Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক-৩

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এও বলেছেন বা বুঝিয়েছেন যে, এমন বিরূপ আত্মীয়রা তোমার ক্ষতি সাধন করতে পারে, যা থেকে বাঁচতে আল্লাহ তোমাকে সাহায্যকারী দেবেন, যদি তুমি এ অবস্থায় থাকো, অর্থাৎ তোমার দিক থেকে ভালো ব্যবহার করতে থাকো। এ থেকে বোঝা যায়, মন্দ ব্যবহারের জন্য তারা ইতোমধ্যে শাস্তি ভোগ করছে এবং ভবিষ্যতেও এরা শাস্তি ভোগ করবে। তবে তুমি তোমার ভালো ব্যবহার চালিয়েই যাবে। তবেই আল্লাহর সাহায্য পাবে।
তুমিও ধৈর্যহারা হয়ে বা রাগান্বিত হয়ে তাদের মতোই হয়ে গেলে আল্লাহর সাহায্য পাবে না। বক্তব্যটিকে ব্যাখ্যা করলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কোনো আত্মীয় সুসম্পর্ক রাখতে না চাইলেও এমনকি উল্টো জুলুম ও দুর্ব্যবহার করলেও তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারই বজায় রাখতে হবে। সুসম্পর্কই ধরে রাখতে হবে ক্ষমা, দয়া, নমনীয়তা ও ধৈর্যের মাধ্যমে। বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে নিম্নোক্ত হাদিসে :
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শুধু ভালো ব্যবহারের বিনিময়ে ভালো ব্যবহার করে, সে প্রকৃত আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী নয়; বরং প্রকৃত আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী তো সেই ব্যক্তি, যে কিনা তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা সত্তে¡ও সম্পর্ক ছিন্নকারীর সঙ্গে নিজে ভালো ব্যবহার করে যাচ্ছে। -সহি বুখারী।
আমরা যদি সত্যিই এমন হতে পারি, তবে মন্দ সম্পর্ককে সুসম্পর্কে বদলে দেয়া একসময় সম্ভব হতে পারে। যদি তা না-ও হয়, তবুও অসংখ্য সওয়াব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োজিত সাহায্যকারীর সাহায্য সব সময় আমাদের সঙ্গেই থাকবে। সুতরাং আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারীর লোকসানের কোনো দিক নেই; বরং সদ্ব্যবহারে অটল থাকার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।
‘আত্মীয়তার বন্ধন’ রক্ষার ফজিলত সম্পর্কে অপর হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এমনটি চায় যে, তার রিযিকের মধ্যে প্রশস্ততা আসুক এবং তার বয়স বা আয়ু বৃদ্ধি করে দেয়া হোক, সে যেন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে। হাদিসটি হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে।-সহি বুখারী ও মুসলিম।
সুবহানাল্লাহ! রিযিক ও হায়াতের মধ্যে বরকত কে না চায়? অথচ এ দু’টিই একসঙ্গে নিহিত রয়েছে এই আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার মধ্যে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কত সহজ ভাষায় আমাদের জন্য এত কল্যাণকর কাজের উপদেশ দিতে পারেন, যদি আমরা তা না অনুভব করি, না মেনে চলি!
এখানে আরেকটি বিষয় ভাবা যায় যে, যখনই আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখা হবে, তখনই তাদের বিভিন্ন সময়ে ও কারণে সাধ্যমতো আন্তরিক হাদিয়া বা উপঢৌকন প্রদান, মেহমানদারি, আর্থিক ও বৈষয়িক সাহায্য-সহযোগিতা করাও আবশ্যিক কর্তব্য ও দায়িত্ব হবে।
যদি কারো মনে এই খরচ ও ব্যয়ের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা বা অনীহা জাগে তাদের জন্য এই হাদিসের রিযিক বৃদ্ধির কথাটি গুরুত্বপূর্ণ বটে। স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষায় রিযিক বাড়ে বলে আশ্বস্ত করেছেন, তথাপি এরূপ দুশ্চিন্তা করা প্রকৃত মুমিনের জন্য উচিত নয়।



 

Show all comments
  • Mohammad Ali Refai ৩০ মার্চ, ২০১৯, ২:১৫ এএম says : 0
    আত্মার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে আত্মীয় বলা হয়। সাধারণত রক্ত, বংশ কিংবা বৈবাহিক সূত্র থেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আবার অনেক সময় বন্ধুত্ব থেকেও আত্মীয়ের ন্যায় সম্পর্ক সৃষ্টি হয়; যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক থেকেও গভীর হয়ে থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • সত্য ন্যয়ের পথ ৩০ মার্চ, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
    শরয়ী বিধান অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজনের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা হক বা অধিকার রয়েছে। তাদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা ওয়াজিব। শরয়ী কারণ ছাড়া আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্পূর্ণ হারাম।
    Total Reply(0) Reply
  • নোমাল আল বাশার ৩০ মার্চ, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
    যে ব্যক্তি শুধু সম্পদশালী ও প্রতাবশালী স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে; কিন্তু অসহায় গরিব স্বজনদের এড়িয়ে চলে, তাদের খোঁজ-খবর নেয় না, তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে না, সে মুমিন হতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • করিম ৩০ মার্চ, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
    এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’আলা কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ করেন, “তোমরা আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরের হকও আদায় করো। আর কোনোভাবেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের খুবই অকৃতজ্ঞ”। (সূরা বণী ইসরাইল, আয়াত-২৬-২৭)।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদি মিরাজ ৩০ মার্চ, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
    সে সব নিকটতম ব্যক্তি যারা আমাদের সাথে আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ যথা ভাই-বোন, চাচা-মামা এবং তাদের ছেলে মেয়ে এবং তাদের ছাড়াও অন্য লোক যারা আত্মীয়তা সূত্রে আমাদের সাথে সংশ্লিষ্ট আমাদের উপর নিকটতম অনুসারে তাদের প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Randal ২ এপ্রিল, ২০১৯, ২:৩৩ এএম says : 0
    It is the best time to make some plans for the future and it is time to be happy.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন