বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবু যর রা. হতে বর্ণিত আছে, বায়তুল মাকাদিসের নামাজের ইমামত সমাপ্তির পর নবী মুহাম্মাদ সা. বোরাকে আরোহন করলেন। যখন তিনি প্রথম আকাশে উপস্থিত হলেন, তখন জিব্রাঈল আ. আকাশের দারোগাকে বললেন, দরজা খোল?
জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি উত্তরে দিলেন, আমি জিব্রাঈল আমীন। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সাথে কি কেউ আছে? বললেন হ্যাঁ, আমার সাথে ইমামুল মুরসালিন মুহাম্মাদ সা. আছেন। আবারো জিজ্ঞেস করা হল- তাকে কি আহ্বান করা হয়েছে? তিনি বললেন হ্যাঁ। একথা শুনে দ্বাররক্ষী ফিরিশতা আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ বলে দরজা খুলে দিলেন। সাইয়্যেদুল মুরসালিন প্রথম আকাশে আরোহন করলেন। সেখানে তিনি একজন বৃদ্ধ লোককে বসে থাকতে দেখতে পেলেন। তার ডানদিকে ও বামদিকে অনেকগুলো রূহ বা প্রাণশক্তি উপস্থিত ছিল। যখন তিনি ডানে তাকাতেন, তখন হাসতেন এবং যখন বামে তাকাতেন, তখন কাঁদতেন। পিয়ারা নবী মুহাম্মাদ সা. কে দেখে তিনি বলে উঠলেন, হে পুণ্যবান সন্তান, মর্যাদাবান নবী, মারহাবা। রাসূলুল্লাহ সা. জিব্রাঈল ফিরিশতাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই জিব্রাঈল, তিনি কে? হযরত জিব্রাঈল আ. উত্তর দিলেন, তিনি আপনার পিতৃপুরুষ হযরত আদম আ. এবং তার ডানদিকের প্রাণশক্তিগুলো হচ্ছে জান্নাতী এবং বামদিকেরগুলো হচ্ছে দোযখী।
এজন্য তিনি ডানদিকে তাকালে হাসেন এবং বামদিকে তাকালে কাঁদেন। এই আকাশে তিনি সম্মুখভাগে দু’টি নদী দেখতে পেলেন। জিজ্ঞেস করলে হযরত জিব্রাঈল আ. বললেন, এ দু’টি হচ্ছে নীল ও ফোরাতের প্রবাহ। তারপর প্রবাহিত অন্য একটি নদী তার নজরে পড়ল। যার মাঝে মতি ও জররুদ পাথরের নির্মিত একটি মহল ছিল এবং এর অঙ্গন ছিল মেশক দ্বারা পরিপূর্ণ। জিব্রাঈল আ. বললেন, ‘ইহা নাহরে কাউসার। যা নির্দিষ্টভাবে আল্লাহপাক আপনার জন্য রেখেছেন।’
তারপর জিব্রাঈল আ. রাসূলুল্লাহ সা. কে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলেন। দ্বিতীয় আকাশের দ্বাররক্ষী ফিরিশতাগণ একইরকম প্রশ্নাবলী জিব্রাঈল আ. কে করলেন। তিনি প্রশ্নাবলীর উত্তর পূর্ববৎ প্রদান করলে দ্বার খুলে দেয়া হল। রাসূলুল্লাহ সা. দ্বিতীয় আকাশে পদার্পণ করলেন। সেখানে হযরত ইয়াহইয়া আ. ও হযরত ঈসা আ. এর সাথে মোলাকাত হল। তারা ছিলেন উভয়ে খালাত ভাই। এখানে পরিচয় ও সালাম সম্ভাষণের পর তৃতীয় আকাশের দিকে রওয়ানা হলেন।
তৃতীয় আকাশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার পর দ্বাররক্ষী ফিরিশতাগণ জিব্রাঈল আ. কে একই রকম প্রশ্নাবলী জিজ্ঞেস করলেন। তিনিও একই রকম পূর্ববৎ উত্তর প্রদান করলে সালাম সম্ভাষণসহ ফিরিশতাগণ দ্বার খুলে দিলে রাসূলুল্লাহ সা. তৃতীয় আকাশে উঠলেন। সেখানে হযরত ইউসুফ আ. এর সাথে তার সাক্ষাত হল। হযরত ইউসুফকে আল্লাহপাক সৌন্দর্যের একটি অংশ প্রদান করেছিলেন। এখানে সালাম-সম্ভাষণ ও কথোপকথনের পর রওয়ানা হলেন চতুর্থ আকাশের দিকে।
হযরত জিব্রাঈল আ. চতুর্থ আকাশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার পর দ্বাররক্ষী ফিরিশতাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন। তিনি যথাযথ উত্তর দিলেন। দ্বার খুলে দেয়া হল। রাসূলুল্লাহ সা. চতুর্থ আকাশে পদার্পণ করলেন। সেখানে হযরত ইদ্রিস আ.-এর সাথে মোলাকাত হল। যার সম্পর্কে কোরআনুল কারীমে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘এবং আমি তাঁকে একটি বুলন্দ মাকামে নিয়েছি।’ তারপর বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. পঞ্চম আকাশের দিকে রওয়ানা করলেন।
পঞ্চম আকাশের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হওয়ার পরও দ্বাররক্ষীদের প্রশ্নাবলীর উত্তর দিতে হয় এবং তারা দ্বার খুলে দিলে রাসূলুল্লাহ সা. পঞ্চম আকাশে পদার্পণ করেন এবং সেখানে হযরত হারুন আ.-এর সাথে তার সাক্ষাত হয় এবং সকলেই তাকে পুণ্যবান পয়গাম্বর এবং পুণ্যবান ভ্রাতা বলে অভ্যর্থনা জানালেন। তারপর আকাশের দিকে রওয়ানা করলেন। পূর্ববৎ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করার পর ষষ্ঠ আকাশের দ্বার খোলা হয় এবং রাসূলুল্লাহ সা. ষষ্ঠ আকাশে পদার্পণ করলেন। সেখানে হযরত মুসা আ. এর সাথে তার মোলাকাত হয়। মারহাবা হে পুণ্যবান পয়গাম্বর এবং পুণ্যবান ভ্রাতা বলে তিনি তাকে সম্ভাষণ জানালেন। (অসমাপ্ত)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।