বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন মাজীদের ১৭ নং সূরার নাম সূরা ইসরা বা সূরা বনী ইসরাঈল। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্যতম। এই সূরায় ১১১টি আয়াত এবং ১২টি রুকু এবং এই সূরায় মোট অক্ষর সংখ্যা ৬৯৯৩। এই সূরার সংখ্যাতাত্তি¡ক উপাত্তগুলোর একক নিম্নরূপ। যথা:
ক. সূরাটির ক্রমিক নং ১৭; (১+৭)=৮
খ. সূরাটির আয়াত সংখ্যা ১১১; (১+১+১)=৩
গ. এই সূরার রুকু সংখ্যা ১২; (১+২)=৩
ঘ. সূরাটির অক্ষর সংখ্যা ৬৯৯৩; (৬+৯+৯+৩)=২৭
(২+৭)=৯
সবগুলোর যোগফল ২৩। তার একক (২+৩) = ৫। এ ৫ সংখ্যাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা লক্ষ করলে দেখা যায়, আরবী মিরাজ শব্দে ৫টি বর্ণই আছে এবং তা ৫টি পর্বে বিন্যস্ত। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আমরা মিরাজের প্রথম পর্ব ‘ইসরা’ সম্পর্কে আলোকপাত করতে প্রয়াস পাবো।
মহান রাব্বুল আলামীন মিরাজের প্রথম পর্ব ‘ইসরা’-এর স্বরূপ, হাকিকত ও মাহিয়াত বিশ্লেষণসহ সূরা বনী ইসরাঈলের ১নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রজনী যোগে মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শনাবলি দেখানোর জন্য, তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’
এই আয়াতে কারিমার বাচনভঙ্গি খুবই প্রাণস্পর্শী ও চমৎকার। কেননা এই আয়াতে কারিমায় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত প্রথমে তৃতীয় ও পরে উত্তম পুরুষ নিজের জন্য ব্যবহার করেছেন। আরবী অলঙ্কারশাস্ত্র অনুসারে পরস্পর সংলগ্ন দু’টি বাক্যে একই কর্তার উত্তম ও তৃতীয় পুরুষের ব্যবহার ব্যাকরণসম্মত ব্যাপার। এর একটি উদাহরণ আমরা নিম্নল্লিখিত আয়াতে কারিমায় খুঁজে পাই। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের মধ্য হতে দ্বাদশ নেতা নিযুক্ত করেছিলাম, আর আল্লাহ বলেছেন, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, তোমরা যদি সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও, আমার রাসূলগণে ঈমান আনো ও তাদেরকে সম্মান করো এবং আল্লাহকে ঋণ প্রদান করো, তবে তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করব এবং নিশ্চয়ই তোমাদেরকে জান্নাতে দাখিল করব, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; এরপরও কেউ কুফরি করলে সে সরল পথ হারাবে।’ (সূরা মায়িদাহ : আয়াত ১২)।
আরবী ‘ইসরা’ শব্দের অর্থ হলো রজনী যোগে ভ্রমণ করা। সূরা বনী ইসরাঈলের ১নং আয়াতে ‘আসরা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ হলো, আল্লাহপাক বলেন, ‘আমি আমার বান্দাহকে রজনী যোগে ভ্রমণ করিয়েদিলাম।’ মিরাজ যে রাতে সংঘটিত ও সম্পন্ন হয়েছিল এই আয়াত দ্বারা তা সুস্পষ্ট হয়েছে এবং মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণকে ‘ইসরা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে।
সহি বুখারী শরীফ ও সহি মুসলিম শরীফসহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে মিরাজের প্রথম পর্ব ‘ইসরা’-এর বিবরণ রয়েছে। সংক্ষেপে ঘটনাটি এরূপ, ‘পিয়ারা নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সা. আবু তালিবের গিরিসঙ্কটে (শিয়াবে আবি তালিব) উম্মে হানীর বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। আকস্মাৎ তার গৃহের ছাদ খুলে গেল। হযরত জিব্রাঈল আ.সহ তিনজন ফেরেশতা তার নিকট আগমন করলেন এবং তাকে কাবা শরীফের প্রাঙ্গণ হাতিমে নিয়ে গেলেন।
প্রথমে তিনি মুহাম্মদ সা.-এর সিনা মোবারক চাক করলেন। তারপর তা জমজমের পানি দ্বারা ধৌত করলেন। তারপর ঈমান ও হেকমতপূর্ণ সোনার একটি তস্তুরি আনা হলো এবং তাকে সিনা মোবারকে সংস্থাপন করা হলো। এরপর গর্দভ হতে বড় এবং খচ্চর হতে ছোট সাদা রং-এর একটি লম্বা জানোয়ার ‘বোরাক’ আনা হলো। যার দ্রুতগামিতার হাল ছিল এই যে, চোখের দৃষ্টির প্রান্তসীমায় তা পড়তে ছিল।
যখন তিনি বোরাকের ওপর আরোহণ করতে ইচ্ছা করলেন, তখন তা নর্তন-কুর্দন শুরু করে দিলো। হযরত জিব্রাঈল আ. জিজ্ঞেস করলেন, এমন করছো কেন? তোমার পিঠে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ সা. হতে অধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত ও মর্যাদাশীল কেউ আরোহণ করেননি। এ কথা শুনে বোরাক ঘর্মাক্ত হয়ে গেল। পিয়ারা নবী মুহাম্মদ সা. বোরাকের ওপর আরোহণ করে বায়তুল মুকাদ্দাস গমন করলেন এবং বোরাকটিকে সেই কড়ার সঙ্গে বাঁধলেন, যেখানে অন্য আম্বিয়াগণ নিজেদের সওয়ারি বেঁধে রাখতেন।
পথিমধ্যে আল্লাহপাকের কুদরতের বহু নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলেন। তারপর মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করে সেখানে সমবেত আম্বিয়ায়ে কেরামের ইমাম হয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। মসজিদ হতে বের হওয়ার পর হযরত জিব্রাঈল আ. শরাব এবং দুধের দু’টি পেয়ালা তার সামনে পেশ করলেন। তিনি দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলেন। হযরত জিব্রাঈল আ. বললেন, আপনি ফিতরাত ও সহজাত স্বভাবকে পছন্দ করেছেন। যদি শরাবের পেয়ালা গ্রহণ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত গোমরাহ হয়ে যেত। তারপর হযরত জিব্রাঈল আ. তাকে নিয়ে প্রথম আকাশের দিকে ঊর্ধ্বলোকে রওনা হলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।