Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধীরগতির ভোগান্তি

উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

রাজধানীর ফার্মগেট থেকে শাহবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপের কাজ চলছে। এ কারণে রাস্তার বেশিরভাগ স্থান টিনের বেরা দিয়ে ঘেরাও করে দখলে নিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। দুদিকের সরু অংশ নিয়ে কোনোমতে চলাচল করছে যানবাহন। তাতে দিনভর যানজটের ভোগান্তি লেগেই আছে। দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ হলেই উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হবে। কিন্তু যেভাবে ধীর গতিতে কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত সময়ে এই কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
২০২০ সালের মধ্যেই এই অংশে মেট্রোরেল চালু করতে চায় সরকার। তবে নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যে মেট্রোরেল চালুর ক্ষেত্রে সময় আছে ২০ মাস। পক্ষান্তরে কাজ বাকি আছে প্রায় ৭৮ শতাংশ। প্রকল্প শুরুর প্রথম ১৯ মাসে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র সাড়ে ২১ শতাংশ। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে হলে আগামী ২০ মাসে ৭৮ শতাংশ কাজ শেষ করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বলছে, মেট্রোরেলের কাজ চলছে ধীর গতিতে। এমনকি মহাসড়ক বিভাগের পিছিয়ে থাকা ১০ প্রকল্পের মধ্যেও মেট্রোরেল রয়েছে পাঁচ নম্বরে। নির্মাণকাজে পিছিয়ে থাকায় ‘অব্যয়িত’ থেকে যাচ্ছে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের একটা বড় অংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেট্রোরেলের কাজ যতো ধীরে চলছে মানুষের ভোগান্তি ততোই বাড়বে। যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, নির্ধারিত সময়েই তারা মেট্রোরেলের কাজ শেষ করতে পারবেন।
এদিকে, মেট্রোরেল প্রকল্পটি আটটি প্যাকেজে ভাগ করে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্যাকেজের চুক্তিমূল্য প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি। এতে মেট্রোরেল নির্মাণব্যয় বেড়ে যাচ্ছে প্রায় ২০ শতাংশ। মেট্রোরেলের অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, আট প্যাকেজের মধ্যে শুধু একটিতে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে কম মূল্যে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর দুই প্যাকেজের চুক্তিমূল্য প্রাক্কলিত ব্যয়ের সমান। তবে প্রকল্পটির নির্মাণ শেষে চূড়ান্ত ব্যয় আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরুর পর এরই মধ্যে ফার্মগেট-মতিঝিল পথের শতাধিক বাসের রুট পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে করে যাত্রীদের নতুন করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মিরপুর থেকে ফার্মগেট হয়ে যে সব বাস বাংলামোটর-শাহবাগ হয়ে গুলিস্তান-মতিঝিল আসতো সেগুলো এখন সংসদ ভবন থেকে ঘুরে এলিফ্যান্ট রোড অথবা তেজগাঁও-মগবাজার হয়ে ঘুরে আসছে। এতে করে হাজার হাজার যাত্রীর পথ এলোমেলো হয়ে গেছে। যাত্রীদের কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরতে গিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন ৬-এর নির্মাণকাল নির্ধারিত ছিল ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত। পরে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বিশেষ উদ্যোগে উত্তরা-আগারগাঁও অংশটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ও আগারগাঁও-মতিঝিল অংশটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের সংশোধিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সব মিলিয়ে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল প্রকল্পের অগ্রগতি ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। তার মানে পুরো কাজ শেষ করতে মহাসড়ক বিভাগের হাতে সময় আছে মাত্র ২০ মাস।
সূত্র জানায়, দুই ধাপে চলছে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের কাজ। সংশোধিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপের কাজ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। অথচ চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত উত্তরা-আগারগাঁও অংশের ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে মাত্র আট মাস সময় হাতে আছে।
উত্তরা-আগারগাঁও অংশটির দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এই অংশে ৩৯৩টি পিয়ার (খুঁটি) বসবে। এখনো ১৮৪টি পিয়ারের কাজ বাকি আছে। পিয়ারগুলোকে শক্ত ভিত দিতে পাইল নির্মাণ হচ্ছে ৭৬৬টি। যদিও বাকি আছে ২৭০টি পাইলের কাজ। একইভাবে ১০৮টি টিআই গার্ডারের মধ্যে বাকি আছে ৩১টি। ৪ হাজার ৫৭৭টি প্রিকাস্ট সেগমেন্ট কাস্টিংয়ের মধ্যে নির্মাণ শেষ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৮৭২টির। উড়ালপথের মধ্যে মাত্র আড়াই কিলোমিটারে স্থাপন হয়েছে ভায়াডাক্ট। দিয়াবাড়ি থেকে শুরু হয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ভবন পর্যন্ত মোট নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাতে মাত্র আট মাস সময় থাকলেও চেক বোরিং, টেস্ট পাইল, মূল পাইল বাদে স্টেশনের আর কোনো কাজ শুরুই হয়নি।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক ও প্রকৌশল ব্যবস্থা সরবরাহ ও নির্মাণের জন্য চূড়ান্ত নকশা সম্পন্ন হয়েছে। উচ্চক্ষমতার বৈদ্যুতিক কেবল স্থাপনের জন্য শুরু হয়েছে খোঁড়াখুঁড়ি। মেট্রোরেল চলবে বিদ্যুতে। ঝুলন্ত তার থেকে বিদ্যুৎ পৌঁছাবে ট্রেনের ইঞ্জিনে (ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট মোটর)। এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে টঙ্গী ও মানিকনগর গ্রিড সাবস্টেশন। সাবস্টেশন দুটির অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ বর্তমানে এগিয়ে চলছে।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন স¤প্রতি প্রকাশ করেছে মহাসড়ক বিভাগ। প্রতিবেদনে ‘অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়’- এমন দশটি প্রকল্প তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ তালিকার পাঁচ নম্বরে রয়েছে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল। নির্মাণকাজে পিছিয়ে থাকার পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থের একটা বড় অংশ অব্যয়িত থেকে যাচ্ছে। গত ১০ মার্চ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা- সংক্রান্ত সভায় এ তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রতিনিধি।
উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণ করা হচ্ছে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ, যার দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ১১ কিলোমিটার। আগারগাঁও থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত পরিষেবা স্থানান্তর ও চেক বোরিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ১৯৭টি ট্রায়াল পিটের মধ্যে ৩৫টি ট্রায়াল পিট এবং ৪৫০টি বোরড পাইলের মধ্যে এখনও অধিকাংশই বাকি। কারওয়ান বাজার-মতিঝিল অংশে ১৫১টি ট্রায়াল পিটের মধ্যে ৩৭টি, ৬৫২টি বোরড পাইলের মধ্যে ১০টির বেশি পাইল সম্পন্ন হয়েছে।
উত্তরা-আগারগাঁও অংশটি নির্মাণ করছে ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। অন্যদিকে আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার অংশ জাপানের টেক্কেন করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড। আর কারওয়ান বাজার-মতিঝিল অংশটি যৌথভাবে নির্মাণ করছে জাপানি সুুমিতোমো মিতসুই কনস্ট্রাকশন ও ইতাল-থাই।
এদিকে, মেট্রোরেলের কাজ শেষ হতে যতো দেরি হবে মানুষের ভোগান্তি ততো বাড়বে। ইতোমধ্যে উত্তরা অংশে মেট্রোরেলের কাজের ধীরগতির কারণে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। তার উপর একাধিকবার গ্যাসের লাইন কাটা পড়ে ভয়াবহ বিপদের হাত থেকে অনেকে কোনোমতে রেহাই পেয়েছেন। কয়েকদিন আগেও গ্যাস লাইন কাটা পড়ে উত্তরার প্রধান সড়কের দুদিকেই বন্ধ রাখা হয়েছিল। তাতে মধ্যরাত পর্যন্ত হাজার হাজার যাত্রীকে রাস্তায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ভুক্তভোগিদের অনেকেরই অভিযোগ, মেট্রোরেলের কাজ দিনে হয় না বললেই চলে। রাতে কাজ চললেও শ্রমিকের সংখ্যা খুবই কম। অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক যন্ত্রপাতির পরিবর্তে শ্রমিকদের দিয়ে ম্যানয়ালি কাজ করানো হয়। তাতে কাজ দ্রুত এগুচ্ছে না। তবে প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, ফার্মগেট-মতিঝিল অংশে অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে পাইলিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। এতে কাজ যেমন দ্রুত হচ্ছে তেমনি ধূলাবালিতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে না।
২৪ সেট ট্রেন চলবে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোতে। ট্রেনগুলো নির্মাণ করছে জাপানি রোলিংস্টক নির্মাতা কাওয়াসাকি-মিত্সুবিশি। পাঁচ সেট ট্রেন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ও বাকি ১৯ সেট ২০২১ সালের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। ট্রেনগুলোর চূড়ান্ত নকশার কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বগি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে গত মাসের মাঝামাঝিতে।



 

Show all comments
  • নিয়াজ মাহমুদ ২৪ মার্চ, ২০১৯, ৩:৪৭ এএম says : 0
    মেট্রোরেলের কাজ যতো ধীরে চলছে মানুষের ভোগান্তি ততোই বাড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবুল কালাম আযাদ ২৪ মার্চ, ২০১৯, ৩:৪৮ এএম says : 0
    নির্ধারিত সময় এবং নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে যথাযথভাবে কাজ শেষ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান ২৪ মার্চ, ২০১৯, ৩:৫০ এএম says : 0
    রাজধানীর ফার্মগেট থেকে শাহবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজে আরও গতি বাড়ানো দরকার বলে আমি মনে করি।
    Total Reply(1) Reply
    • ash ২৪ মার্চ, ২০১৯, ৬:০২ এএম says : 4
      APNI MONE KORLLE HOBE? AMADER DESHE TOPE JARA BOSHE ASHE ORA E OLOSH, CHOR, DURNITI BAJ, SHUTORANG PORJAY KOROME NICHE O OI OLOSH, CHURI , KAJE FAKI DEWA TA CHOLE
  • নাফিজ খান রেজা ২৪ মার্চ, ২০১৯, ৩:৫০ এএম says : 0
    নিউজটি করায় দৈনিক ইনকিলাব ও রিপোর্টারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • রিজভী ২৪ মার্চ, ২০১৯, ৩:৫২ এএম says : 0
    সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উচিত কাজটি বিশেষভাবে তদারকি করা।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ২৪ মার্চ, ২০১৯, ৫:৫৬ এএম says : 0
    AMI JAPANESE DER KAJ DEKHECHI, AK SHATHE E KAJ KORECHI, ODER KAJE FAKI BA OLOSHOTA DEKHI NAI ! BANGLADESH E JOTO KAJ HOY ODIKANGSHO ENGINEER, LABOUR BANGLADESHI, ORA KAJE FAKI DAY, JOTO TUKU KAJ KORA WCHITH MOST KHETRE E SHOMPURNO KORE NA, CHANCE PELE E BOSH BOSHE BIRI FUKE R ADDA MARE !! ETA PODDA SHETUTEO DEKHECHI AKHON MATRO RAIL E DEKCHI !! KINTU AI BANGALIRA BIDESH SAWDI JEA THIK E THICK VABE KAJ KORE !!! KI KORA ETAI AMADER SHOVAB DHATANI PORLE AMRA KAJ KORI NA DHATANI DILE BOSHE BOSHE GOPPO MARI
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেট্রোরেল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ