পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দূষণ-ভরাটে অস্তিত্ব সঙ্কটে সুরমা নদী। শীতে কঙ্কাল আর বর্ষায় বন্যার বেসামাল রূপ সুরমা নদীর বাস্তবতা। সুরমা নদী খননের জন্য দীর্ঘদিন থেকেই দাবি জানানো হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সমীক্ষাতেই আটকে আছে খনন কাজ। খননের জন্য প্রায় ৩ বছর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর প্রস্তাবনা পাঠালেও এখনো শুরু হয়নি কাজ।
ভারতের আসাম রাজ্য থেকে নেমে আসা বরাক নদী সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসীদ এলাকায় সুরমা ও কুশিয়ারা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সুরমা জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, সিলেট সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ শহর ও আজমিরীগঞ্জ হয়ে ভৈরবের কাছে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে ২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সুরমা নদী ৯ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয়ে শহরাঞ্চলের মাত্র ৬০০ মিটার খনন করা হয়।
সুরমার নাব্যতা ফেরাতে প্রয়োজন হয় আরো বড় খনন প্রকল্প। সে সময় শরীফাবাদ, খাদিমনগর, সেনানিবাস সংরক্ষণের জন্য রুস্তমপুর ও নলুয়া খনন এবং কানাইঘাটের বেশ কিছু এলাকা খনন প্রকল্প অনুমোদন চেয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর। কিন্তু সে প্রস্তাবনা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তাছাড়া দেশের ১০ জেলায় নদী খনন প্রকল্পের আওতায় সুরমা নদীর নাম অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এখনো চলছে সমীক্ষা। এ সমীক্ষা কবে আলোর মুখ দেখবে তাও সঠিক করে বলতে পারছেন না স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সিলেটের সুরমা নদী যে স্বাভাবিক রূপে নেই সেই বিষয়টি স্বীকার করে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন বলেন, নদীর স্বাভাবিক চরিত্র হচ্ছে নদীর স্রোত ঠিক থাকবে। মৌসুমে থাকবে পর্যাপ্ত পানি। নদী ভাঙন রোধ হবে। কিন্তু এই বাস্তব চরিত্র দেশের অন্য নদীর মতো সুরমায়ও নেই।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে নদী খনন কাজ না হওয়া ও পর্যাপ্ত বাঁধ না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীর দু’পাশ অবৈধ দখলদারদের কবলে যাওয়ার কারণে নদী প্রস্থ ছোট হয়ে এসেছে। আমরা সরকারের কাছে প্রকল্প পরিকল্পনা পাঠিয়েছি। যেটিতে নদী খনন ও দখলমুক্ত করণের বিষয়গুলো আছে। আর এই প্রকল্পের মাধ্যমেই সুরমা তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে মনে করি।
অন্যদিকে সিলেটের জকিগঞ্জের দিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ভারতের সীমান্তবর্তী অংশে ৬৬.৭ কিলোমিটার অংশে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প সরকারের কাছে দেয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে নদীর ভাঙন রোধ হবে। তবে ওই এলাকাতে এখন নদী ড্রেজিংয়ের কোন প্রকল্প নেই। বাঁধ নির্মাণের পরে নদী খননের প্রকল্প নেয়া হবে। ৬৬.৭ কিলোমিটার এলাকাতে বাঁধ নির্মাণে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয় হবে।
সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আবদুল হাই আল হাদী বললেন, নদী তীরে গড়ে ওঠে সভ্যতা ও নগর। একটু অসচেতনতার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে নদী। যদি মানুষ সচেতন না হয় তাহলে নদী বাঁচবে না। দূষণ-ভরাটে অস্তিত্ব সঙ্কটে এখন সুরমা নদী। শীতে কঙ্কাল ও বর্ষায় বন্যার বেসামাল রূপ সুরমা নদীর বাস্তবতা। এর নৈপথ্যে উজানে ভারতের আগ্রাসী নদী শাসন। একই সাথে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে নদী বান্ধব পদক্ষেপে চরম ব্যর্থতা।
সিলেট চেম্বার ও অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক প্রশাসক ও সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সুরমা নদী আমাদের বদলে দিয়ে সভ্যতাকে করেছিল বিকশিত। কিন্তু সেই নদী নিয়ে নেই কোন পরিকল্পিত পরিকল্পনা। তেমনটি হলে সুরমা বুকের বালু সম্পদ বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতি সুসংহত হতো।
এদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম সুরমার নাব্যতা ফেরাতে খনন একান্ত জরুরি উল্লেখ করে বলেন, উজান থেকে নিচের দিকে বালু নামবে এটাই নিয়ম। নিচের দিক খননের চেয়ে উজানে খনন করা বেশি জরুরি।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইনজিনিয়ারিং এন্ড এনভারমেন্টাল সাইন্স বিভাগের প্রফেসর মুহাম্মদ আক্তারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সুরমা-কুশিয়ারা না বাঁচালে সিলেটকে বাঁচানো যাবে না। এটাই নির্মম সত্য। বিষয়টি নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি খুবই জরুরি। সেজন্য স্থানীয় রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। উন্নয়ন অগ্রগতির মৌলিক ভিত্তি নদ-নদী। সেই নদ-নদীর ধ্বংস রোধে মহাপরিকল্পনা না নিয়ে ভিন্ন খাতে উন্নয়নের নামে অর্থ লুট বা বাহাবা অর্জন সাময়িক সম্ভব, তবে শেষ ফলাফল কারো জন্য কল্যাণকর হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।