গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
আবরারের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। মেডিকেল কলেজে সুযোগ না পেয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফোশনালসে (বিইউপি) ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ (আইআর) বিভাগে ভর্তি হয়েছিল টগবগে এই তরুণ। আগামী বছর আবারও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।
ছেলের দাফনের সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব বলে মূর্ছা যাচ্ছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আবরারের মা ফরিদা ফাতেমী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিইউপির এডিবি গ্রেড গ্রাউন্ড মাঠে জানাজা শেষে বনানী সামরিক করবস্থানে আবরারকে দাফন করা হয়। এ সময় পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আবরারসহ দুই ছেলে ছিল ফরিদা ফাতেমীর। ‘এ’ এবং ‘ও’ লেভেল পাস করে বিইউপিতে ভর্তি হয় আববার। ছোট ছেলে আবীদ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র।
ছেলেকে শেষ বিদায় দিতে এসে মা ফরিদা ফতেমী বলেন, আমার বাবাকে কখনো একা ছাড়তে চাইতাম না। ও বলতো, আম্মু তুমি যদি আমাকে একা চলাফেরা করতে না দাও, তবে আমি ইন্ডিপেন্ডেন্ট হবো কীভাবে? সবাই আমার বাবাটাকে অনেক পছন্দ করতো। পরিবারের মাথার মুকুট ছিলি তুই। আমাদের একা ফেলে চলে গেলি কিভাবে? আমি কিভাবে তোকে ছাড়া থাকব? তুই একবার ফিরে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে মা বলে ডাক বাবা।
ছেলেকে কবরে শুইয়ে দেয়ার দৃশ্য দেখে আবরারের বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আরিফ আহাম্মেদ চৌধুরী মুষড়ে পড়েন। তিনি বলেন, জীবনে অনেক কষ্টের সময় পার করেছি। ছেলেকে কবরে শুইয়ে দেয়ার মতো কষ্ট আর কিছুর সঙ্গে মিলবে না। জীবনের সকল সফলতা যেন একটি ঘটনায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। আমার বাবাটা আর আমার কাছে আসবে না, কোনদিন আর আমি তার মুখে বাবা ডাক শুনতে পারব না। এই বলে তিনি ডুকরে কেঁদে ওঠেন।
আবরারের ছোট চাচা মাসুদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, আবরার কমিশনার র্যাংকে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীতে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। তার ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীর ডাক্তার হওয়া। এ বছর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় সফল না হওয়ায় আগামী বছর আবারও মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ইচ্ছা ছিল তার। সে ছিল সকলের আদরের পাত্র। বই পড়ার প্রতি তার আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। নিয়মিত নামাজ পড়তো আবরার। সকলে তাকে অনেক পছন্দ করতো।
রাকিব হাসানসহ আবরারের বেশ কয়েকজন সহপাঠী বলেন, মাত্র তিন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকলের মন জয় করে ফেলেছিল আবরার। সে অনেক ভালে ছাত্র হওয়ায় আমরা তাকে সিজিপি-৪ বলে ডাকতাম। কারণ আমরা জানতাম, সে বেস্ট রেজাল্ট করবে। এ কারণে আমরা সকলে তাকে এই নামে ডাকতাম।
তারা আরও বলেন, ক্লাসে স্যারদের কোনো প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই তার মুখে উত্তর চলে আসতো। মনে হতো পাঠ্যবইয়ের সকল কিছু তার পড়া হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছেলে হয়েও তার কোনো অহঙ্কার ছিল না। বইয়ের কোনো পড়া নিয়ে সমস্যা হলে যে কোন সময় তাকে নক করলে সহজভাবে সমাধান করে দিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। সহপাঠী, সিনিয়র ও স্যাররা তাকে অনেক ভালোবাসতো।
কবরস্থানে আবরারকে চিরশায়িত করতে উপস্থিত হয়েছিল তার স্কুল জীবনের বন্ধুরাও। তারা জানায়, বসুন্ধরার প্রে-পেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকেকে আবরার ‘এ’ এবং ‘ও’ লেভেল পাশ করে। দুটি পরীক্ষায় সে সর্বোচ্চ ফল অর্জন করে। তারা বর্তমানে একসঙ্গে পড়ালেখা না করলেও স্কুল ও কলেজ জীবনের বন্ধুদের মধ্যে আগের মতোই সুসম্পর্ক ছিল। তারা বলে, ইতিহাস ও রাজনীতি নিয়ে আবরারের অনেক কৌতুহল ছিল। এ সংক্রান্ত বই অনেক পড়তো সে। দেশ-বিদেশের খবর রাখতো। বিভিন্ন বই পড়ে আমাদের সঙ্গে তা শেয়ারও করতো। সে ছিল অনেক চুপচাপ ও শান্ত স্বভাবের। কখনও কারো সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখিনি। সকলেই তাকে ভালোবাসতো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।