Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরিদগঞ্জে ২২ কিলোমিটার সড়ক পাশের ২৩ শতাধিক গাছ কাটার আয়োজন

প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মামুনুর রশীদ পাঠান, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে
আবহাওয়া বা জলবায়ুকে জনবান্ধব করে তুলতে সরকার যেখানে প্রতিনিয়ত গাছ লাগিয়ে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিপদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে একটি  চক্রের লালসার শিকার হচ্ছে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়কের দু’প্রান্তের ছোট-বড় প্রায় আড়াই হাজার গাছ। ইতিমধ্যে গাছগুলোর একটি অংশ কেটে সেখানে লাল রঙের নাম্বার বসিয়ে জানান দিচ্ছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কেটে ফেলা হবে রাস্তার দু’প্রান্তে সবুজ ঘেরা গাছগুলো। পরিবেশবিদদের দৃষ্টিতে গাছগুলো কাটা হলে ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জলবায়ু। ফলে বেড়ে যাবে উষ্ণতা। গাছ কেটে ফেলার খবর জানতে পেরে ইতিমধ্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠছে সর্বস্তরের জনগণ। বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের গাছ পালন বিভাগের এসও জহিরুল ইসলামের সাথে সড়কের দু’প্রান্তের গাছগুলো কাটার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, চাঁদপুর থেকে ফরিদগঞ্জের বয়ার্ডার এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকার হাইওয়ে সড়কের দু’প্রান্ত ৩৫ বছরের জন্য ১৯৯৫ সালে লিজ নিয়েছেন বাগাদী এলাকার জনৈক মঞ্জু পাটওয়ারী। তিনি এ গাছগুলোর সুবিদাভোগী। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৩শ’ ৯৬টি গাছ মার্ক করা হয়েছে নিলাম দেয়ার জন্য। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ হলে গাছগুলো নিলামে বিক্রি হবে। বিক্রি হওয়া অর্থের অর্ধেক পাবেন তিনি এবং বাকি অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে। পুরাতন গাছগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, লিজ প্রাপ্ত ব্যক্তির লাগানো গাছের বাহিরে অন্য গাছ কাটা হবে না। কিšুÍ সরেজমিনে এর চিত্র অন্য। নতুন ও পুরাতন সব গাছেই লিজের জন্য মার্ক করা হয়েছে। এদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ফরেস্ট অফিসার সফিকুল আমিন আপেল জানান, আমাদেরকে না জানিয়ে রোর্ডসের বৃক্ষ পালন বিভাগ এই সড়কে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ফরেস্ট বিভাগের লাগানো চৌতুরা এলাকা থেকে বয়ার্ডার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটারের রাস্তার গাছও কাটার জন্য মার্ক করেছে। আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ্রত দত্ত গাছ কাটার বিষয়টি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথের সামাজিক বনায়ণের বিভাগটি কুমিল্লায় একটি শাখা আছে। তারা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের গাছ কাটার ফাইলপত্র এখনও আমার কাছে আসেনি। গাছ কাটার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবদিন জানান, হাইওয়ে সড়কের গাছের সাথে উপজেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট নয়। তারপরেও পরিবেশ বিপন্ন হবে এমন কাজ আমরা সমর্থন করি না। তাছাড়া গাছগুলো অপরিপক্ব হলে তা না কাটাই উচিৎ। তবে বিষয়টি  আমি জেলা প্রশাসক মহদোয়কে জানাবো। ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়কের দু’প্রান্তের সবুজ ঘেরা গাছ কাটা পরিকল্পনার কথা শুনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশবান্ধব সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ গড়ার কাজে যখন ব্যস্ত। তখন একটি চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের সুন্দর পরিবেশকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। আমরা এই হীন কাজ করতে দিব না। প্রয়োজনে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ড. মহেববুল্লাহ খান বলেন, বিরুপ আবহাওয়ার ভয়াবহ উষ্ণতায় এমনি এই এলাকার মানুষের জীবযাত্রা প্রায় বিপন্ন। তার ওপর আমাদের এলাকার সুন্দর পরিবেশের হাজার হাজার মানব উপকারী বৃক্ষগুলো কেটে ফেললে আমরা দারুণভাবে কষ্ট পাবো। তিনি বলেন, সরকারের উচিৎ গাছের সুবিদাভোগীদের অন্যভাবে সহযোগিতা করে গাছগুলো বাঁচানো। পরিবেশ আন্দোলনের চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর রতন মজুমদার বলেন, অপরিকল্পিতভাবে রাস্তার দু’পাশ্বের গাছ কাটার কারণে মাটি ক্ষয়ের ফলে প্রতি বছর রাস্তার মারাত্মক ক্ষতি হয়। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশও নষ্ট হয়। অতিরিক্ত বৃক্ষ নিধনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে গিয়ে বাসযোগ্য পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যায়। আমাদের সংগঠন এ ধরনের কাজের প্রতিবাদ করে। তাই আমি বলবো উপযুক্ত পরিবেশ করা ছাড়া গাছগুলো কাটা উচিৎ নয়। ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল হাই স্কুলের প্রধার শিক্ষক ও সামাজিক সংগঠক রফিকুল আমিন কাজল এ ধরনের পরিবেশ বিরোধী কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, গাছ আমাদের জীবন বাঁচায় সুতরাং অন্যায়ভাবে গাছ কাটতে দেয়া হবে না। সম পরিমাণ গাছ লাগিয়ে এবং তা বড় হওয়া না পর্যন্ত রাস্তার পাশ্বের কোন গাছ কাটতে আমরা দিতে পারি না। প্রয়োজনে এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাবো। ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী নোমান বলেন, রাস্তার পাশ্বের গাছগুলো আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। তাই আমাদের উচিৎ হবে গাছগুলোকে রক্ষা করা। তাছাড়া এ গাছগুলো একবার কাটার পর আর এতো সুন্দর গাছের পরিবেশ আমরা ফিরে পাব কিনা সন্দেহ আছে। সুতরাং গাছগুলো না কেটে সুবিদাভোগীকে অন্যভাবে সহযোগিতা করা উচিৎ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফরিদগঞ্জে ২২ কিলোমিটার সড়ক পাশের ২৩ শতাধিক গাছ কাটার আয়োজন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ