পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে শত শত নদী আজ মৃত্যুর মুখে। নদীতে পালতোলা নৌকার চিরায়তরূপ এখন আর চোখে পড়ে না। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পানিশূন্য নদীর বুকে চাষবাস হয়। খনন না করা ও দখলদারদের থাবায় নদীর নাব্য যেমন কমছে, ঠিক একইভাবে মানচিত্র থেকেও নদী হারিয়ে যাচ্ছে।
নদী গবেষকদের মতে, ষাটের দশকে সাড়ে সাতশ’ নদী ছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সরকারি হিসেবে দেশে নদীর সংখ্যা ৪০৫টি। তবে পরিবেশবাদীদের মতে বর্তমানে নদীর সংখ্যা কমে মাত্র ২৩০ থেকে ২৪০টিতে দাঁড়িয়েছে। গত ৫০ বছরে মানচিত্র থেকে মুছে গেছে ৫২০টি নদী। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবাহিত ২৩০ নদীর মধ্যে ৫৭টি আন্তর্জাতিক। শুকনো মৌসুমে এসব নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। ফলে বদলে যাচ্ছে নদীগুলোর গতিপথ, শুকিয়ে মরে যেতে যেতে দেশের মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী।
দেশের নদ-নদীর এই করুণ অবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞরা উজানে ভারতের একতরফা বাঁধ নির্মাণকে দায়ী করছেন। ভারতের ফারাক্কা বাঁধ এবং গজল ডোবা বাঁধের ফলে গঙ্গা এবং তিস্তা নির্ভর সব নদী প্রবাহ থেমে গেছে। এতে ধীরে ধীরে নদীগুলো নাব্য হারিয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। নদীতে প্রবাহ না থাকায় দূষণ আর দখলের কবলে পড়েও অনেক নদীর মৃত্যু ত্বরান্বিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা ও ব্রহ্মপুত্রের একাধিক স্থানে শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত নাব্য না থাকার কারণে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মেঘনা নদীর একাধিক স্থানে নাব্য সঙ্কটের কারণে লঞ্চ আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক সময়ের প্রমত্তা খরস্রোতা নদীগুলো ফারাক্কা আর গজল ডোবার মরণ ছোবলে পৌষ-মাঘ মাসেই ধু-ধু বালিতে রূপ নেয়। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, দেশের আন্তর্জাতিক ৫৭টি নদীর মধ্যে ৫৪টির উৎপত্তি ভারতে। আর তাও ভারতের একতরফা পানি প্রতাহারের ফলে বাংলাদেশের নদীগুলোর করুণ মৃত্যু হচ্ছে। ভারত থেকে ন্যায্য পানি প্রাপ্তির বিষয়ে কোনো সরকারই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। এ সরকার জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বলা হচ্ছে, ভারতের সাথে বর্তমানে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো। তাহলে তিস্তার পানি চুক্তি কেন হচ্ছে না? গঙ্গার ন্যায্য পানি কেন বাংলাদেশ পাচ্ছে না? এ প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। কেন না নদীকে কেন্দ্র করে এ দেশ গড়ে উঠেছে। তাই নদী না বাঁচলে এদেশেরও মৃত্যু হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী মরলে শুধু অর্থনীতিতেই বিরূপ প্রভাব পড়ে না, একই সঙ্গে জনজীবনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অভিঘাত নেমে আসে। নদীহীন জনপদে নদীর জন্য শুধু হাহাকারই নয়, বহুমাত্রিক সঙ্কটও তৈরি হচ্ছে।
বিশিষ্ট গবেষক ও পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম নেতা সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নদীগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সম্পর্ক নিবিড়। বাংলার নদ-নদীগুলোর অপমৃত্যু জীবনের ওপর শুধু ভয়াবহ বিরূপ প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করবে না, জাতীয় জীবনের সব অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দেবে। নদী না বাঁচলে দেশও বাঁচবে না।
ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক ও ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করেছে। আর গজল ডোবা বাঁধের ফলে সিলেট, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জের হাওর ও নদ-নদী মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। ভারত গঙ্গার ও তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহারে বাংলাদেশের কেবল প্রতিবেশ ও পরিবেশ ব্যবস্থাই ধ্বংস করছে না বরং এ দেশের কৃষি, শিল্প, বনসম্পদ ও নৌযোগাযোগের মতো অর্থনৈতিক খাতগুলোকেও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশের কৃষিপ্রধান উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ দেখা দিয়েছে। ফসল উৎপাদনে মাটির নিচ থেকে পানি তুলে সেচ চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। এতে বিপদ আরও বাড়ছে। ভূগর্ভস্ত পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। মাটির উর্ব্বর শক্তি কমছে, বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ।
এ ছাড়া এতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর মৃত্যুতে সবুজ শ্যামল বাংলাদেশও মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। ভারত শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি ব্যাপকভাবে একতরফা প্রত্যাহার করে নিলেও বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না। এক সমীক্ষায় প্রকাশ, ফারাক্কা বাঁধের আগে মার্চ মাসে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে যেখানে গঙ্গার প্রবাহ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১৯৮০ কিউবিক মিটার, ১৯৯৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৬১ কিউবিক মিটারে। গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তিতে সর্বশেষ বলা হয়েছে, যে কোন প্রতিকুল অবস্থাতেই বাংলাদেশ ৩৪,৫০০ কিউসেক পানি পাবে। তবে ভারত আজ পর্যন্তও চুক্তির সে শর্ত মানছে না। ভারত ১৯৯৩ সালের শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে ১০ হাজার কিউসেকেরও কম পানির প্রবাহ রাখে। আর এখন শুষ্ক মৌসুমে সে প্রবাহ ৫০০ কিউসেকেরও নিচে থাকে।
অথচ ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য পানির হিস্যা আদায় করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার অনেকটা নিশ্চুপই বলা যায়। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের নীতি-নির্ধারকরা প্রায়ই বলে থাকেন, দু’দেশের সম্পর্ক বর্তমানে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। উভয়পক্ষ তাদের সম্পর্ককে ‘অবিশ্বাস্য উচ্চতা’য় নিতে পেরে সুখী। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি, কথিত ওই সুখী সুখী সম্পর্কের মধ্যেই আট বছর হলো দু’দেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক হয় না। সর্বশেষ ২০১০ সালের মার্চে দিল্লিতে জেআরসি’র ৩৭তম বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকেই তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির ব্যাপারে ঐকমত্যে এসেছিল দুই দেশ। তবে ওই চুক্তিটিও অজ্ঞাত কারণে আজও স্বাক্ষরিত হয়নি।
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে অতীতের মতো ভারত শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশ সেই আশ্বাস পেয়েই গদগদ হয়ে নিজের সব কিছু উড়ার করে দিচ্ছে। যদিও আন্তর্জাতিক নদীতে অববাহিকা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের পানির হিস্যা রয়েছে তবুও তিস্তা চুক্তির পটভূমি হিসেবে এরূপ অনানুষ্ঠানিক বোঝাপড়াও ছিল যে, ভারত ট্রানজিট বা করিডোর সুবিধা পেলে বাংলাদেশ পানি পাবে। ওই আলোকে ইতোমধ্যে বৃহৎ প্রতিবেশীকে বাংলাদেশ স্থল ও নৌ-ট্রানজিট এবং তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বন্দর ব্যবহারের সুবিধা দিলেও এদেশের মানুষ তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি। পাশাপাশি যৌথ নদী কমিশনকেন্দ্রিক সব আলোচনাও বন্ধ হয়ে গেছে। বলা যায়, দুই দেশের নেতৃবৃন্দ পর্যায়ে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হলেও পানি প্রাপ্তির বিষয়টি থাকছে আলোচ্য বিষয়ের বাইরে।
আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতির আলোকে ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টন, ভাঙন রোধ, জেগে ওঠা চরের মালিকানা নির্ধারণসহ বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্য ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ জেআরসি গঠন করা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে ফারাক্কা ব্যারাজ চালুর আগ পর্যন্ত ওই বিষয়ে বাংলাদেশকে সম্মত করতে ভারতের তাগিদেই মাত্র দুই বছরে জেআরসির ৭টি বৈঠক হয়েছিল। ফারাক্কা ব্যারাজ চালু হওয়ার পর গত ৪৪ বছরে সব মিলিয়ে বৈঠক হয়েছে হয়েছে মাত্র ৩০টি। অথচ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যৌথ নদী কমিশনের বছরে ৪টি বৈঠক হওয়ার কথা। গত আট বছরে বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ হয়তো ভুলে গেছে, পানি বিবাদ নিরসনের লক্ষ্যে এরূপ একটা কাঠামো আছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ড. আইনুন নিশাত বলেন, ভারত গঙ্গার পানি নিচ্ছে দাক্ষিণাত্যের পশ্চিম পাশে। আর ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ে যাবে দাক্ষিণাত্যের পূর্ব পাশে। বাংলাদেশের যে পানির প্রয়োজন আছে, সেটি ভারত ভুলতে বসেছে। ভারতের পানির চাহিদা যতই বাড়ুক, তাদের এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে ভাটিতে থাকা বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই এর সমাধান করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের নদী মৃত্যুর আরেকটি বড় কারণ নদীকেন্দ্রিক অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন।
ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ নদ-নদী এখন দখল-দূষণ-বর্জ্যে মৃতপ্রায়। বিশেষ করে ঢাকাকে ঘিরে বুড়িগঙ্গার, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা সর্বত্রই চলছে দখলবাজদের আগ্রাসী থাবা। শুধু নদীর দুই পাড় দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি নদী খেকোরা, তারা প্রবাহমান নদীর পানিতেও বাঁশ-কাঠের মাচান তুলে বানিয়েছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট। মাত্রাতিরিক্ত দূষণে সদরঘাটে বুড়িগঙ্গার পানি কুচকুচে কালো, হাজারীবাগে রক্তের মতো লাল। তুরাগের পানি কোথাও কালো, কোথাও গাঢ় নীল। টঙ্গীর অদূরে বালু নদের পানি ধূসর বর্ণ ধারণ করে আছে। বিষাক্ত তরল বর্জ্যে বিপন্ন হয়েছে পরিবেশ। নাগরিক জীবনেও নেমে এসেছে নানা বিপর্যয়।
এ ব্যাপারে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদী বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশনার আলোকে কর্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নদী দখল মুক্ত করার অভিযান শুরু হয়েছে। সব নদী এবার দখল এবং দূষণ মুক্ত করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।