ব্যর্থতার ভিতে গড়ে তুলতে হবে সাফল্যের সুউচ্চ মিনার
আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে স্বাধীনতা দিবসের ক্রোড়পত্রে প্রকাশের জন্যে দৈনিক ইনকিলাবের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে
জাহানারা আরজু
এ আমার স্বদেশ
আমার স্বদেশ আমার বুকের গভীর দিনরাত
কথা বলে, আমার স্বপ্নে-সুপ্তিতে, জাগরণে কর্মকোলাহলে
দুঃখের দাবানলে, কখনো খুশির পুষ্পিত পরাগে
আমার স্বদেশ কথা বলে।
আমার স্বদেশ-
বর্ষার বাদলে, চৈত্রের খা-খা রৌদ্দুরে শীতের তুহিনে
কখনো ব্যথা-নীল ঢল, কখনো অগ্নিগিরি দাবাগ্নি দহনে-দহন,
কখনো দুঃসহ ব্যথা-জমাট বরফ-সাগর-
তবু কথা বলে, অহরহ আমার বুকের তন্ত্রীতে সহস্র
রাগ মূর্ছনায় বেজে ওঠে ধ্বনিময়- আমার স্বদেশ!
আমার পূর্বপুরুষ আর উত্তম পুরুষের মিলিত স্রোতধারায়
এ মাটি আমার-
এখানে আমার পবিত্র জন্মলগ্ন মাতৃ-নাড়ী ছিন্ন হয়ে
সূর্যের পৃথিবীকে প্রথম দেখে-
আমার কুসুমিত শৈশব একে একে দৃঢ়তায় পদক্ষেপ রাখে,
আমার বন্ধনহারা দামাল কৈশোর বোশেখের ঝড়ে আম কুড়ায়,
এবং পদ্মা মেঘনায় নির্ভীক আনন্দে সাঁতার কাটে,
এখানোই আমার যৌবন প্রথম প্রেমের স্পন্দিত ‘গুচ্ছ গুচ্ছ
পুষ্পাঞ্জলি ছিটোয়--
এখানেই আমার বার্ধক্য তার সম্ভার তরণী বয়ে বয়ে
পরিশ্রান্ত পণ্যের বোঝা নামায়- এ আমার স্বদেশ।
এখানে কানুপা-চন্ডীদাস-বিদ্যাপতি-আলাওল-সৈয়দ-হামজা-
রবীন্দ্রনাথ-নজরুল স্থির নিশানায় নিয়ত আমাকে
পথ দেখায়, আমার দু’চোখের বিন্দুতে সে আলো জ্বেলে
আমি এখানেই ফিরে আসি- ভালোবাসি, ভালোবাসা
পেতে চাই- এ আমার স্বদেশ!
পাথরের এপিটাফ
জামালউদ্দিন বারী
বুকের ভেতর একটি পাথর চেপে আছে
বহুকাল আগে, কখন জানি
প্রত্যাশার নূড়ি কুড়াতে কুড়াতে একদিন
এই কবোষ্ণ পাথরকে আলিঙ্গন করেছিলাম।
আমার রক্ত মাংসের উষ্ণতায়, নিঃশ্বাসের ওমে
আপত্য স্নেহ-ভালবাসায়
ক্রমশ বড় হতে থাকে এই পাথর।
পাথর মানে মৃত্তিকা নয়
মৃত্তিকার আদিপিতা অথবা আত্মজা,
পাথর একদিন মৃত্তিকা হয় অথবা মৃত্তিকা পাথর।
অমৃত্তিক কঠিন এক অদৃশ্য পাথর
চেপে থাকে আমার বুকে
এই পাথরে আমি ক্ষয়ে যেতে থাকি নিরন্তর
এই পাথর চাপায় একদিন
এই রক্ত-অস্তির প্রাণহীন দেহ মৃত্তিকা হবে
আমৃত্যু সখা এই পাথর
একদিন আমার কবরের এপিটাফ হবে।
বুকের ভেতর ক্রমশ বেড়ে ওঠা
এই পাথরকেই ভালবাসি আমি।
জাহাঙ্গীর ফিরোজ
একখানা ঘর কাঁদে
মাটির ডোয়া, চারচালা ঘর
চারটি ঘরের মাঝে
একটু উঠোন জ্যোৎস্না রাতে
একখানা ঘর কাঁদে
একখানা মন দীঘল নদী
উদাস পথের বাঁকে
থমকে দাঁড়ায়
পেছন থেকে ভাঙা গলায় ডাকে।
হারায় যারা তারাই জানে
পেছন ডাকার ভয়
একটু উঠোন জ্যোৎস্না রাতে
কাঁদছে হৃদয়ময়।
ডালিম গাছের নীচে
তৌফিক জহুর
উসকোখুসকো চুলে ক্লান্ত হয়ে এলাম ডালিম গাছের নীচে
ইচ্ছে ছিল ঝিরিঝিরি আবেশের বাতাস মুছে দেবে সকল ক্লান্তি...
কিন্তু গাছের নীচে আসামাত্র উত্তরের হাওয়ার
ধূলো ঢেকে গেলো চারপাশ।
আমি তাকাতে পারছি না চোখ বন্ধ করে আছি
সহসা চোখ মেলতেই দেখি ডালিম গাছের
মগডালে শকুনের আলোচনা সভা
অবাক হয়ে গেলাম, একটু আগেই তো সোনালি
রোদ আর ঝিরিঝিরি হাওয়া ছিলো
তবে কি এমন হলো এমন লোভীর আনাগোনা
আমি উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম সবদিকেই ঘাড় ঘুরাইলাম
দেখি কাফেলা এগিয়ে আসছে ডালিম গাছের নীচে
আমি সোজা দাঁড়িয়ে গেলাম
অপেক্ষা করতে লাগলাম কাফেলার
একসময় আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম
নিশানা হাতে শ্লোগানে মুখরিত আমি
আমি নিশানা উড়িয়ে চার কাফেলার সামনে দাঁড়িয়ে আছি
আমার একহাতে বিজয় নিশান অন্যহাতে শকুন নিধন রাইফেল
ডালিম গাছের মগডালে তাকিয়ে দেখি
শকুনেরা আমার ছুঁড়ে দেয়া গুলিতে টপাটপ
ডালিম গাছ থেকে পরে যাচ্ছে ঝরাপাতার মতন
আমার রাইফেলে ধোঁয়া উড়ছে
নিজয় নিশান পতপত করে উড়ছে।
ফাহিম ফিরোজ
হাজামনামা
আমার সোনার নুনু কাটাবো হাজাম গেছে কই?
গিয়েছে বেটা জাল নিয়ে
অন্য পেশা লয়ে
ক্লিনিক আইছে গ্রাম পাশে
ঐতিহ্যে তো কাঁদে
নতুন টাকার নতুন শিশুর
খৎনা করে ক্লিনিক
তারপর নতুন একটা পরিচয় মুসলিম।
হাজাম কয়: জাত গেলরে
কুল গেলরে আজ
যে ছুরিতে কাটা হল সেটা আধুনিক!
আমগো একটা অতীত ছিল
আছিলো তার ভিত
পুঁজিবাদের ফান্দে পড়ে সমাজ নড়বড়ে
কান্দে হাজাম
কান্দে হাজাম
নদীতে জাল ফেলে!!
সুমন আমীন
একটি তর্জনী
একটি তর্জনীর হুংকারে জেগে উঠে
হিমালয় পাদটীকার পাললিক ভূমি
দীর্ঘ শোষণের পুন্জিভূত ক্ষোভের
আগ্নেয় লাভায় জ্বলে পুড়ে মরে
ফিনিক্স পাখির পাখায় ভর করে
বুক টান করে দাঁড়ায় ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল।
তারা ভুলে যায় সম্মুখের হিংস্র মৃত্যুর ভয়
ভুলে যায় অনিশ্চিত পথ চলার যন্ত্রণা
ভুলে যায় আপন সংকীর্ণ সংকটের কথা
ওই দেখো ভেদাভেদ মুছে সকলে মিশেছে আজ
দেশপ্রেমের জ্বালাময়ী শপথে স্লোগানে
অবশেষে এই তর্জনীর দেখানো বন্ধুর পথ পার হয়ে
কোমল ব-দ্বীপে উড়ে দৃপ্ত লাল সবুজ পতাকা।
হে আমার শব্দের আঙ্গুরলতা
শাহীন রেজা
আমিতো তোমার ঘ্রাণেই উন্মাতাল ছিলাম সারাটি জীবন।
আজ যখন চাঁদের আশায় পৃথিবীর সমস্ত জোনাকি তাদের পাখার আলো নিভিয়ে নিকষ নিশিন্দায় বিভোর, ঝিঁঝিঁ ‹র এস্রাজে দুলছেন মহান গোলাম আলী আর স্মৃতির আকাশ জুড়ে উড়ুউড়ু অবিশ্রাম মাতাল বুনোগন্ধরাজ তখন আমার অস্তিত্বে কেন নেই উপস্থিতি তোমার?
তুমিতো জানতেই ঝর্ণার কলকল ছাড়া প্রাণ জাগ্রত হয়না পর্বতের, জানতে সমীরের স্পর্শ ছাড়া ওঠেনা ছন্দ জলের শরীরে আর পলিহীনতায় ঘটেনা উন্মেষ দূরন্ত বীজের।
তাহলে কেন তোমার এই পলায়নতা
কেন এই লুকোচুরি রাত্রির সাথে সৃজনের সাথে?
হে আমার শব্দের আঙ্গুরলতা
কেন আজ নিস্পৃহ তুমি এই বসন্তবরণে
কেন এই বিধবার সাজ অরুণিম কবিতাকালে।
ফজলুল হক মিলন
অভিশপ্ত সময়ের হাত ধরে
এখন অন্ধকার কাকের ডানার চেয়েও ঢের বেশি
কালো কালো হাত ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে...
পূর্ব থেকে পশ্চিমে হা করে আছে অদৃশ্য দানব!
আমরা রা করতে পারি না অস্ফুট গোঙ্গানীর মতন শব্দে
ওদের পিলে কেঁপে ওঠে তাই- হুঙ্কারে রুদ্ধ করে মানবিক জীবন ।
একটা গোলাপ ফুটতে চেয়েছিলো গভীর গোপনে
বাতাসও টের পায়নি ভোমরার গোপন আলাপন
অথচ নিষিদ্ধ সময়ে ফুটন্ত গোলাপ ঘিরে এক দঙ্গল লাল পিঁপড়া
মার্চপাস্ট করে গেলো সকাল সকাল।
কী নিদারুণ কাল, অভিশপ্ত সময়ের হাত ধরে
বয়ে যাচ্ছে আমার স্বদেশ।
রহমান মাজিদ
বিস্বাদের মাঝে জন্মের সুখ
মাঝে মাঝে বিস্বাদের উইপোকাগুলো বাসা বাধে মগজে
ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের মত লম্বা শুঁড় দিয়ে
শুষে খায় চিন্তার জারক রস
হতাশার এনাকুন্ড গিলে খায় তখন খসখসে খোল ব্যাঙের মত
আমার পুরো অস্তিত্ব
সম্ভাবনার টিমটিমে চেরাগে পতিত হয়ে নিরাশার দীর্ঘশ্বাস
সজোরে ফেটে পড়ে আশার বেলুন
আলস্য আলোয়ানের পশমি ওম
কুঁচ্চে মুরগীর মত ঝিম ধরিয়ে দেয় কখনও
জীবনের কাব্যিক মুহূর্তে তাল লয়হীন বেসুরো গানের মত
পড়ে থাকি আমি তখন গৃহভ্যন্তরে
যেন পেটের নিচে ডিম নিয়ে বাতে বসেছে
চার বছরের বুড়ো ঘারছোলা মুরগী
তবুও আনন্দে নাচে মন যখন দেখি সদ্যপ্রস্ফূটিত তুলতুলে ছানাগুলো
জন্মের আনন্দে মাতিয়ে তোলে বাড়িটাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।