Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোগীদের সুস্থ করতে হাসপাতালে হর্টিকালচার থেরাপির ব্যবহার

নিউইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সেদিন ছিল হাড় কাঁপানো শীতের এক বুধবার। ম্যানহাটানে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ল্যাঙ্গন- এর রাস্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে হর্টিকালচার থেরাপিস্ট (উদ্যান পরিচর্যার মাধ্যমে চিকিৎস সেবা প্রদানকারী) লোরি ব্লমবার্গ উজ্জ্বল সবুজ পাতাভর্তি গাছ-গাছালির একটি কার্ট ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এক সারি হুইল চেয়ার পেরিয়ে তিনি একটি কক্ষে প্রবেশ করলেন। সেখানে দুটি বেডে বসেছিলেন দুজন রোগী।
তার এ দিনের কাজের মধ্যে ছিল, একটি ফুলদানিতে বাঁশের চারা রোপণ। রিটা বেলফিয়র নামের এক রোগিণী ও ব্রুকলিনের এক সাবেক আইন বিষয়ক সহকারি জিজ্ঞেস করলেন, কতবার এটাতে পানি দিতে হবে? তার হিপ প্রতিস্থাপন অপারেশন হয়েছিল ও ক্রমশ সেরে উঠছিলেন।
মিজ ব্লমবার্গ তাকে বললেন, যেসব গাছকে পানি দিতে হয় এটা সে রকম নয়। এ সব গাছ খুব ধীরে পানি টানে।
মিজ বেলফিয়রের কক্ষসঙ্গিনী ক্যারল (৬৩) ছিলেন নিউইয়র্কের ম্যাসাপেকুয়ার এক ফুড ব্রোকার। মেরুদন্ডের অপারেশন শেষে পরবর্তী চিকিৎসা চলছিল তার।
তিনি বাঁশের চারাগুলোকে একটি রাবার ব্যান্ড দিয়ে সতর্কতার সাথে একসঙ্গে করলেন। ছড়িয়ে দিলেন প্রতিটি চারা থেকে বের হওয়া শিকড়গুলো। তারপর কাঁচের ফুলদানিটা ক্ষুদে লাল পাথর দিয়ে ভরে তাতে পানি ঢেলে বাঁশের চারাগুলো রাখলেন। তাদের এই কাজটি ছিল দৃষ্টিনন্দন।
একটি হাসপাতালে সবুজ, সুন্দর ও তাজা কিছু দেখাটা খুব সুন্দর ব্যাপার। রোগীদের ইঞ্জেকশন নেয়া, ওষুধ খাওয়া আর ভালো হয়ে ওঠার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কাজ নেই। তারা বাকি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন। চলাফেরা করতে পারে না। তাদের জন্য এটি চারাগাছের পরিচর্যা আরোগ্য লাভ প্রক্রিয়ার সহায়ক হতে পারে।
ভেষজ ওষুধের উপাদান গাছগাছালি প্রকৃতির উৎপন্ন। একজন প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের মাধ্যম প্রকৃতির এসব গাছগাছালির বাগান করা বা পরিচর্যা করা সদৃশ কর্মকান্ড থেকে রোগীরা ভালো বোধ করতে পারেন। হাসপাতালে তা প্রায়ই ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। কিন্তু হর্টিকালচার থেরাপিস্টরা নেশাগ্রস্ত নিরাময় কেন্দ্র, জেলখানা ও কিশোরদের জন্য ওয়াইল্ডারনেস থেরাপি প্রোগ্রামেও কাজ করেন।
এনওয়াইইউ (নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি) ল্যাঙ্গনে রোগীর চিকিৎসায় হর্টিকালচার থেরাপি পদ্ধতির ক্ষেত্রে যা ব্যবহৃত হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে চারাগাছ লালন, ফুলের বিন্যাস, লোশন তৈরি ও অন্যান্য প্রকৃতি সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম। এ দফতরটি ক্লোভিস ও লিলি নামের দুটি বড় শান্ত খরগোশ পালন করছে। দেখা যাচ্ছে যে হাসপাতালে রোগীদের বাগান করা তথা হর্টিকালচার থেরাপি তাদের ভালো হয়ে উঠতে সহায়তা করছে।
এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গনের হর্টিকালচার থেরাপি সেবা দফতরের ম্যানেজার গোয়েন ফ্রিড বলেন, কোন কোনো হাসপাতালে ময়লা নিয়ে হাজির হলে এক এক সময় লোকেজন সামান্য প্রতিরোধ করতেও পারে।
ক্যারল বলেন, হর্টিকালচার একটি সহনীয় শারীরিক চ্যালেঞ্জ ও শরীরের জন্য উপকারী। তবে এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গনে তা রোগীদের মনোযোগ বৃদ্ধি এবং কঠিন ফিজিক্যাল থেরাপির সময় রোগীদের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া বা মনোবল বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়।
আমেরিকান হর্টিকালচার থেরাপি সমিতির আনুষ্ঠানিক বক্তব্য, জীবনযাত্রার মান মানুষ ও উদ্ভিদের সাথে সম্পর্কিত। এ কথা রালফ ওয়াল্ডো এমারসনের মতের কথা মনে করিয়ে দেয় যে মানুষ ও উদ্ভিদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে হর্টিকালচার থেরাপি আমাদের সকলের জন্য কল্যাণকর।
গাছগাছালির বাগান করা মনের চাপ কমায় ও মনকে প্রফুল্ল করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মানুষকে ভালো রাখার জন্য গাছ পরিচর্যা কার্যকর। মিজ ফ্রিড বলেন, একজন রোগী আমাকে সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন, হর্টিকালচার থেরাপির সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, প্রকৃতির সাহায্য নিয়ে আমি ধীরে ধীরে সেরে উঠেছি।
আমেরিকান হর্টিকালচার থেরাপি সমিতির সভাপতি লেই অ্যানে স্টারলিং বলেন, রোগীরা প্রায়ই নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতির শিকার হন। তখন গাছ নিয়ে কাজ করলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ক্যারল মনে করেন, হাসপাতালে হর্টিকালচার থেরাপি তার রোগ নিরাময়ের গতি দ্রুততর করেছে। তারপর উদ্ভিদ নিয়ে কাজ করার ব্যাপারটা তাকে তার স্বামীর ঘনিষ্ঠ করেছে যিনি আগে থেকেই বাগান করতেন।
আমেরিকায় গাছ পরিচর্যা চিকিৎসার প্রসার ঘটে প্রথম মহাযুদ্ধের পর। প্রথমদিকে তা পিটিএসডির শিকার আমেরিকার যুদ্ধ ফেরত সৈনিকদের চিকিকৎসায় ব্যবহৃত হত। পরে তা নানা চিকিৎসায় ব্যবহার করা শুরু হয়। মিজ ফ্রিড জানান, এ চিকিৎসার প্রতি মানুষের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বাড়ছে বলে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, যদিও আগের চেয়ে হাসপাতালে ভেষজ ইন্টার্নদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে কিন্তু গাছ পরিচর্যা চিকিৎসা একটি চাহিদাপূর্ণ পেশা হতে পারেনি। আমেরিকান ভেষজ চিকিৎসা সমিতির সদস্য এখন ৫শ’।
কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির ভেষজ ও ভেষজ চিকিৎসার এক অধ্যাপক ক্যানডিস শুমেকার বলেন, প্রকৃতির কাছ থেকে স্বাস্থ্য বিষয়ে উপকার পাওয়ার কথা স্বীকার করা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রকৃতির সাথে বেশি সংখ্যায় মানুষ সম্পর্ক গড়ছে ও বহুবিধ পন্থায় ভেষজ ব্যবহার করছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি প্রকৃতি ভিত্তিক চিকিৎসায় অরণ্য স্নান (ফরেস্ট বাথিং) এর কথা উল্লেখ করেন। কিছু চিকিৎসক পার্কে সময় কাটানো ভিত্তিক পার্ক ডেসক্রিপশন লিখছেন।
মিজ শুমেকার বলেন, একদিকে এটা আসলেই ভালো। তবে পেশাগত ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কারণ বহু লোক গাছ পরিচর্যা চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করছে যারা গাছ পরিচর্যা চিকিৎসক নয়।
সার্বক্ষণিক ভাবে গাছ পরিচর্যা চিকিৎসা করার জন্য মিজ ব্লমবার্গ কয়েক বছর আগে এক বিজ্ঞাপনীসংস্থায় করা চাকরি ছাড়েন। তিনি বলেন, এটি একটি আধ্যাত্মিক অনুশীলন। আপনি যখন হাসপাতালে যান, আমরা শরীরের প্রতিই নজর দেই। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে আমাদের শরীরের আরো অংশ আছে। তিনি বলেন, আমি শরীরের সেসব অংশের দিকে গুরুত্ব আরোপ করি যেগুলোর কথা মনে করা হয় না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ