বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহর ব্যাপারে অনেক জাতি-সম্প্রদায় বিভ্রান্তিতে পতিত রয়েছে যেমনটি পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা তাকে এক ভয়ঙ্কর সম্রাট বিবেচনা করছে যিনি রাগরোষে ভরপুর এবং যাকে রাজি-খুশি করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। যেন তা সাধারণ মানুষের কাজই নয়। যার কাছে পাপী-অপরাধী বান্দাদের জন্য শুধু ভর্ৎসনাই ভর্ৎসনা রয়েছে, রয়েছে গজবই গজব, আজাবই আজাব।
আর যদি তিনি দয়ালু ও করুণাময় থেকেও থাকেন, তবে তার সে দয়া ও করুণা শুধুমাত্র কোনো বিশেষ পরিবার কিংবা বিশেষ বংশ ও সম্প্রদায়ে সীমাবদ্ধ। অবশিষ্ট জগতের জন্য তিনি অত্যন্ত কঠোর, রুদ্র ও ভয়ঙ্কর শাসক।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সম্পর্কিত এসব বিভ্রান্তি-ভ্রষ্টতাই অনেক জাতি-সম্প্রদায়ের শিরকের কারণ হয়েছে। তারা দেখেছে, নিজেদের জীবন পাপমুক্ত নয়। তাছাড়া এ জগতে পুণ্যময় ও পবিত্র জীবন-যাপন করা যেন তাদের সাধ্যেরও বিষয় নয়। নিজেদের মূর্খতার দরুন মনে করেছে, আল্লাহ এমনি কঠোর ও উগ্র প্রকৃতির যে, পাপী-তাপীর প্রতি তিনি আদৌ দয়া-করুণা করতে পারেন না। সুতরাং আল্লাহর ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদের কানে মন্ত্রণা দিয়েছে যে, আল্লাহর সৃষ্টির ভেতরে এমন কিছু কিছু সত্তা রয়েছে, যারা নিজেদের পুণ্য ও পবিত্রতার কারণে আল্লাহর অতি নিকটবর্তী এবং অত্যন্ত প্রিয়। তাদেরকেও আল্লাহ তায়ালা অনেক ক্ষমতা ও অধিকার দিয়ে রেখেছেন। তাদের মধ্যে আল্লাহর মত রুদ্র-রোষও নেই এবং তাদেরকে রাজি করা আল্লাহর মত এত কঠিনও নয়। কাজেই তাদের কাছে তোমাদের মত পাপী-তাপীরাও আশ্রয় পেতে পার। তাছাড়া তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারলেই আল্লাহর আজাব ও গজব থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
বস্তুতঃ একেই তারা সহজ মনে করেছে। আল্লাহর প্রতি নিরাশ হয়ে তারা শয়তানের বাতলানো সেসব সত্তার সম্মান ও ইবাদত করতে শুরু করেছে, তাদের নামেই নজর-নিয়াজ মানতে শুরু করেছে এ আশায় যে, তাদের দয়ায় আমরা সজীব থাকব, তাদের সুদৃষ্টি ও কল্যাণে আমাদের কাজ সম্পন্ন হতে থাকবে এবং আল্লাহর পাকড়াও ও তার আজাব থেকেও তাদের সাথে স্থাপিত এ সম্পর্কের গুণেই আমরা রক্ষা পাব।
মূলত অধিকাংশ মুশরিক সম্প্রদায়ের অবস্থা ও ধ্যান-ধারণা নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে বুঝা যায়, এই গুমরাহীই তাদের শিরকে পতিত হওয়ার মূল কারণ যে, আল্লাহ তায়ালার দয়া, ক্ষমা, করুণা ও দানের গুণকে তারা জানতেই পারেনি। তারা শুধু তাকে রুদ্রতা, পরাক্রম ও অত্যন্ত কঠোরতাসম্পন্ন একজন সম্রাট মনে করে তার প্রতি নিরাশ হয়ে গেছে। শয়তান নির্দেশিত বাস্তব কিংবা কাল্পনিক সত্তাসমূহকে তারা নিজেদের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছে।
তারা যদি আল্লাহর রহমতের সীমাহীন প্রশস্ততা এবং তার ক্ষমা ও মার্জনার মহিমা সম্পর্কে অবহিত থাকত, তাহলে এই শিরকের ফাঁদে কখনও পা দিত না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।