলকে অনেকে ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। অবশ্য বাংলাদেশে এই ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের সূচনা এরশাদই তার শাসনামলে শুরু করেছিলেন। সে সময় আসম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাসদ ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের খেতাব পেয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এবার ১৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিই কিনা, এ খেতাব পেল। অনেকে বলেন, জাসদের তো তবু একটু মানসম্মান ছিল। সরকারের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেনি। ড্রেস রিহার্সেলের মতো হলেও সংসদে সরকারের বিরুদ্ধে দু’চারটা কথা বলেছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছে এবং সরকারের কোনো সিদ্ধান্তেই এখন পর্যন্ত না বলেনি। টেবিল চাপড়িয়ে সমর্থন করেছে এবং করে চলেছে। জাতীয় পার্টি কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকায় না থাকায় তার জনভিত্তিও ভেঙে পড়ার পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। গত পৌরসভা নির্বাচনে মাত্র একটি আসন পাওয়ার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কি? অনেকে বলেন, রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি সাপোর্টিং ক্যারেক্টার বা গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্র। যে চরিত্র না হলে মূল চরিত্র অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অবশ্য এরশাদ নাটক দেখতে পছন্দ করেন। নাটক দেখে হরিষে-বিষাদে কেঁদেও ফেলেন। ক্ষমতায় থাকতে বিটিভির জনপ্রিয় প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান নতুন কুঁড়িতে অভিনয় পর্বে সে সময়ের শিশু অভিনেত্রী ঈশিতা যখন ফেলানি চরিত্রে অভিনয় করেন, তখন এরশাদ তার অভিনয় দেখে কেঁদে ফেলেন। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরে পড়ে। নাটকের প্রতি তার এই অগাধ ভালোবাসার কারণেই কিনা তার মধ্যেও একধরনের নাটকীয় আচরণ বরাবরই লক্ষ্য করা যায়। রাজনীতিতে তার নাটকীয় কথাবার্তা ও কা-কারখানা দেখে দেশের মানুষ মাঝে মাঝেই আমোদিত হয়। তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং কথাবার্তাকে সাধারণ মানুষ উপভোগ করে, তবে সিরিয়াসলি নেয় না। এজন্য অনেকে তার দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা না করে নাট্যদল হিসেবে মনে করে।
॥ দুই ॥
জাতীয় পার্টির সংক্ষিপ্ত রূপ জাপা-কে এখন অনেকেই ‘নাপা’ বা নাটক পার্টি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। যার এরশাদ রচিত একটি পা-ুলিপি রয়েছে। এ পা-ুলিপি যখনই তিনি খোলেন, তখনই নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। গত কিছুদিনে এরশাদের উত্তরসূরি হিসেবে তার ভাই জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা থেকে শুরু করে মহাসচিব পরিবর্তন করা নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে অনেক দিন পর মানুষ একটু নাটকের আনন্দ পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বেশ হাস্যরসাত্মক মন্তব্যের ঝড় বয়ে গেছে। কেউ কেউ জাতীয় পার্টিকে হিন্দি সিরিয়ালের সাথে তুলনা করেছেন। হিন্দি সিরিয়ালের একেকটি পর্বে গল্প এমন এক জায়গায় গিয়ে শেষ করা হয় যে, সবাই পরের পর্ব দেখার জন্য আকুল হয়ে উঠেন। পরের পর্ব দেখার জন্য অপেক্ষা করেন। এরশাদের কথাবার্তা ও ঘটনা ঘটানোর ধরনেও অনেকে হিন্দি সিরিয়ালের নাটকীয়তা দেখতে পান। কারণ হচ্ছে তিনি পরে কী বলবেন আর কী করবেন, তা আগে থেকে কেউ জানে না। অবশ্য তিনি যখন চিফ মার্শাল ’ল অ্যামিনিস্ট্রেটর বা সিএমএলএ হিসেবে ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন, তখনও তার কথাবার্তায় নাটকীয়তা ছিল। সে সময় সিএমএলএ-এর পূর্ণাঙ্গ রূপান্তরকে ব্যাঙ্গ করে অনেকে বলতেন ‘ক্যান্সেল মাই লাস্ট অ্যানাউন্সম্যান্ট।’ অর্থাৎ তিনি আগে যে কথা বলেছেন, তা বাদ, এখন যা বলছেন এটাই ধরতে হবে। সেই থেকে তার নাটকীয়তার শুরু। এটা অনেকটা বহুল প্রচলিত ‘আজ নগদ কাল বাকি’র মতো। ‘কাল’ আর আসে না। এরশাদের চূড়ান্ত কথাও বলা হয় না। অনেকে আবার এরশাদকে ‘রাখাল বালকে’র গল্পের সঙ্গেও তুলনা করেন। রাখাল বালক বাঘ আসার কথা বলে চিৎকার করে যেমন লোকজন জড়ো করে খিলখিল করে হাসত, তাদের প্রতারিত করতো, তেমনি একদিন যখন সত্যি সত্যি বাঘ এলো আর বালকও চিৎকার করল, তখন আর তাকে বিশ্বাস করে কেউ এগিয়ে আসেনি। এরশাদের কথা রাখাল বালকের কথা হিসেবেই মানুষ এখন বিবেচনা করে। কেউই বিশ্বাস করতে চায় না, গুরুত্বও দেয় না। ‘জাতীয় পার্টিকে মানুষ বিরোধী দল মনে করে না’ মাঝে মাঝে এরশাদ দুঃখ করে নিরেট সত্য কথাটি বলে ফেললেও মানুষ তা আমলে নেয় না। এমনকি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকবে বলে বললেও, তা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না।
এরশাদের নাটকীয় আচরণের (অনেকে অভিনয় বলেন) মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা-না করা নিয়ে। জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে তিনি এমন খুঁটি মেরেছিলেন যে, মানুষ মনে করেছিল এবার বুঝি তিনি সত্যি সত্যি বাঘ হয়ে উঠেছেন। তাকে নড়চড় করার সাধ্য কারো নেই। তাদের এ বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়, যখন তিনি বাসায় পিস্তল নিয়ে বসে ছিলেন এবং ঘোষণা দিয়েছিলেন, কেউ যদি তাকে জোর করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে চায়, তাহলে পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করবেন। তার এই ঘোষণা এক চরম নাটকীয়তা সৃষ্টি করে। সব টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা এ দৃশ্য ধারণ করার জন্য তার বাসার সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এভাবে সময় যত অতিবাহিত হতে থাকে মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও তত বাড়তে থাকে। তারা ‘হাই ক্লাইমেক্স’ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, এরশাদ অসুস্থ হয়ে সিএমএইচ-এ ভর্তি হয়েছেন। ঘটনা ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে। জানানো হয়, র্যাব তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছে। কেউই যখন কোনো কিছু জানতে পারছিল না তখন খবর এলো হাসপাতালে শুয়েই তিনি নমিনেশন পেপার সাবমিট করেছেন। ক্লাইমেক্স তখনও শেষ হয়নি। নমিনেশন পেপার সাবমিট ও প্রত্যাহার নিয়ে আরেক দৃশ্যপট রচিত হয়। এরশাদ নমিনেশন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। প্রত্যাহারের আবেদনও করেন। এর মধ্যে নির্বাচনও হয়ে যায়। নির্বাচন হওয়ার পর দেখা গেল, তিনি যে আসনের নমিনেশন পেপার প্রত্যাহার করেছেন, সে আসনে জিতেছেন এবং যে আসনে প্রত্যাহার করেননি, সে আসনে হেরেছেন। তারপরের ইতিহাস সবারই জানা। তার দল মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করে সরকারের অংশীদার হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছেন। তিনি ও তার দল সরকারের কাছে আদরনীয় হয়ে উঠেছেন। মাঝে মাঝে অভিমান করে কিছু বললেও, সরকার তা ¯েœহের দৃষ্টিতে দেখে।
॥ তিন ॥
তবে এরশাদের সবকিছুই যে নাটক, এমন মনে করার কারণ নেই। তিনি অত্যন্ত চতুর ও দক্ষ ব্যক্তি। বলার অপেক্ষা রাখে না, অভিনেতা যতই দক্ষ হোক না কেন, তাকে পরিচালকের কথামতোই অভিনয় করতে হয়। চরিত্র এবং দৃশ্যপটের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। গেলেই নাটক বা সিনেমার গল্পে ব্যাঘাত ঘটে। ছন্দপতন হয়। এরশাদ ও জাতীয় পার্টি যেন বাঁধাধরা এই গ-ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। একবার যদি ভাবা যায়, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে হওয়া মামলাগুলোর চূড়ান্ত রায়ের খড়গ ঝুলে না থাকতো, তাহলে তিনি কী করতেন! এসব খড়গ নিয়েই তিনি যেসব নাটকীয় ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন, তা কোথায় গিয়ে ঠেকত! তারপরও একধরনের শৃঙ্খলিত অবস্থার মধ্যে থেকেই তিনি মাঝে মাঝে নড়াচড়া করেন। তাতেই নাটকীয় সব ঘটনা ঘটে। তার এই মোচড় দেয়াকে হালকাভাবে নেয়া সবসময় ঠিক নয়। যেমন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে তিনি যে মোচড় দিয়েছিলেন, সেসময় সরকার কঠোর হয়ে তাকে একপ্রকার কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতালে শুইয়ে না দিলে নির্বাচনের প্রেক্ষাপটটিই ভিন্ন হয়ে যেত। আর সম্প্রতি তিনি দলের উত্তরসূরি নির্বাচন, মহাসচিব পরিবর্তন, বিশেষ দূতের পদ ছাড়ার ঘোষণা নিয়ে যে মোচড় দিয়েছেন, তাতে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, তার এই মোচড় নিছক মোড় নেয়া নয়। এর নিগূঢ় কারণ রয়েছে। তারা মনে করছেন, এরশাদ উপলব্ধি করতে পারছেন একটি নতুন জাতীয় নির্বাচন হয়তো হয়ে যেতে পারে। তাই সরকারে বিলীন হয়ে যাওয়া জাতীয় পার্টি ও তার অস্তিত্ব জানান দিতে নড়াচড়া করছেন। এর কারণ হতে পারে, দলের একাংশ বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের নিয়ে তার স্ত্রী রওশন এরশাদ সরকারের সাথে বেশ আরাম-আয়েশে আছেন। স্ত্রী বিরোধী দলের নেত্রী হয়েছেন। অথচ দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান হিসেবে বিরোধী দলের নেতা হওয়ার ন্যায্য দাবিদার তিনি। তা না হয়ে সান্ত¡না পুরস্কার হিসেবে হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, যার কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই। এটা তার জন্য নিঃসন্দেহে মর্মপীড়াদায়ক। তাই আর সহ্য করতে না পেরে নড়াচড়া দিয়েছেন। নিজের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দেখাতে উত্তরসূরি ঘোষণা ও মহাসচিব পরিবর্তন করেছেন। এ নিয়ে স্ত্রী রওশন ও তার মধ্যে একধরনের ঠা-া লড়াই শুরু হয়। অন্যদিকে সরকার এটিকে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসেবে কোমল অনুভূতি প্রকাশ করে। তবে সরকারের এ কোমল অনুভূতির পেছনে যে কঠোরতা লুকিয়ে আছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল উদ্ভুত ঘটনা নিয়ে যখন এরশাদ ও রওশন তাদের মধ্যকার ঘটনা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। দৃঢ় জনভিত্তি সম্পন্ন কার্যকর বিরোধী দলই যদি হবে, তবে নিজেদের সমস্যা নিরসনে সরকারের দ্বারস্থ হবে কেন? পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, জাতীয় পার্টির এখন মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে সরকার। সরকারের কথার বাইরে যাওয়ার মতো হিম্মত দলটির নেই। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের মধ্যেই দলটি লালিত ও পালিত হচ্ছে। এরশাদ মাঝে মাঝে নড়াচড়া দিলে, তাকে ঠা-া করার মহৌষধ তো সরকারের কাছে রয়েছেই। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এরশাদ সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এই নড়াচড়া করেন। তা না হলে জাতীয় পার্টি বলে যে একটা দল আছে, তা মানুষ জানবে কী করে! এখন অবশ্য জাতীয় পার্টি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। এরশাদের নড়াচড়া থেমে গেছে।
সরকারের সঙ্গে থাকলে যত মন্দলোকই হোক না কেন, তার চেয়ে উত্তম যে আর কেউ হতে পারে না, তা এরশাদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। সরকার দেশের প্রধানতম বিরোধী দল বিএনপিকে এখন কোনো দলই মনে করছে না। দলটিকে যত ধরনের অপবাদ দেয়া যায়, তার সবই ইতোমধ্যে দিয়েছে এবং বারবার তা বলছে। দলটির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে, এটি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী নয়, সন্ত্রাসী দলসহ এমন কোনো অপবাদ নেই যা দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু এরশাদ ও তার দল জাতীয় পার্টি নিয়ে কোনো কথা নেই। এরশাদ কোথা থেকে এলেন, কিভাবে ক্ষমতা দখল করে স্বৈরাচার উপাধি পেলেন এবং তার দলটি কোথা থেকে জন্মগ্রহণ করলÑ এ নিয়ে কোনো টু শব্দ নেই। এরশাদ কে, কিভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন, দেশ শাসন করেছেন এবং কিভাবে পতন হয়েছে, তা সরকার না বললেও বাংলার জনগণ তা বিস্মৃত হয়নি। সরকার তার স্বার্থে তাকে ¯েœহ দিয়ে ঢেকে রাখতে চাইলেও জনগণ তা কোনো দিনও বিস্মৃত হবে না।
॥ চার ॥
অস্বীকারের উপায় নেই, এরশাদ ও তার দলের অঞ্চলভিত্তিক কিছু সমর্থন রয়েছে। বিশেষ করে রংপুর বিভাগে। সেখানে তার দল কিছু আসন পায় বলেই এখনও টিকে আছে। এ কথা তো ঠিক, দীর্ঘ সময় ধরে কোনো স্বৈরশাসক ক্ষমতায় থাকলে তার পক্ষে কিছু মানুষের সমর্থন গড়ে উঠে। এরশাদের ৯ বছরের স্বৈরশাসনকালেও তা গড়ে উঠেছে। তবে এ সমর্থন জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে খুবই কম। এই স্বল্প আনুপাতিক সমর্থন নিয়েই এরশাদ ও তার দল এখনও টিকে আছে। তবে তার কৃতকর্ম তাকে এখনও ছাড়েনি। বিচার চলছে এবং শাস্তিজনক পর্যায়ে রয়েছে। বলা যায়, তাকে খাদের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। একটু এদিক-সেদিক হলেই খাদে ফেলে দেয়া হবে। সরকার তার অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই তা করে রেখেছে। এ থেকে যেন তার মুক্তি নেই। এক অর্থে, এরশাদ মুক্ত থেকেও এক অদৃশ্য পিঞ্জরে বন্দি হয়ে আছেন। বলা যায়, নাটকের মঞ্চে অদৃশ্য সুতার টানে অভিনয় করে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে সুতা ছিঁড়ে, নিজের মতো চলতে গিয়েও পারেন না। সরকার খাদের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই বিনাবাক্যে নির্ধারিত মঞ্চে ফিরে আসেন। পুনরায় সুতার বাঁধনে আটকা পাড়েন। তার এই অদৃশ্য বন্দিত্ব চলছে নব্বইয়ের গণআন্দোলনে তার পতনের পর থেকে। এটা এরশাদের জন্য দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। আবার সৌভাগ্যও বলতে হবে এ কারণে, যেভাবেই হোক কৃতকর্মের শাস্তি এখনো ভোগ করতে হচ্ছে না। যতদিন দাবার গুটি হয়ে এভাবে চলবেন, ততদিন হয়তো তিনি মুক্ত থাকবেন। তার নাটকের পা-ুলিপিতে পুরনো দৃশ্যের সাথে নতুন দৃশ্য সংযোজন হবে। এ জীবন এবং এ নাটকের পা-ুলিপি আর ভালো লাগে না বা মানতে পারেন না বলেই হয়তো মাঝে মাঝে এমন সব নাটকীয় ঘটনা ঘটান, যা মানুষকে সার্কাসের একটি বিশেষ চরিত্রের মতো আনন্দ দেয়। তার এবং তার দলের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীও এ পা-ুলিপির বাইরে নয়।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।