পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের ৮মাস পেরোলেও পরিবহনখাতে নৈরাজ্য বন্ধে সুপারিশ ও প্রতিশ্রুতির কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি আন্দোলনের পর সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হলেও এর প্রয়োগ কবে হবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। দেশজুড়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে কঠোর আন্দোলন হলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। আগের পরিস্থিতি একটুও বদলায়নি। সবশেষ গত ১৯ মার্চ মঙ্গলবার রাজধানীর নর্দায় বিইউপির ছাত্র আবরার নিহত হলে আবারো নিরাপদ সড়ক চেয়ে উত্তপ্ত হয় রাজপথ। একদিকে যখন নিরাপদ সড়কের দাবি অন্যদিকে চালকদের বেপরোয়াগতিতে গাড়ি চালানোয় মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। আবরারের মৃত্যুর পরদিন বুধবার যশোরে পিকআপের চাপায় স্কুলছাত্রীর পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়ক নিরাপত্তায় বিভিন্ন সময়ে যেসব সুপারিশ উঠে এসেছে সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত দুর্ঘটনা কমবে না। অধিকাংশ পদক্ষেপ ও সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আবার আগের অবস্থানে ফিরে যায় সবকিছু। সড়কে ঝরতে থাকে একের পর এক প্রাণ। দীর্ঘ হয় সড়কে মৃত্যুর মিছিল।
জানা গেছে, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে এ পর্যন্ত ১২৯ দফা সুপারিশ করেছে সরকারের বিভিন্ন কমিটি ও সংস্থা। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকেও দেয়া হয়েছে আরও ২১টি সুপারিশ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনাও উপেক্ষিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে দেয়া আদালতের নির্দেশনাও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা তাদের স্বার্থের বাইরের কোনো সুপারিশ মানতে নারাজ বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে একের পর এক সড়ক দুঘর্টনা ঘটছে। পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেন পরিবহন খাত থেকে। এর অংশ যায় পুলিশ কর্মকর্তাদের পকেটেও। আর এ কারনেই সড়কে শৃংখলা আনতে বিভিন্ন কমিটি যেসব সুপারিশ করেন তার বাস্তবায়ন করতে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন না পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও পুলিশ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিবহন খাতে এক ধরনের শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা বা পরিবহন খাতে নৈরাজ্য বন্ধ করা অসম্ভব নয়, এজন্য দরকার সরকারের সদিচ্ছা।
বুয়েটের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, সমস্যা এবং সমাধানের উপায় চিহ্নিত করে পরিকল্পনা করা আছে। এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া এসব সমাধান সম্ভব নয়। বাস মালিক বা শ্রমিকদের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। সেজন্যই সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। আইনটি প্রয়োগের জন্য বিধিমালা তৈরির কাজটিও সংশ্লিষ্টদের দ্রুত করতে হবে। তা না হলে সড়কে লাশের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সড়ক দুঘর্টনা প্রতিরোধে সকলের সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র জানায়, গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সড়ক ও পরিবহনখাতে নৈরাজ্য ঠেকাতে সরকার গঠিত কমিটি বেশকিছু সুপারিশ করে। পরবর্তীতে এ সব সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার ও পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে সরকার ৩৬ বছরের পুরনো মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩ আইন সংস্কার করে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংসদে পাস করে।
গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক অনুষ্ঠানে বলেন, ঢাকা শহরের পরিবহন সেক্টরে শৃংখলা আনতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেন, পরিবহন খাতে শৃংখলা ফেরাতে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, কমিটি গঠন। সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৬তম সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গত বৃহস্পতিবারও বৈঠক করেছে। এতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে যা পরবর্তী বৈঠকে (২৭ মার্চ) চূড়ান্ত হতে পারে।
বেপরোয়া বাস চালনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি বন্ধে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আইন মানতে বাধ্য করতে প্রায় প্রতিদিনই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। কয়েকশ’ গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে। বহু চালক জেলে রয়েছেন। যেসব সুপারিশ এখনও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি সেগুলো শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে।
সড়ক ও পরিবহন বিভাগে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘ ৮ বছর ঝুলে থাকার পর গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আগস্ট মাসেই মন্ত্রিসভা কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। পরে আগের তুলনায় সাজা ও জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন। পরে ৮ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ হয়। আইন প্রণয়নের পর বিধিমালা করতে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৬তম সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়। এক মাস হয়ে গেলেও এখনও প্রথম বৈঠক হয়নি বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত বছর নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালে আগস্টের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সড়কে শৃংখলা আনতে ২০ দফা সুপারিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো, বাস চলাচলের সময় মূল দরজা বন্ধ রাখা, নির্ধারিত স্থান ছাড়া যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানামা নিষিদ্ধ করা, গণ-পরিবহনের ভেতরে দৃশ্যমান স্থানে চালক ও হেলপারের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করা, মোটর সাইকেল আরোহীদের জন্য হেলমেট বাধ্যতামূলক করা, ফুটওভারব্রিজ বা আন্ডারপাসের আশপাশের রাস্তা চলাচলে নিষিদ্ধ করা, রুট পারমিট এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোকে দ্রুততার সঙ্গে পরিত্যক্ত করার বিষয়গুলো ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও এর তেমন কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।
এছাড়া গত ১৫ অক্টোবর একটি সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। ওই অনুসন্ধান কমিটির প্রধান হিসেবে ছিলেন বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অধ্যাপক ও পরিচালক ড. মো. মিজানুর রহমান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান এবং নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। এই কমিটিও ১৮টি সুপারিশ করে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ, পুলিশ, বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, নিরাপদ সড়ক চাইসহ সবাইকে নিয়ে একটি কারিগরি টিম গড়ে তোলা এবং তাদের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। বড় দুর্ঘটনাগুলো অনুসন্ধানে এই টিম কাজ করবে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এই টিম ঘটনাস্থলে চলে যাবে এবং দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য ধবংস হওয়ার আগে তা উদ্ধার করবে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কোন উদ্যোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।