পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে দিয়ে একদা ‘বারাহী’ নামে খরস্রোতা নদীতে নৌকা চলত। এপাড়-ওপাড় খেয়া পারাপারও হতো এমন কথা বললে বেশির ভাগ মানুষ চোখ কপালে তুলে বলবেন যত্তসব আজগুবি কথা। কিন্তু বাস্তবেই একটি নদী ছিল। এখন এক নম্বর ড্রেনের নাম ধারণ করেছে।
পদ্মার তীরবর্তী তালাইমারী বিজিবি ক্যাম্পের সামনে থেকে রুয়েট বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যে নদীটি সরমংলা নামে প্রবাহিত হতো। এর শাখা হলো দয়া, রায়চাঁদ, হোজা নদী। বড়াল থেকে খালকেটে নারদের সাথে যুক্ত করা খালই ছিল মুসাখা নদী। চারঘাটের কাছে পদ্মা থেকে উৎপত্তি বড়াল নদী। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাগলা সবই পদ্মার শাখা-প্রশাখা। প্রমত্ত পদ্মার উত্তর পাড়ের বিভিন্ন স্থান দিয়ে এসব নদী নানা নাম ধারণ করে বয়ে যেত।
রাজশাহী অঞ্চলের পদ্মা থেকে যেসব শাখা নদীর সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সব ক’টির উৎসমুখ বন্ধ হওয়া শুরু হয়েছে ১৮২১ সালের বন্যার পর থেকে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত। এসব নদীতে বড় ধরনের বন্যা, অতিরিক্ত বর্ষণে পদ্মার পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় উৎসমুখে বালি জমে প্রবাহের স্বাভাবিক গতি বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রমেই মরে গেছে নদীগুলো। এরপর নদীগুলোর শত শত বিঘা জমি বেদখল হয়ে পুকুর কিংবা দালানকোঠা গড়ে তোলা হয়েছে। রূপান্তর করা হয়েছে কৃষিজমিতে। এসব নদীর জমি সরকারি সম্পত্তি। এসব খাল উদ্ধার করে খনন করা হলে পদ্মার পানি না হোক বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যাবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে।
বিশিষ্ট নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী এসব হারিয়ে যাওয়া নদ-নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত সরেজমিনে ছুটে বেড়িয়ে ‘ফিরিয়ে দাও সেই প্রবাহ’ নামে বইতে বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশজুড়ে জালের মতো প্রবাহমান ছড়িয়ে ছিল হাজারের বেশি নদী। প্রতিবেশী দেশ ভারত সকল আন্তর্জাতিক আইন নিয়মের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে পানি আগ্রাসন চালিয়ে এসব বড় বড় নদীর দফারফা করে দিয়েছে। এখন আড়াইশ’র মতো নদী ধুঁকে ধুঁকে টিকে রয়েছে। পদ্মা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ অভিন্ন সব ক’টি নদীর ওপর বাঁধ-ব্যারাজ দিয়ে এককভাবে পানি প্রত্যাহার করায় এসব বড় বড় নদীর সাথে শাখা-প্রশাখাগুলো আজ মৃতপ্রায়।
বাংলাদেশের বড় নদী পদ্মার বেহাল দশার কথা তুলে ধরে বলেন, এক ফারাক্কায় বাংলাদেশের পাঁচ কোটি মানুষের ওপর নামিয়েছে বিপর্যয়।
এ অববাহিকার জনজীবনকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এরপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো রয়েছে ভূমিদস্যুদের আগ্রাসী তৎপরতা। এরা মরা নদীতে দখলের ছোবল বসিয়েছে। নদীকে হত্যা করে চলেছে নানাভাবে। পদ্মার তীর ধরে পূর্ব-পশ্চিমে গেলে দেখা যায় কিভাবে চলছে দখলের মহোৎসব। নদী তীর শহররক্ষা বাঁধ সব দখল হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে সরকার নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অন্য দিকে রাজশাহীতে এমন কোনো অভিযান নেই; বরং নদীতীরে বিভিন্ন স্থানে ভরাট করে বানানো হচ্ছে স্থাপনা। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নদীতীরকে দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশবান্ধব করার জন্য নানা প্রকল্প নিলেও দখলদারদের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ওপর কোপ বসিয়েছে। বুলনপুর থেকে পূর্বে তালাইমারী পর্যন্ত নদীর তীরজুড়ে ফুটপাত নির্মাণ করে সাইকেল চালানোর রাস্তা তৈরীর উদ্যোগ নেয়। পঞ্চবটি পর্যন্ত টাইলস দিয়ে ফুটপাত বানায়। পাশেই নিচের রাস্তা করা হয়। আলোর জন্য পোল বসানো হয়। দখলদারদের কারণে এসব ভেস্তে যেতে বসেছে। সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বিগত সময়ে শুরু হওয়া পদ্মার তীরজুড়ে নেয়া প্রকল্প পুনরায় বাস্তবায়ন করার কথা দৃঢ়তার সাথেই জানিয়েছেন। চেয়েছেন সব মহলের সহযোগিতা।
শুধু নদীতীর দখল নয়। শহর রক্ষা বাঁধে এখনো চলছে দখল। এমনকি দখলদাররা পজিশন বিক্রি করছে। অথচ এসব দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ড পালন করছে রহস্যজনক নীরবতা। কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভাঙা রেকর্ডের মতো বাজাচ্ছে তালিকা করেছি। খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সেটি কবে তা অনিশ্চিত। তাদের এমন কথা বছরের পর বছর ধরে শুনতে হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।