বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়ায় পাঠানোর মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্যিকার অর্থে মানবীয় শিষ্টাচার ও গুণাবলি শিক্ষা দিয়েছেন। শুধু আধ্যাত্মিক ও পারলৌকিক জ্ঞান নয়, জাগতিক এবং সামাজিক সকল কল্যাণকর বিষয়কে বিশেষ গুরুত্বসহকারে নিজের কথায়, কাজে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত করে উম্মতকে নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন আঁ-হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
দুনিয়াতে কোনো মানুষই স্বাভাবিক অবস্থায় একা নয়। তার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন নিকটের হোক বা দূরের, কমবেশি থাকবেই। এই আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সর্বাবস্থায় সুসম্পর্ক ও সদ্ব্যবহার রক্ষা করতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কঠোর নির্দেশ রয়েছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিভিন্ন হাদীসে বারবার এ বিয়য়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে এ নির্দেশ অমান্য ও অগ্রাহ্যকারীর শাস্তির ব্যাপারেও।
নিন্মোক্ত হাদীসে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করাকে ঈমানী দায়িত্ব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসটি এই রূপ : হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন বলতে চাইলে ভালো কিছু বলে, নতুবা চুপ থাকে।-সহীহ বুখারী ও মুসলিম
হাদীসটির বক্তব্যে আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাস রাখা অর্থাৎ ঈমানদার হওয়ার সঙ্গে আত্মীয়তা রক্ষার কাজটিকেও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এটি যেকোনো ঈমানদার মানুষের দায়িত্ব তো বটেই অন্য অর্থে এটি ঈমান পূর্ণ হওয়ার শর্তও যেন। আরও ব্যাপক অর্থে এ হাদীস দ্বারা এ ইঙ্গিতটিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তির বুঝে নিতে হবে যে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর ব্যাপারে আল্লাহ দৃষ্টি রাখছেন এবং আখিরাতেও এর হিসাব ও বিচার রয়েছে।
আর এ জন্যই আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর বিশ্বাস রাখার কথাটি সতর্কবাণীর মতো উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী মানুষের জন্য আত্মীয়তার সম্পর্ক সুরক্ষার কাজটি অপরিহার্য। অপর এক হাদীসে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক থাকা না-থাকার জন্যও এই আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখা না রাখাকে শর্ত ও কারণ বলে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত করা হয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. এর বর্ণনায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টিকে সৃষ্টি করলেন, যখন তা সমাপ্ত করলেন তখন ‘আত্মীয়তার বন্ধন’ (বিশেষ স্থানে) দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ, যারা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চায়, এটি কি তাদের স্থান?
আল্লাহ তাআলা বললেন, হ্যাঁ। তারপর তিনি আত্মীয়তার বন্ধনকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি এটা চাও যে, যারা তোমাকে অক্ষুণ্ন রাখে, আমিও তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখি। আর যারা তোমাকে ছিন্ন করবে, আমিও তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিন্ন করে দিই? আত্মীয়তার সম্পর্ক জবাব দেয়, হ্যাঁ, অবশ্যই। তখন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করলেন, ঠিক আছে। তা-ই করা হবে। তোমার দাবি রক্ষা করা হবে।-সহীহ বুখারী ও মুসলিম
হাদীসটি আংশিক উল্লেখ করা হলো। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম। ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। স্বয়ং আল্লাহ এই ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক’ বিষয়টি বা এই বোধ ও অনুভ‚তিটি সৃষ্টি করেছেন এবং তা মানুষের ওপর আবশ্যিক করে দিয়েছেন। কঠোর সিদ্ধান্ত। পৃথিবীতে যে মানুষ এই ‘আত্মীয়তার বন্ধন’ অক্ষুণন্ন রাখবে, তার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্কও অক্ষুণœ থাকবে, নতুবা ছিন্ন হয়ে যাবে। এরপরও আল্লাহর এই অমোঘ বিধানকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ এই অতি তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র মানুষের আছে কি?
এই বিষয়ে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে রয়েছে। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহর আরশের সঙ্গে ঝুলে থেকে বলতে থাকে, যে আমাকে জুড়ে রাখল, আল্লাহ তাকে জুড়ে রাখুন। আর যে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলল, আল্লাহও তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিন।-সহীহ মুসলিম
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।