বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আত্মীয়-স্বজনকে দান ও সহায়তা করার ব্যাপারেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। হজরত সালমান ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসের শেষাংশে উল্লেখ রয়েছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিসকিন-অসহায়কে দান করলে কেবল দানেরই সওয়াব হবে। আর আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব।
একে তো দানের সওয়াব, দ্বিতীয়ত আত্মীয়কে সাহায্যের সওয়াব।-জামে তিরমিযী। এ ছাড়াও হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এ রকম একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে যে, মদিনার সবচেয়ে বেশি খেজুর বাগানের মালিক হজরত আবু তালহার ‘বাইরাহা’ নামক সেরা বাগানটি তিনি আল্লাহর নামে দান করার ঘোষণা দিলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আপনি যেভাবে ভালো মনে করেন, এ বাগানটি খরচ করুন। আমি এর বিনিময়ে কল্যাণ চাই।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত খুশি হয়ে বলেন, বাহ! অত্যন্ত উপকারী ও কল্যাণজনক সম্পদ। তোমার বক্তব্য আমি শুনেছি তবে আমি মনে করি, তুমি তোমার এ দান তোমার আত্মীয়দের মাঝে দান করে দাও। অতঃপর হজরত আবু তালহা তা-ই করলেন। এ হাদিসটি সহি বুখারি ও মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে।
এখানে দেখা যায়, আল্লাহর নামে নিজের প্রিয় ও সেরা কিছু দান করলে সেটাও গরিব আত্মীয়দের মাঝে বণ্টন করে দেয়াই অধিক শ্রেয়। হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা তা-ই প্রমাণ করে।
উম্মুল মুমিনীন হজরত মায়মুনা বিনতে হারিস রা. বর্ণনা করেন, একবার তিনি তাঁর মালিকানাধীন এক দাসীকে মুক্ত করে দিলেন এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরে তা জানালেন।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাই! তবে তুমি তাকে মুক্ত করে দেয়ার চেয়ে তোমার মামাজানদের হাদিয়াস্বরূপ দিয়ে দিলেই বেশি ভালো হতো। -সহি বুখারি ও মুসলিম।
এ ঘটনাটি জাহেলি দাসপ্রথা শরীয়ত কর্তৃক বিলুপ্ত হওয়ার পূর্বের ছিল। তবে এখানেও স্পষ্ট যে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক কত উত্তম কাজ। এ ছাড়াও আরো কিছু হাদিস জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশের সহজ উপায়ের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধনকেও উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও ইসলাম ও কুফরের ব্যবধান ও পার্থক্য সত্তে¡ও তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তা সজীব রেখে এই অসাধারণ অনিবার্য সুন্নতটিকে প্রমাণ করে গিয়েছেন। অথচ আমরা অনেকাংশই এ মহান সুন্নত থেকে উদাসীন। এত যে সুন্নতের বয়ান করি এবং শুনি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই অবিরত সুন্নতটি মেঘের আড়ালেই যেন ঢাকা পড়ে থাকে।
বর্তমান শহুরে জীবন ও সংস্কৃতিতে নিজ আত্মীয়-পরিজনদের খোঁজখবর রাখা এবং যথাসাধ্য তাদের সঙ্গে জুড়ে থেকে তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হওয়ার সময় ও মানসিকতা আমরা ক’জনই বা পাই। আমরা যদি আত্মীয়তার এ বন্ধনকে নিছক সামাজিক কর্তব্য না ভেবে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আজীবন লালিত মহান সুন্নত হিসাবে হৃদয়ে লালন করতাম, তবে এর ওপর আমলও করতে পারতাম। রাব্বুল আলামীন এখন থেকে আমাদের সেই তাওফিক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।