Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১০ বছরে আগুনে ১৫৯০ জনের প্রাণহানি

গণশুনানিতে ভয়াবহ তথ্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সড়কে মৃত্যুর মিছিলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আগুনে মরছে মানুষ। গত দশ বছরে সারা দেশে ১৬ হাজার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১ হাজার ৫৯০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডে একই পরিবারের ১১ জন ব্যক্তিসহ ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। নিমতলী অগ্নিকান্ডের পর সরকারি পর্যায়ে গঠিত সকল তদন্ত কমিটি এলাকার রাসায়নিক মজুদ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা পুরান ঢাকার আবাসিক ভবন থেকে রাসায়নিক দোকান কারখানা গুদাম উচ্ছেদের সুপারিশ করে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গত ২০ ফেব্রæয়ারি চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাÐে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটে। বিভিন্ন মহল থেকে দোষী ব্যক্তির শাস্তির আশ্বাস মিললেও শাস্তি দৃশ্যমান হয়নি। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘অগ্নিঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ পুরান ঢাকা’ শীর্ষক গণশুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
গণশুনানির আয়োজন করে আইন ও শালিস কেন্দ্র, বেলা, বøাস্ট, ব্র্যাক, বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট, এএলআরডি এবং নিজেরা করি নামক সংগঠন। মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনষ্ঠিত এই গণশুনানিতে বক্তারা বলেন, নিমতলীর পর চুড়িহাট্টায় ঘটে যাওয়া অগ্নিকাÐ ও হতাহতের ঘটনা প্রমাণ করে যে নিমতলী থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। তদন্ত কমিটিগুলোর কোনো প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়নি। এমনকি আদালতেও দাখিল করা হয়নি। কমিটিগুলোর সুপারিশ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন না করায় নিরাপদ পল্লী স্থাপনের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে। কোনো রকম অনুমোদন, লাইসেন্স ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই পুরান ঢাকায় এখন পরিচালিত হচ্ছে হাজার হাজার বিস্ফোরক ও রাসায়নিক গোডাউন ও গুদামঘর। তারা আরো বলেন, আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের এমন বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তা কার্যকরভাবে বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে। লোভ ও অব্যবস্থাপনার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পুরান ঢাকার লাখ লাখ বাসিন্দা।
গণশুনানিতে অংশ নিয়ে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, পুরান ঢাকা থেকে ক্ষতিকর, ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে ৩৫টি ক্ষতিকর দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ যেন পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায় না থাকে সেজন্য টাস্কফোর্সকাজ করছে। তবে আমাদের এটাও ভাবতে হবে ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। অগ্নিকাÐের ঘটনায় যারা অসহায় বা যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ডিএসসিসিতে আবেদন করলে আমাদের আওতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব তাদের চাকরির ব্যবস্থা আমরা করব।
ড. ফরিদা নিলুফা বলেন, পুরান ঢাকা সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া গড়ে উঠেছে। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী এসব ভবনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে সবাইকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে। অধ্যাপক সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া বলেন, অগ্নিকাÐের মতো যখন ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমরা শর্ট ট্রার্ম, লং ট্রার্ম পরিকল্পনার কথা না ভেবে তাৎক্ষণিক সব কিছু করে ফেলতে চাই। নিরাপত্তা বিষয়ক জনসচেতনতা আগে তৈরি করতে হবে। এরপর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কার্যকর করতে হবে সঠিকভাবে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে একটা জায়গায় আমাদের আসতে হবে।
গণশুনানিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ, বøাস্ট আনারারী নির্বাহী পরিচালক ব্যারিষ্টার সারা হোসেন, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ, বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউটের নগর ও পরিবেশ সম্পাদক ড. ফরিদা নিলুফা, বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আব্দুস সালামসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং পুরান ঢাকার অগ্নিকাÐের ঘটনার ক্ষতিগ্রস্থরা। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আগুন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ