মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বুধবার ভারতের স্যাটেলাইট ধ্বংসের সক্ষমতা পরিক্ষা ‘মিশন শক্তি’-র সাফল্যের পরে অরুণ জেটলি অভিযোগ তুলেছিলেন, ২০১২-তে বিজ্ঞানীরা এই কাজ করতে চাইলেও মনমোহন সরকার অনুমতি দেয়নি। তবে বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদির মতো বুক ঠুকে শক্তি প্রদর্শন নয়। বিচক্ষণতা ও সংযম দেখিয়েছিলেন মনমোহন সিংহ।
মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করে মোদি সরকারের কর্তাব্যক্তিরা আঙুল তুলেছেন মনমোহন-সরকারের দিকে। অভিযোগ, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সাহস দেখাতে পারেনি মনমোহন সরকার। কিন্তু ইসরো, ডিআরডিও-র প্রাক্তন বিজ্ঞানীদের যুক্তি, মনমোহন সিংহের সরকার যথেষ্ট ‘বিচক্ষণতা’ দেখিয়েই এই পথে হাঁটেনি। কারণ, কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংসের ফলে মহাকাশে ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়। সেই ধ্বংসাবশেষ সহজে বিনষ্ট হয় না। অন্যান্য কৃত্রিম উপগ্রহের কাজে তা বাধা সৃষ্টি করবে। নতুন মহাকাশযান বা রকেট উৎক্ষেপণেও সমস্যা তৈরি হয়।
বুধবার ‘মিশন শক্তি’-র সাফল্যের পরে অরুণ জেটলি অভিযোগ তুলেছিলেন, ২০১২-তে বিজ্ঞানীরা এই কাজ করতে চাইলেও মনমোহন সরকার অনুমতি দেয়নি। কারণ সরকারের সাহস ছিল না। প্রাক্তন ডিআরডিও প্রধান, বর্তমানে নরেন্দ্র মোদির নীতি আয়োগের সদস্য ভি কে সারস্বতও এ বিষয়ে দেরি করার জন্য ইউপিএ সরকারকে দায়ী করেছিলেন। তারা অনুমতি চেয়েও পাননি।
মজার কথা হল, এই ভি কে সারস্বতই ২০১২-তে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সমস্ত উপাদানই রয়েছে। আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আর একটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার থেকে কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করার কাজটি অনেক সহজ। কারণ তা নির্দিষ্ট পথে চলে। কিন্তু বাস্তবে সেই পরীক্ষা করা হবে না। কারণ ধ্বংসাবশেষের ফলে অন্য স্যাটেলাইট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বুধবার নরেন্দ্র মোদির ‘মিশন শক্তি’-র পরেও মহাকাশে তৈরি হওয়া এই ধ্বংসাবশেষ নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। ঘটনাচক্রে এখনই জেনিভায় মহাকাশে অস্ত্র-প্রতিযোগিতা বন্ধ করার প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। জাতিসংঘের ‘ইনস্টিটিউট ফর ডিজ়আর্মামেন্ট রিসার্চ’ এ নিয়ে উদ্বেগও জানিয়েছে।
বৈজ্ঞানিকরা বলছেন, কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করার ফলে ধ্বংসাবশেষের ছোট ছোট টুকরো মহাকাশেই ঘুরতে থাকে। তা অন্য উপগ্রহ বা মহাকাশযানের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে ক্ষতি হতে পারে। পৃথিবীর চার দিকে ঘণ্টায় প্রায় ১৭,৫০০ মাইল বেগে ঘুরতে থাকা খুব ছোট টুকরোও মহাকাশযান ফুটো করে দিতে পারে। অতীতে মহাকাশযান ‘এনডেভর’ এই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এই মুহূর্তে মহাকাশে ২৫০ মাইল উচ্চতার কক্ষপথে অবস্থিত নাসা-র ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’-এ ছ’জন মহাকাশচারী রয়েছেন। ভারত যে কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করেছে, তা ছিল ১৮৫ মাইল উচ্চতার কক্ষপথে। ৬৫ মাইলের দূরত্ব হলেও এর ধ্বংসাবশেষ মহাকাশচারীদের কোনও সমস্যা তৈরি করবে না, এমন গ্যারান্টি নেই। রাষ্ট্রপুঞ্জের ইনস্টিটিউট ফর ডিসআর্মামেন্ট রিসার্চ-এর স্পেস সিকিউরিটি ফেলো ড্যানিয়েল পোরাস জানিয়েছেন, ওই কক্ষপথে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের পাশাপাশি অনেক টেলিযোগাযোগ ও গবেষণামূলক স্যাটেলাইট রয়েছে। যদি অন্য কিছুর ক্ষতি হয়, তা হলে আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী ভারত দায়ী হবে। ২০০৭-এ চিন পরীক্ষামূলক ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করে ঠিক এই কারণেই গোটা বিশ্বে সমালোচিত হয়েছিল।
ভারতের পরীক্ষার পরে মার্কিন এয়ারফোর্সের ১৮-তম স্পেস কন্ট্রোল স্কোয়াড্রন জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড ‘মিশন শক্তি’র জেরে তৈরি ২৫০টি ধ্বংসাবশেষের টুকরোর উপর নজর রাখছে। মার্কিন এয়ারফোর্সের স্পেস কমান্ডের প্রধানের দাবি, এখনও পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে কোনও বিপদ নেই। তবে আমেরিকার ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা সচিব প্যাট্রিক শ্যানাহান জানিয়েছেন, আর কোনও দেশ এই পরীক্ষা করতে গেলে মহাকাশ পুরো আবর্জনায় ভরে যাবে।
মোদি সরকারের অবশ্য দাবি, ৩০০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথে ধ্বংসাবশেষ থাকায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেগুলি মাধ্যাকর্ষণের টানে নীচে নেমে আসবে। অরুণ জেটলি বুধবারই দাবি করেছেন, তিন সপ্তাহের মধ্যে সব আবর্জনা সাফ হয়ে যাবে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কটাক্ষ, ‘মোদির মন্ত্রীরা কি মহাকাশেও ঝাঁটা নিয়ে স্বচ্ছতা অভিযান চালাবেন নাকি!’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।