গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
নিরাপদ কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। শনিবার (৩০ মার্চ) ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘নিরাপদ কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা : চকবাজার পরবর্তী প্রস্তুতি’ শীর্ষক মত বিনিময় সভায় বক্তারা এ আহবান জানিয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় শুরুতে চকবাজার ও বনানীতে অগ্নিকান্ডে নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন এবং নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে ব্যবহৃত কেমিক্যালের বাজার মূল্য প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রতি বছর কেমিক্যালের ব্যবহার প্রায় ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, পুরোনো ঢাকায় প্রায় ৮০০ প্রকারের কেমিক্যাল দ্রব্য বেচাকেনা হয়ে থাকে। নিমতলী ও চুরিহাট্টার অগ্নিকান্ড থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে আমাদের রাসায়নিক পণ্যের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নি¤œমানের। তিনি হাজারীবাগের ট্যানারী শিল্পের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তা পুরোনো ঢাকা হতে অন্যত্র স্থানান্তর করা যেতে পারে। তিনি সরকার প্রস্তাবিত কেমিক্যাল পল্লীর দ্রুত বাস্তবায়নের উপর জোরারোপ করেন। তিনি কেমিক্যাল ব্যবসায় সম্পৃক্তদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। এ ছাড়াও তিনি উদ্যোক্তা, গবেষক, বিজ্ঞানী, শিল্পপতি, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণে ‘রাসায়নিক নিরপত্তা ও ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি নিরপাদ কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনার জন্য এ খাতের ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ প্রদান একান্ত আবশ্যক এবং ভবিষ্যতে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের সহায়তায় ডিসিসিআই এ ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদানে আগ্রহী বলে জানান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন-এর মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়িক কর্মকা- আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং অত্র এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা নিরাপদ করতে পারলে একদিকে যেমন জনগণের জানমাল নিরাপদে থাকবে অপরদিকে ব্যবাস-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে। তিনি বলেন, চকবাজারে ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডের পর ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিবৃন্দের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে এবং এ টাস্কফোর্সের পরিচালিত কার্যক্রমে বিশেষ করে পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়ী সমাজ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ঢাকার অদূরে সিরাজদিখান এলাকায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর মাধ্যমে ‘কেমিক্যাল পল্লী’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশা করা যায়। তিনি বলেন, বিগত ১ মাস ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হতে অতি দাহ্য রাসায়ানিক পদার্থসমূহ সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পুরোনো ঢাকায় প্রায় ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তাদেরকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নি-নির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানান। মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিবৃন্দের দাবির প্রেক্ষিতে বাবু বাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় একটি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডের ঘটনাসমূহের তদন্তের জন্য ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন অগ্নিকান্ড সহ যে কোনো দূর্ঘটনা মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ, মহড়া এবং আইনের যথাযথ বাস্তাবয়ন একান্ত অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন। তিনি জানান, বিশেষ করে কেমিক্যালজনিত অগ্নিকান্ড মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে ২০ সদস্যের একটি বিশেষ দল সর্বদা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি পুরোনো ঢাকার বেশ কিছু জায়গায় ‘স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশন’ স্থাপন করা প্রয়োজন এবং অত্র এলাকায় ভূগর্ভস্থভাবে পর্যাপ্ত পানি মজুদ রাখার উপর আহ্বান জানান।
সভায় ইঞ্জিনিয়ারিং রিসোর্স ইন্টারন্যাশনাল (ইআরআই) এর চিফ কেমিক্যাল ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট ইঞ্জি. সিরাজুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতি বছর প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কেমিক্যালের সাথে সম্পৃক্ত। নিরাপদ কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনার জন্য ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় ‘সেফটি ডাটা শিট’ প্রবর্তন এবং এটি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, কেমিক্যাল ব্যবহার ও সংরক্ষণ বিষয়ক পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়ন এবং পর্যবেক্ষন অত্যন্ত জরুরী।
মুক্ত আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম, প্রাক্তন সহ-সভাপতি এম আবু হোরায়রাহ, বাংলাদেশ পেইন্টস, ডাইজ এন্ড কেমিক্যালস মার্চেন্টস এসোসিয়েশন এর জেনারেল সেক্রেটারি কামাল আহাম্মেদ, বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউম ম্যার্চেন্টস এসোসিয়েশন এর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মো. লিয়াকত আলী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম মিলন অংশগ্রহণ করেন। আলোচকরা নিরাপদ কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ডিসিসিআই সহ-সভাপতি ইমরান আহমেদ, পরিচালক ইঞ্জি. আকবর হাকিম, আন্দালিব হাসান, এনামুল হক পাটোয়ারী, দ্বীন মোহাম্মদ, হোসেন এ সিকদার, মোহাম্মদ বাশীর উদ্দিন, শামস মাহমুদ এবং এস এম জিল্লুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।