Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছিদ্রযুক্ত তলদেশ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের ফেরিই একমাত্র ভরসা

আতিয়ার রহমান, নড়াইল থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

নড়াইলের লোহাগড়ার মধুমতী নদীর কালনা ফেরিঘাটের যানবাহন পারাপারে ব্যবহৃত তিনটি ফেরির মধ্যে দুটি ফেরি বিকল হয়ে পড়ে আছে। সবচেয়ে বড় ফেরিটি ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে ওই ঘাটে ফেরি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি ঘাটে আটকা পড়ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা, মাগুরা ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বাস-ট্রাকসহ শত শত যানবাহন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বাস যাত্রীরা, নষ্ট হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাকের কাঁচামাল। এমন দুর্ভোগের চিত্র কালনা ফেরিঘাটে দেখা গেলেও কর্তৃপক্ষ বিকল ফেরিগুলোর মেরামতের কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ ঘাটে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) তিনটি ফেরি আছে। একটি ইউটিলিটি টাইপ-১-এর ১৬ নন্বর ফেরি। এটি ছোট, এতে ৭-৮টি গাড়ি পারাপার করা যায়। অন্যটি ইউটিলিটি টাইপ-১-এর ৪ নন্বর ফেরি। এটি বড়, এতে ১৬-১৭টি যানবাহন পারাপার করা যায়। এ ফেরিটি ১৫ দিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। আরেকটি ইউটিলিটি টাইপ-১-এর ৫ নন্বর ফেরি। সেটি প্রায় এক বছর আগে মেরামতের জন্য ঢাকায় নেয়া হয়েছে। এখনও তা ফিরে আসেনি। এ ঘাটের ছোট ১৬ নন্বর ফেরিটি শুধু সচল রয়েছে। তাও জারাজীর্ণ। তলদেশে অসংখ্য ছিদ্র। সে ছিদ্র দিয়ে পানি উঠে। এ ফেরিতে ৭-৮টি যানবাহন পারাপার করা যায়। গত ১৫ দিন ধরে ওই ঘাটে চলাচল করছে জরাজীর্ণ এ ফেরিটি। পুরানো মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকমে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে ফেরি সার্ভিস। ফেরি সঙ্কটের কারণে যথা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না যানবাহন। তাই প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রবাহী গাড়ি, মালবোঝাই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহন উভয়পাড়ে আটকা পড়ছে।
চার নন্বর ফেরিটি ঝালাই করে মেরামতের কাজ চলছে এ ঘাটেই। তবে এর পাটাতন পুরোটাই জোড়াতালি দেয়া। এসব মেয়াদোর্ত্তীণ ফেরিতে পারাপারের সময়ে আতঙ্কে থাকেন গাড়ীর যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। ২০১৪ সালের ১৮ জুন গভীর রাতে এ ধরনের জারাজীর্ণ একটি ফেরি পানিতে ডুবে যায়।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ ফেরিঘাটে দিয়ে চলাচলে ঢাকার সঙ্গে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়াসহ এ এলাকার দূরত্ব অনেক কম।
ফেরিতে উঠার অপেক্ষায় থাকা ট্রাক চালক হাসমত শেখ বলেন, ‘বেনাপোল থেকে এসে ঢাকায় যেতে ৩/৪ ঘণ্টা ধরে ফেরিঘাটে অপেক্ষা করছি। কিন্তু ছোট ফেরি হওয়ার কারণে পার হতে পারছিনা। এতে করে ট্রাকে থাকা কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বড় ফেরিটি সচল থাকলে এমন দুর্ভোগে পড়তে হতো না।’
অপেক্ষমান একটি বাসের যাত্রীরা বলেন, ‘নদীর দু’পাড়ে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে ফেরি সঙ্কটের কারণে ভোগান্তিতে পড়ে থাকতে হয়। দ্রæত বিকল ফেরিটি মেরামত করলে শান্তি ফিরবে।’
ফেরির ইজারাদার মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘১৯৮৬ সালে নির্মিত ফেরির ইঞ্জিনের সিলিন্ডার, পিস্টনে সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে। ২৫ বছর পার হলেই ইঞ্জিনের অশ্বশক্তি কমে আসে। ফেরির কাঠামোও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এসব ফেরির পাটাতন অনেক পুরাতন। ১০ টনের বেশি ওজনের ট্রাক এ পাটাতনে সইতে পারে না। বর্তমানে অধিকাংশ ট্রাক ৩০-৪০ টনের ওপরের। এছাড়া বড় বড় কাভার্ডভ্যান চলে নিয়মিত। তাই নতুন তিনটি ফেরি দরকার।’
সওজ ফরিদপুর অঞ্চলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ফেরি) মাসুদ হাসান বলেন, ‘এ ফেরি ঘাটে যাতায়াতকারী মানুষগুলো খুবই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। নতুন ফেরির জন্য লিখিতভাবে অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’ ব্যস্ততম ঘাটগুলোয় সময়োপযোগী ৩শ’ টন ধারণক্ষমতার ফেরি সরবরাহ করা উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছিদ্রযুক্ত তলদেশ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ