Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে যৌথ মূলধনী বিনিয়োগে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে যৌথ মূলধনী বিনিয়োগে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশিদের সঙ্গে দেশীয় প্রকৌশলীদের কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রসার ঘটছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিষয়ে আগের তুলনায় আমাদের সক্ষমতাও বাড়ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু যৌথ মূলধনী কোম্পানিতে গুরুত্বারোপ না করে সরকারি কোম্পানির সক্ষমতাও বাড়ানো দরকার। যৌথ বিনিয়োগের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি সরকারি কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম। তিনি বলেন, বেসরকারি কোম্পানি এবং যৌথ কোম্পানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু নিজেদের কোম্পানিগুলোকে আরও শক্তিশালী এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী করা জরুরি। সরকারি সংস্থাগুলোর তুলনায় যৌথ কোম্পানিগুলোর বিদ্যুতের দাম বেশি। অথচ সরকারি কোম্পানিগুলোর তুলনায় তারা অনেক বেশি সুবিধা পায়। যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের একটি বড় অংশ সরকারকে দিতে হয়। অন্যদিকে, সরকারি কোম্পানিগুলোর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ঋণ নিতে হয়, সেই ঋণ আবার শোধ করতে হয়। এছাড়া, তাদের বিদ্যুতের দামও তুলনামূলকভাবে কম। তবু প্রযুক্তির দিক থেকে সরকারি কোম্পানিগুলো পিছিয়ে রয়েছে। তাই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত করা দরকার। সরকারিভাবে জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি দামও সহনীয় মাত্রায় রাখা সম্ভব হবে।
জানা গেছে. বর্তমান সরকার যৌথ বিনিয়োগ পরিকল্পার মাধ্যমে কয়লা থেকে মোট ২৩ হাজার ১৮০ মেগাওয়াট ও এলএনজি থেকে ১৪ হাজার ৯৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ভাবছে। এছাড়া, আরও ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। যৌথ মূলধনী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে বিদেশের কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের কোনও সরকারি কোম্পানি যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কোম্পানি গঠনের চুক্তি করে। পরে দুই পক্ষের নির্বাচিত নামে বাংলাদেশে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়। এবার নতুন এই কোম্পানিতে যেসব দেশের অংশীদারিত্ব থাকে, তারা বিনিয়োগ করে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ পাওয়া সহজ হয়। এখন ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি চীন এবং ভারত বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেশগুলোতে অনেক অলস অর্থ পড়ে রয়েছে, যা বিনিয়োগের জায়গা নেই। ফলে তারা এখন তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশ সেই পছন্দের তালিকায় রয়েছে। সরকার এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে যৌথ মূলধনী বিনিয়োগের চুক্তি সই করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) এর আওতায় ৬৬০ মেগাওয়াট করে দু’টি ইউনিটে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন। এতে যৌথভাবে কাজ করছে নর্থ-ওয়েস্টজোন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইএমপি অ্যান্ড এক্সপি করপোরেশন (সিএমসি)। এই দুই কোম্পানি পায়রাতেও ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে কাজ করবে। এছাড়া, এলএনজি চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জার্মানির সিমেন্সের সঙ্গে চুক্তি করেছে নর্থ-ওয়েস্টজোন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড। ৩৬০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণে এ কোম্পানির অংশীদার হচ্ছে চীনের সিএমসি এবং যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম (বিপি)।তবে এখানে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব থাকছে ৫০ ভাগ। বাকিদের অংশীদারিত্বে থাকবে বাকি ৫০ ভাগ।
সিরাজগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টটি নর্থ-ওয়েস্টজোন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড এবং সেম্বকরপ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে। এটি ৪০০ মেগাওয়াটের গ্যাস বা ডিজেল বেইজড বিদ্যুকেন্দ্র হবে। রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টটি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং এনটিপিসি অর্থাৎ বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএপিসিএল) বাস্তবায়নে কাজ করছে। ৬৬০ মেগাওয়াট করে দু’টি ইউনিটে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন হচ্ছে। মহেশখালীতে পাওয়ার হাব স্থাপন করা হবে। মহেশখালীর প্রথম পাওয়ার প্ল্যান্টটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং হুন্দাই হংকং কোম্পানি লিমিটেড। ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
মহেশখালীতে আরও একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং টিএনবি মালয়েশিয়া। এটি হবে ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। মহেশখালীতে আরেকটি পাওয়ার প্ল্যান্ট করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং সেপকো চায়না। এটি ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এছাড়া, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং কেপকো কোরিয়া যৌথভাবে ৬৬০মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি করেছে। পটুয়াখালীতে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড ও চায়না এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (এনার্জি চায়না) যৌথভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে কাজ করবে। ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। পটুয়াখালীতে ৭০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে সিপিজিসিএল এবং সেম্বকরপ। অন্যদিকে, ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুই ইউনিটে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একই জায়গায় করতে যাচ্ছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) এবং নরিনকো। মাতারবাড়ি দ্বিতীয় ইউনিটটি করবে সিপিজিসিএল এবং সেম্বকরপ। এটি ৬০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটে মোট ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। মহেশখালীতে করা হবে একটি এলএনজি পাওয়ার প্ল্যান্ট সেটি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং জিই যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে। ১২০০ মেগাওয়াট করে তিন ইউনিটের মোট ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন বলেন, আগে আমরা ইপিসি কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে দরপত্র আহŸান করতাম। ঠিকাদার এসে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতো। আমাদের লোকজনদের কেবল ট্রেনিং দিয়ে যেতো। এখন জয়েন ভেঞ্চারের কারণে আমরা অপারেটর হিসেবে কাজ করছি। তিনি বলেন, আমাদের ক্যাপাসিটি বেড়েছে। পিডিবি আগে যেখানে ৩০০/৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো, সেখানে আমরা ১২০০/১৩০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র করছি। আমাদের শুধু একটি কোম্পানি নয়, বেশ কয়েকটি কোম্পানি জেভিএ-এর মাধ্যমে বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে কাজ করছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ