Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিবগঞ্জে ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ

শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৯, ১:৫১ পিএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। এ নিয়ে শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ৭১ জনের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ চাঁপাইনবাবগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর দাখিল করেছেন। 

অভিযোগের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে- সম্প্রতিকালে ৫২৩০৬৯ নম্বর চেকে ৪০ টাকা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তিনি ৪ হাজার টাকা আদায় করছেন বলে ভুক্তভোগী সাদিকুল ইসলাম জানান। অভিযোগে জানাগেছে- শাহবাজপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খারিজ করতে আসা সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আসছেন সহকারী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আবদুস সোবহান। এমনকি অতিরিক্ত অর্থ না পেলে সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হুমকি ধামকি প্রদান করেন। একই সঙ্গে জমির খারিজ করতে আসা সেবাগ্রহীতাদের টালবাহানা করে দিনের পর দিন হয়রানি করে আসছেন। চাহিদা মত অতিরিক্ত অর্থ সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে আদায়ে বিঘ্ন ঘটলে অফিসের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা আদায় করে থাকেন। শাহবাজপুর ইউনিয়নের নামোচকপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট একরামুল হক জানান, ভূমি অফিসে স্থানীয় আজমতপুরের বাসিন্দা কাইয়ুম, নলডুবরি গ্রামের মিছু আলী, কামাল মহরিল, মীর্জা রাসেল ও নজরুল ইসলামসহ প্রায় ১০-১২ জনের সমন্বয়ে যোগসাজস করে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন আবদুস সোবহান। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি সেবাগ্রহিতাদের কাছ থেকে খারিজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকেন। এই সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দেয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রসেস সার্ভার মোনাব আলী খাঁন। তবে মোনাব আলী খাঁনসহ সিন্ডিকেটের সদস্য অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন।
সরজমিনে গিয়ে এলাকাবাসি জানায়, এরআগে আবদুস সোবহান ভোলাহাটের জামবাড়িয়া, নাচোলের ৪টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, গোমস্তাপুর সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর, শ্যামপুর, দাইপুখুরিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চাকুরিকালীন সময়ে দুর্ণীতি ও অনিয়মের অভিযোগে এলাকাবাসির হাতে লাঞ্ছিতসহ একাধিকবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন বলে ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ইউনিয়নের আশিক মিয়া জানিয়েছেন। তিনি সর্বশেষ গত ২৪-০৪-১৮ তারিখ শাহবাজপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগদানের পর থেকেই ১০-১২ জনের সমন্বয়ে যোগসাজস করে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে জমির খারিজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবাগ্রহিতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আসছেন। সরজমিনে গিয়ে জমির খারিজ করতে আসা সেবাগ্রহিতা শাহবাজপুর ইউনিয়নের বালিয়াদিঘি গ্রামের মৃত শসমের আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে আমার স্ত্রী রোজেদা বেগম নামীয় শাহবাজপুর ইউনিয়নের ঘোষপুর মৌজার ৫২ নম্বর দাগে সাড়ে ১৬ শতক জমির খারিজের জন্য তার পরামর্শে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আবেদন করি। এরপর নকল দলিল উত্তোলনের নামে প্রথম দফায় ৩ হাজার টাকা নিয়ে ভূয়া একটি নকল দলিল দেখিয়ে জাল দলিলের জমির খারিজ হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন দেন। এরই প্রেক্ষিতে আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেকর্ড অফিস থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ করে নকল দলিল উত্তোলন করে তার নিকট জমা দিই। পরে ওই জমির নামজারি নম্বর দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত খারিজটি অনুমোদন হয়নি। উল্লেখ, আমার নিকট থেকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আবদুস সোবহান। পারদিলালপুর গ্রামের সেবাগ্রহিতা এজাবুল হক জানান, প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস আগে আমার স্ত্রী মহকি বেগম দিং নামীয় দেড় একর জমি খারিজ করতে প্রথম দফায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আবেদন করি। অতিরিক্ত অর্থ
আদায়ের হীন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আমাকে হয়রানি করে আসছে। একইভাবে স্থানীয় বাসিন্দা কয়েস আলী, সহরুল, মনিরুলসহ অনেকেই হয়রানি শিকার হয়েছেন বলে জানাগেছে। এ ব্যাপারে আবদুস সোবহানের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ হয়েছে তার অভিযোগকারী প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু প্রত্যাহারে লিখিত কপি তিনি দিতে পারেননি। তবে অভিযোগে স্বাক্ষরিত বাকি ৭০ জন প্রত্যাহারের বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন তারা। তারা আরও জানান, আমরা এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করছি। এ ঘটনায় সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ সৃষ্টি অব্যহত রেখেছেন আবদুস সোবহান। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বরমান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ ঘটনায় আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে জরুরী ভিত্তিতে সঠিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ