পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণহানি ও পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন অনেকে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে নানা উদ্যোগ নিলেও কার্যত কোন সফলতা মিলছে না। গত ২২ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে শিক্ষার্থীসহ মারা গেছে অন্তত একশ’ জন। গতকালও সড়কে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া রাজধানীর মহাখালীতে বাসের ধাক্কায় নিজের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অল্পের জন্য বেঁচে ফিরেছেন সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এদিকে, গত বছর সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও প্রায় ১৬ হাজার মানুষ আহত হয়।
আন্দোলনকারী ও সড়ক সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবহন সেক্টরের দুর্বৃত্তায়ন, বেপরোয়া চালকদের মধ্যে আগে যাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অভিযুক্ত চালক-মালিক ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বিচার ও শাস্তি না হওয়া, বিআরটিএ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজের সমন্বয়হীনতা এবং ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীদের হাতে পরিবহন সেক্টর কুক্ষিগত থাকায় কোনভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবহন সেক্টরের অনিয়ম আর দুর্বৃত্তায়ন বন্ধের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করা গেলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহতের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। সড়ক আন্দোলন নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, চলতি মাসে সড়ক দুর্ঘটনা প্রায় ১৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শুধু গত সপ্তাহে মারা গেছে শিক্ষার্থীসহ অন্তত একশ জন। গতকালও সড়ক দুর্ঘটনায় সারাদেশে ১০ জনের মৃত্যু ঘটে।
এর আগে গত মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নর্দ্দার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় মৃত্যু ঘটে বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহমেদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসের নিজস্ব গাড়িতে উঠতে গেলে সুপ্রভাত পরিবহনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর ঘাতক চালকের ফাঁসি, পরিবহনটির রুট পারমিট বাতিলসহ ৮ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় পরদিন বুধবার নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। এর ফলে আবারও নতুন করে নিরাপদ সড়কের দাবি আলোচনায় উঠে আসে।
এছাড়া একইদিন নাটোরের গুরুদাসপুরে পিকআপ উল্টে রনি ইসলাম নামে এক এইচএসসি পরিক্ষার্থীসহ দু’জন নিহত ও ২৩ জন আহত হয়। বুধবার গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা সড়কে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে সুমি আক্তার নামে এক ছাত্রী নিহত ও শাহনাজ নামে আরও এক ছাত্রী গুরুতর আহত হয়। একইদিন যশোরের শার্শায় পিকআপের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে পা হাড়ায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মিফতাহুল জান্নাত। একইদিন রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বাসের ধাক্কায় সাদিয়া আক্তার (৮) নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়। গত বৃহস্পতিবারও সারাদেশের সড়কে নিহত হয় ১২ জন। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ ও নরসিংদীর বেলাবোতে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় দুই ছাত্র, খুলনার রূপসায় ট্রলি চাপায় এক ছাত্রী নিহত এবং মানিকগঞ্জে বাবা-ছেলে ও নারায়ণগঞ্জে মা-মেয়ে নিহত হয়। প্রতিদিনই সড়কে এভাবে প্রাণ ঝড়লেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। তারা বরং অন্যদের দোষারোপে লিপ্ত রয়েছে। এছাড়া নিরাপদ সড়ক আইন-২০১৮ কার্যকর ছাড়াও পরিবহন খাতে নৈরাজ্য বন্ধে বিভিন্ন সুপারিশ ও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এতদিনে কোনটি বাস্তবায়ন করা হয়নি।
নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) তথ্যানুসারে, ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৪৩৯ জন নিহত হয়েছেন। আর এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪২৫ জন। নিহতদের মধ্যে গাড়ি চাপায় ১ হাজার ৩৮৫ জন, মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫৮৫ জন, উল্টে গিয়ে ২৫৩ জন, খাদে পড়ে ১৩৩ জন এবং অন্যান্যভাবে ৬৬৩ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনা কবলিত পরিবহনের মধ্যে রয়েছে- ৮৭৯টি বাস, ৭৯৩টি ট্রাক, ৬৩৪টি মোটরসাইকেল, কাভার্ডভ্যান ১১৯টি, মাইক্রোবাস ৬৭টি, নসিমন ৫০টি, প্রাইভেটকার ৪৭টি ও মাহেন্দ্র ৩৮টি।
নিসচার পরিসংখ্যান মতে ২০১৬ সালে ২ হাজার ৩১৬টি দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ১৫২ জন ও ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৩৪৯টি দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৬৪৫ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
এদিকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুসারে, গত বছর ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লেও হতাহতের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ৪ হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৩৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন ১৬ হাজার ১৯৩ জন। অন্যদিকে গত বছর সড়ক-রেল-নৌপথ ও আকাশপথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ৭৯৬ জন। এসব দুর্ঘটনায় আরও ১৫ হাজার ৯৮০ জন আহত হয়।
গত বছর সড়কে যাদের প্রাণ গেছে, তাদের মধ্যে ৭৮৭ জনই নারী এবং শিশু ৪৮৭ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ২৫২ জন চালক ও শ্রমিক, ৮৮০ শিক্ষার্থী, ২৩১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১০৬ জন শিক্ষক, ৩৪ সাংবাদিক রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় পড়েছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। আর চাপা দেওয়ার বেশি ঘটনা ঘটিয়েছে বাস।
নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার সাথে জড়িত চালক-মালিকদের শাস্তির আওতায় না আনা এবং জনগণের অসচেতনতা দুর্ঘটনার জন্য অন্যতম দায়ী। আইনের যথাযত প্রয়োগ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত তদারকি করতে হবে। এর বাইরে অসচেতন নাগররিকদের লঘু দন্ডের বিধান করলে তারা ঝুঁকি নিয়ে মূল রাস্তা দিয়ে পার হবে না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১১৫টি কারণ জড়িত। এর মধ্যে পাঁচটি বড় কারণ হল-দক্ষ চালকের অভাব, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়া গতি, সড়কের বেহাল দশা ও আইনের অপপ্রয়োগ।
তিনি বলেন, সরকার যাত্রীবান্ধব উদ্যোগ না নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করে চলে। যার কারণে তারা অপরাধ করলেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। তার মতে, দুর্ঘটনা রোধে এ পাঁচটির সমাধান হলে সড়ক দুর্ঘটনা একটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
সড়ক সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় অধিকাংশ অপমৃত্যুর মামলা নেয় পুলিশ। যার বিচার শুরু হলে তারা লঘু শাস্তি পেয়ে বেড়িয়ে আসে। তাদের মতে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ২০ বছর এবং সর্বনিম্ন ১০ বছর কারাদন্ড হওয়া উচিত। এর সঙ্গে বড় অঙ্কের জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিল করা হলে চালকদের মধ্যে ভয় ও সচেতনতা সৃষ্টি হবে। এছাড়া কেউ বেপরোয়া প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে ইচ্ছাকৃত চাপা দিলে তাকে ৩০২ ধারায় হত্যার দায়ে দন্ডিত করতে হবে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৬৬টি দুর্ঘটনায় ৬৯৯ জন নিহত এবং এক হাজার ২২৭ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৫৪টি দুর্ঘটনাই বাসের কারণে ঘটেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৩০টি। এছাড়া ১১৩টি ট্রাক, ৭৩টি পিকআপ এবং ৫৬টি ব্যক্তিগত গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হলেও কার্যত অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। সড়ক পরিবহন, স্থানীয় সরকার ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায় সড়ক ও পরিবহন খাতে ৮ বছরে সরকার খরচ করেছে ৬ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। বর্তমানে সাড়ে ৪৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে মেট্রোরেল নির্মাণ, উড়ালসড়ক নির্মাণ, বাসের বিশেষ লেন নির্মাণ, পূর্বাচলে সড়ক ও ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন চলছে। এর বাইরে মেট্রোরেল, উড়ালসড়ক, রিংরোড ও পাতালরেল নির্মাণে আরও প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প আসছে বলে জানা গেছে।
সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরাদ্দ হওয়া অনেক কাজ শেষের দিকে। তবুও আশানুরূপ কোন সফলতা আসেনি। বেহাল সড়ক বেহালই রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক সংক্রান্ত পরিকল্পনায় গলদ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সড়কে রিকসা ও ব্যক্তিগত গাড়ি তুলে দিয়ে নিরাপদ বাস সার্ভিস চালুর কথা বলা হলেও কর্তৃপক্ষ তাতে গুরুত্ব দেয়নি। এছাড়া ফুটপাথ মুক্ত করে যথাযথ অবকাঠামো নির্মাণের ওপরে জোড় দেন তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।