মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত এক ধরনের শ্রেষ্ঠত্বের জায়গা থেকে পাকিস্তানকে দেখে থাকে। পাকিস্তান এবং তাদের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে তাই তারা তাচ্ছিল্যও করে থাকে। বহুবার তারা এ ধরনের বিষয় নিয়ে গর্বও করেছে। এই ধারণার বীজ লুকিয়ে আছে ভারতের কৌশলগত সম্প্রদায়ের এই বিশ্বাসের ভেতরে যে, আগ্রাসী খেলোয়াড় হলেই কেবল ভারতের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা হবে। ভারত সবসময়ই পাকিস্তানের জন্য একটা অস্তিত্বের হুমকিস্বরূপ ছিল এবং এখনও আছে। কারণ তাদের অধিকাংশ সামরিক নীতি ও পরিচালনা কৌশলই পাকিস্তান বিরোধী। প্রতিবেশী দেশগুলোতে রাজনৈতিক-সামরিক দিক থেকে নিয়ে অগতানুগতিক বিভিন্ন উপায়ে ভারত যেভাবে হস্তক্ষেপ করে, সে কারণে দক্ষিণ এশিয়া ‘নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক অঞ্চল’ হয়ে উঠেছে। এ কারণে ভারতের ব্যাপারে পাকিস্তানের যৌক্তিক নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে, কারণ ভারত অব্যাহতভাবে আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘উদীয়মান শক্তি’ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পথে ভারত পাকিস্তানকে, এবং এখন চীনকে, তাদের পথের কাঁটা মনে করে। ‘নিউক্লিয়ার উইপন্স প্রলিফারেশান ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’ নিবন্ধে জিবা মোশাভের লিখেছেন যে, নেহরু বিশ্বাস করতেন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ভারত এই শক্তি অর্জন করতে পারবে। অন্যদিকে, তার পরবর্তীকালের নেতারা মনে করেছেন যে, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গড়ার মাধ্যমেই কেবল এই কৌশলগত শক্তি অর্জন করা সম্ভব। দ্বিতীয় এই ধারণাটিই ভারতে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং ভারতীয় সামরিক বাহিনীর নীতিমালার ক্ষেত্রেও এটারই প্রতিফলন দেখা যায়। এই নীতির কারণেই সামরিক বাহিনীতে ‘সিমালটেনিয়াসলি অ্যান্ড ডিপ থ্রাস্টস’ নীতি বদলে ‘কোল্ড স্টার্ট’ হয়েছে এবং ‘প্রোঅ্যাক্টিভ অপারেশান্স’ নীতি বদলে ‘টু ফ্রন্ট ওয়্যার’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, ভারত নিজেদেরকে আঞ্চলিক শক্তিধর দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পথে দুটো কৌশলগত ভুল করেছে, যেটা তাদের কনভেনশনাল সামরিক শক্তিকে গুরুত্বহীন করে ফেলেছে। ভারত তাদের কনভেনশনাল সামরিক শক্তিকে ব্যবহার করে পাকিস্তানকে সহজেই ঠেকিয়ে দিতে পারে বলে যে ধারণাটা রয়েছে, সেটিও নাকচ করে দেয়া হয়েছে এই নিবন্ধে। প্রথম ভুলটি ছিলো ১৯৯৮ সালে ভারত যখন পারমাণবিক শক্তি অর্জন করে, তখন দক্ষিণ এশিয়াকে তারা অতিমাত্রায় পারমাণবিকীকরণ করে তোলে। দ্বিতীয়টি হলো সাম্প্রতিককালে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের ভেতরে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ বিমান হামলা চালানো। জিবা মোশাভের লিখেছেন, ১৯৬৪ সালে নেহরুর মৃত্যুর পরপরই ভারত তার নীতি থেকে সরে আসে এবং পারমাণবিক শক্তির ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক দিকটিকে উপেক্ষা করে দ্রুত তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি শুরু করে। ভারত মহাসাগরে কমিউনিস্ট আর পুঁজিবাদী ধারণার সঙ্ঘাত আর আঞ্চলিক প্রতিদ্ব›িদ্বতার কারণে ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির আকাক্সক্ষা আরও তীব্র হয়। ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক বিস্ফোরণ’ নাম দিয়ে ১৯৭৪ সালে পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ভারত। ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে এই পরীক্ষা চালানো হয়। এই পরীক্ষার ফলে বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে পড়ে ভারত এবং এর সূত্র ধরেই ১৯৭৪ সালে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রæপ গঠিত হয়। এই পরীক্ষার কারণে পাকিস্তান তাদের নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহী হয়। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত দক্ষিণ এশিয়াকে ভারত এমনভাবে পারমাণবিকীকরণের দিকে নিয়ে গেছে, যেখান থেকে ফিরে আসার আর কোন উপায় নেই। অন্যদিকে বিধিনিষেধ আরোপ করে পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখনও গোপন, অনিশ্চিত ও দুর্বোধ্য পর্যায়েই রয়ে গেছে। ভারত তাদের সামরিক শক্তি বাড়াতেই থাকে এবং স্থল-ভিত্তিক কৌশলগত মিসাইলকে পারমাণবিক ট্রায়াডের পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং কনভেনশনাল সামরিক শক্তিও বাড়াতে থাকে তারা। পাকিস্তানকে শক্তির এই পার্থক্য ঘোচানোর জন্য চেষ্টা করতে হয় এবং নতুন নীতি হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে হয়। এখন এই নীতিকে বলা হচ্ছে ‘ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্স’। ভারতের সংখ্যাগত দিক থেকে যে সামরিক আধিপত্য রয়েছে, সেটার মোকাবেলায় এই কৌশল নিতে হয় তাদের। ১৯৯৯ সালে দুই দেশের মধ্যে কারগিল যুদ্ধ বাধে। যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির বিবেচনায় দুই পক্ষেরই ক্ষতি হয়েছে প্রায় সমান। কিন্তু ভারতের কৌশলগত স¤প্রদায়ের কাছে তখন মনে হয়েছে ‘পারমাণবিক শক্তির ছত্রছায়ায় এ ধরনের ছোটখাটো যুদ্ধ চালানো সম্ভব’। কিন্তু দুটো সময় ভারতের সামরিক বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্বের দাবি টেকেনি। প্রথমত, ২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্টে হামলার পরবর্তী সময়ে এবং দ্বিতীয়ত ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার পরবর্তী সময়ে। দুটো ঘটনাতেই ভারত তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানকে দোষারোপ করেছে, যদিও সে সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোন সামরিক অভিযান চালানো হয়নি। ভারতের এই আধিপত্যের মনোভাব মোকাবেলার জন্য পাকিস্তানের নতুন কিছু নিয়ে আসা দরকার হয়ে পড়েছিল। ফলে তারা স্বল্পমাত্রার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছে। পাকিস্তান যুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবহারোপযোগী পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার কারণে এবং ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি ২০১৩ সালে এই নীতির অনুমোদন দেয়ায় ‘যুদ্ধের সম্ভাবনা আরও কমে এসেছে’। সহজ হিসেবে এর অর্থ হলো কনভেনশনাল শক্তিশালী সামরিক বাহিনী নিয়ে ভারতকে হয়তো একে অন্যের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হবে, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে জড়াবার উপায় তাদের থাকবে না। এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।