বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
চলমান দুনিয়ার মানুষ ‘মিরাজ’ শব্দটির সাথে কম বেশি সকলেই পরিচিত। বিশেষ করে বিশ্ব মুসলিম মিল্লাতের হৃদয়ের মণিকোঠায় ‘মিরাজ’ নামটি একটি ইতিহাস, একটি আখ্যান ও একটি আলোর মশাল হয়ে অবিরত আলোর বন্যা প্রবাহিত করে চলেছে। যার নৃত্য-চপল ছন্দ ধারায় অনুরণিত হচ্ছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম ‘আস সালাতু, আস সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ’-এর সুর মূর্ছনা।
আরবী ‘মিরাজ’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে- সিঁড়ি, ঊর্ধ্বগমন আরোহণ। আরবী বর্ণমালা আইন, রা, জীম-ধাতু হতে শব্দটির উৎপত্তি। ‘মিরাজ’ শব্দটি একবচন, বহুবচন হলো ‘মায়ারিজ। আর ইসলামী পরিভাষায় হযরত মুহাম্মাদ সা.-এর মক্কার মাসজিদুল হারাম হতে বায়তুল মাকদিসে (জেরুজালেম) উপনীত হওয়া এবং সেখান হতে সপ্তকাশ ভ্রমণ করে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের গভীর সান্নিধ্যে উপস্থিত হওয়ার ঘটনাকে ‘মিরাজ’ বলে। হাদিস শরীফে এই ঘটনার জন্য ‘ফাউরিজা বি ইলাস সামাইদ দুনইয়া’ অর্থাৎ অতঃপর আমাকে নিয়ে নিকটতম আকাশে উঠলেন শব্দাবলী উল্লিখিত হয়েছে। (সহীহ বুখারী : কিতাবুস সালাত)।
লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, আরবী ‘মিরাজ’ শব্দে পাঁচটি বর্ণ রয়েছে। যথা: মীম, আইন, রা, আলিফ ও জীম। এই পাঁচটি বর্ণের মর্ধে চারটি বর্ণ যথা: মীম, আইন, রা এবং জীম একই সমতলে অবস্থিত। কিন্তু আলিফ বর্ণটি উচ্চমানে বা ঊর্ধ্বপানে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই পাঁচটি বর্ণকে আদ্যাক্ষর ধরে পাঁচটি সত্তা বা ব্যক্তিত্বের সন্ধান করলে মিরাজ শব্দের আসল রূপ বা পূর্ণাঙ্গ চিত্র অতি সহজেই অনুধাবন করা যায়। আসুন, এবার সেদিকে লক্ষ্য করা যাক।
ক. ‘আলিফ বর্ণের দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন ‘আল্লাহ।’ আল্লাহ শব্দের আদ্যাক্ষর আলিফ। মোটকথা, আল্লাহই হলেন মিরাজ ঘটনার মূল সংগঠক। কেননা আল কোরআনের সূরা ইসরা বা বাণী ইসরাঈলের ‘আসরা’ শব্দটি একথায়ই সাক্ষ্য বহন করে।
খ. ‘জীম’ বর্ণের দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন হযরত জিব্রিলে আমীন ফিরিশতা। যিনি মিরাজ ঘটনার বৃহদংশের সাথে জড়িত ছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালার মর্জি মোতাবেক মিরাজের সুষ্ঠু সম্পাদনে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
গ. ‘মীম’ বর্ণের দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সা.। তার জন্যই আল্লাহপাক মিরাজের এতসব আয়োজনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সূরা বাণী ইসরাঈলে আল্লাহপাক তাঁকে নাম ধরে ডাকেননি। বরং সম্মান সহকারে ‘বি আবদিহী’ শব্দযোগে সম্বোধন করেছেন। এখানে পরিপূর্ণ আবদিয়াতের সুনির্মল ফুলঝুরির স্বর্ণালী রূপচ্ছটা প্রতিনিয়তই বিকশিত হয়ে চলেছে।
ঘ. ‘আইন’ বর্ণের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আইনান অর্থাৎ স্বশরীরে অথবা ‘বি আইনিহি’ জাগ্রতাবস্থায়। মিরাজের ঘটনার অদ্যোপন্ত সাধিত হয়েছিল বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা.-এর স্বশরীরে উপস্থিতিতে এবং জাগ্রত অবস্থায়। এ ব্যাপারে কষ্ট কল্পনার কোনো প্রয়োজন নেই।
ঙ. ‘রা’ বর্ণের দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন রাসূল বা রাসূলুল্লাহ সা.। যিনি খাতামুন নাবিয়্যিন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, সাইয়্যেদুল মুরসালীন। তিনি প্রকৃতই ছিলেন এবং আছেন রিসালাত ও নাবুওতের সর্বোচ্চ শৈল শিখরে অধিষ্ঠিত এবং আল্লাহপাকের মাহবুব হিসেবে বরিত ও সম্মানীত। তার মর্যাদা ও সম্মানের বাস্তব ঘটনাবলীর সমাহারই হলো মিরাজ।
এই আলোচনার নিরিখে মিরাজের ঘটনার সংজ্ঞা বা পরিচিতির ছক এভাবে আঁকা যায় যে, মহান আল্লাহ শানুহু হযরত জিব্রিলে আমীন ফিরিশতাকে হুকুম করলেন, ‘হে জিব্রাঈল, তুমি আমার মাহবুব হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. কে সশরীরে জান্নাতবস্থায় আমার সন্নিধানে আগমন করার যোগার-যন্ত্র করা, যেন আমি তাকে আমার নির্দেশনাবলী প্রত্যক্ষভাবে দর্শন করার সুযোগ দান করে কৃতার্থ হতে পারি।’ সূরা বাণী ইসরাঈলের ১নং আয়াতের অংশ ‘লিনুরিয়াহু মিন আইয়াতিনা’ এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করছে।
উপরোল্লিখিত নাতিদীর্ঘ আলোচনার সার নির্যাসের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে একথা সহজেই হৃদয়ঙ্গম করা যায় যে ‘মিরাজ’ শব্দটি নিজেই স্বীয় পরিচয়, ব্যাপ্তি, পরিধি ও হাকিকতকে আঁকড়ে ধরে আছে। সুবহানাল্লাহ। এখানে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কুদরত, জ্ঞানবত্তা ও অসীম মহিমার যে প্রাণবন্ত রূপ ফুটে উঠেছে, তর শেষ কোথায়, তা কেবল তিনিই জানেন। কেননা, তিনিই সকল জ্ঞান সংরক্ষণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।