Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্পটে অবস্থান

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৯, ১:০৭ এএম

সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর (২০) মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকালও আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে অবস্থান করে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। যদিও আন্দোলনকারীদের একটি অংশ গত বুধবার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে বৈঠক করে ২৮ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করে। এদিকে, গতকাল শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের লাল গোলাপ দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অনুরোধে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার পরিবর্তে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ফুট ওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হয়েছেন পথচারীরা। গতকাল সকাল থেকে দুর্ঘটনাস্থলে ফুট ওভার ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
গতকাল সকাল থেকে নর্দ্দার প্রগতি সরণি, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, উত্তরা হাউজ বিল্ডিং ও মিরপুর বেরিবাধ ও বসুন্ধারা এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় দুই এক জায়গায় পথচারীদের ফুটওভারব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং দিয়ে চলাচলের অনুরোধ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া ফার্মগেট ও সিটি কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে সরিয়ে দেয়। বুধবার শিক্ষার্থীদের একাংশ ২৮ মার্চ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করলেও অপর একটি অংশ মানববন্ধনসহ অন্যান্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
গতকাল সরেজমিনকালে দেখা গেছে, বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিইউপি ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) শতাধিক শিক্ষার্থী প্রগতি সরণি থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ঢোকার মুখে সড়কে এসে জড়ো হন। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে বেলা ১২টার দিকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করে তারা। এসময় তাদের হাতে জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। মানবন্ধন থেকে তারা আবরারকে চাপা দেয়া বাসের চালকের মৃত্যুদন্ডসহ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবি জানান। সরেজমিনকালে দুর্ঘটনাস্থলে ফুটওভারের ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু করতে দেখা গেছে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর কর্মসূচি শেষ করে বিইউপির শিক্ষার্থী ফামিন চৌধুরী বলেন, নিরাপদ সড়কের ৮ দফা দাবিতে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করেছি। মেয়র ৭ দিন সময় নিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সেটা আমরা দেখব। শুক্র ও শনিবারের পর রোববার থেকে আমরা আবারও মানববন্ধন করব। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে আমরা ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করবো।
এআইইউবির ছাত্র সামচি তাবরীজ বলেন, আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাব। আন্দোলনে না থাকলে কোনো দাবি আদায় হবে না। কর্তৃপক্ষ চাপ অনুভব করবে না।
পুলিশকে লাল গোলাপ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সুভেচ্ছা
দুপুর দেড়টার দিকে মানববন্ধনস্থলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি মোস্তাক আহমেদ। এসময় শিক্ষার্থীরা তাকে ও অন্য পুলিশ সদস্যদের লাল গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানান। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ শেষে মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমরা আলোচনা করেছি, শিক্ষার্থীদের জানিয়েছি গত বুধবার মেয়রের অফিসে সাত দিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তীতে কী ডেভেলপমেন্ট থাকবে সেটাও তাদের জানানো হবে। আমরা অনুরোধ করেছি, তারা যেন রাস্তা বøক না করেন, জনভোগান্তি সৃষ্টি না করেন। তাদের কর্মসূচি যাতে শান্তিপূর্ণ থাকে সে জন্য তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। তারাও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে।
বেলা ১২টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে সড়কে বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্লাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে করে একদল শিক্ষার্থী। আন্দোলনে উপস্থিতি স্টেট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্র গাউস আল নাহিয়ান বলেন, আমরা নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করছি। আমরা আর কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যু চাই না। আপনাদের আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে তাহলে কেন আন্দোলন করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এক অংশ আন্দোলন স্থগিত করলেও আমরা চাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে। এরই অংশ হিসেবে মানববন্ধন করছি।
পথচারীদের লাইন ধরে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারের অনুরোধ
গতকাল উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় একদল শিক্ষার্থীকে পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারের অনুরোধ করতে দেখা যায়। তারা পথচারীদের সারিবদ্ধভাবে লাইন ধরে ফুটওভার ব্রিজে উঠতে সহযোগিতা করছেন। দেখা গেছে, একটি লাইন দিয়ে পথচারীরা ব্রিজে উঠছেন আর অন্যএকটি লাইন দিয়ে তারা ব্রিজ থেকে নেমে আসছেন। পথচারীদেরকেও নিজ উদ্যোগে লাইনে এসে দাড়াতে দেখা গেছে। তবে কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পাড় হতে গেলে শিক্ষার্থীরা তাদের বুঝিয়ে সিরিয়ালে দাড় করিয়ে দেন। ফুটওভার ব্রিজের নিচে অনেক বড় লাইন দেখা গেছে। ব্রিজে ওঠার জান্য সিরিয়ালে দাঁড়ানো ব্যবসায়ী রোকনুজ্জামান বলেন, রাস্তার ওপাশে যাওয়ার জন্য ফুটওভার ব্রিজে উঠবো বলে সিরিয়াল ধরে হাটছি। এটি ভালো উদ্যোগ। তবে পথচারীরা নিজ উদ্যোগে আইন মানলে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব। তার মতে, সড়কে দুর্ঘনটার জন্য অনেক সময় পথচারীদের অসচেতনতা একটি বড় কারণ।
এদিকে, রাজধানীর রামপুরা ও মিরপুরের বেরিবাধসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের সড়কে নামার চেষ্টা করে। তবে কোথাও কোথাও বাধা পেয়ে সরে গেলেও রামপুরা এলাকা শিক্ষার্র্থীদের গাড়ির কাগজপত্র চেক করতে দেখা গেছে। এছাড়া বেড়িবাধ এলাকায় বিজিএমই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর নর্দ্দা এলাকায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে সু-প্রভাত পরিবহনের বেপরোয়া একটি বাসের চাপায় বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহম্মেদ চৌধুরী নিহত হন। তার মৃত্যুর পরে ঘটনাস্থলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে ক্লাসবর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে। আন্দোলনকারীরা ঘাতক চালকের ফাঁসি, সুপ্রভাত পরিবহনের রুট পারমিট বাতিলসহ ৮ দফা দাবি জানায়। বুধবার থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে এ আন্দোলন ও বিক্ষোভ পুরো রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে, একইদিন বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের সাথে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বৈঠক করে ২৮ মার্চ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন। যদিও শিক্ষার্থীদের অন্য একটি অংশ দাবি আদায় না পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে গতকালও নগরীর বিভিন্ন সড়কে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেন।

 



 

Show all comments
  • তুষার আহমেদ ২২ মার্চ, ২০১৯, ২:৪১ এএম says : 0
    পুলিশ ব্যর্থ ও দায়ী। পুলিশ দায়িত্ব পালন করলে অনেকটা সহজ হয়ে যেতো সড়কের বিষয়গুলো। সরকারি উদ্যোগ থাকলেও তা উদাসীন। যেনো কোনো দৈত্য এসে কাজ করে যাবে। সরকার পরিবহণ ও গণযোগাযোগে গুরুত্ব দিচ্ছেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Rahman ২২ মার্চ, ২০১৯, ২:৪২ এএম says : 0
    ইচ্ছা নেই, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ঢাকা শহর একটি অনুপযুক্ত শহর অবাসযোগ্য শহর হিসেবে পরিণত হতো না, সরকার পারেনা এমন কোন কাজ নেই, আমরা দেখেছি সরকার চেয়েছে আবার ক্ষমতায় টিকে থাকতে, সর্বশক্তি নিয়োগ করে আবার ক্ষমতায় এসেছে,, ইচ্ছা করলে এই সরকারকে সুন্দর সুশৃংখল সবকিছু সুন্দর করতে পারতো, আমি মনে করি, শুধু দুর্নীতির কারণে কিছু করতে পারতেছেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Sazzad Hussain ২২ মার্চ, ২০১৯, ২:৪৫ এএম says : 0
    সরকারের আচলের তলেই বহাল তবিয়তে রয়েছে পরিবহনের চামচা গুলা, দালাল গুলা,তেলবাজি করতাসে।। সরকারের কোন ইচ্ছে নাই, তারা পারবেওনা এটাকে কন্ত্রোল করতে।।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrul Islam ২২ মার্চ, ২০১৯, ২:৪৫ এএম says : 0
    পরিবহন সেক্টর থেকে সরকারি দলের নেতারা প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা নেয়, সুতরাং সরকার এ ব্যাপারে কিছুই করবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazim Uddin ২২ মার্চ, ২০১৯, ২:৪৬ এএম says : 0
    সড়ক ও পরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে সরকারকে বাস মালিক, ড্রাইভার এবং শ্রমিক সংগঠনকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে। প্রয়োজনে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস বন্ধ করে সরকারি বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাহলে এদের দৌরাত্ম কমে যাবে!
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ২২ মার্চ, ২০১৯, ৮:৩১ এএম says : 0
    Eai shoroke shob shomoy durghotonar karon holo eak number shajahan khaner netritte poribhon sector syndicate dara porichalito ditioto pulish bahinir chadabaji otcoch ihai mool karon...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ