বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিশ্বাস, আমল, চরিত্র, আচার-আচরণ ও লেন-দেন প্রভৃতি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোরআন মাজীদ যে সমস্ত হেদায়াত ও দিকনির্দেশনা দিয়েছে (বিগত আলোচনাগুলোতে সে সম্পর্কে অনেকটা সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে)। কোনো সুষ্ঠু বিবেকবান লোক সেগুলো সত্য ও ন্যায়ের হেদায়াত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে পারে না।
কোরআন মাজীদ এসব হেদায়াত নির্দেশনা মোতাবেক আমল করার দাবির সাথে সাথে নিজের অনুসারীদের প্রতি এ দাবিও করে, যেন তারা সত্য ও সৎকর্মকে অন্যদের মধ্যেও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করার চেষ্টা করে। অর্থাৎ তারা এ প্রয়াস চালাবে, যাতে আল্লাহতায়ালার বেশির চেয়ে বেশি বান্দা সত্য ও সৎকর্মের পথ অবলম্বন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি, রহমত ও আখেরাতে জান্নাতের অধিকারী হতে পারে। অবস্থা ও পরিস্থিতি-পরিবেশ ভেদে এ প্রয়াস-প্রচেষ্টার রূপ এবং এর স্তর বিভিন্ন হতে পারে। কল্যাণের প্রতি দাওয়াত বা আহ্বান, সৎকর্মের নির্দেশ, অসৎকর্ম থেকে বারণ, আল্লাহর পথে জেহাদ প্রভৃতি তারই বিভিন্ন শিরোনামস্বরূপ। এ প্রসঙ্গে আমি অন্য নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখানে এতটুকু বলাই আমার উদ্দেশ্য যে, এই দাওয়াত ও হেদায়াতের ব্যাপারে কোরআনের দাবি কি? সুতরাং এখানে এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি আয়াত উদ্ধৃত করা হলো।
সূরা আল ইমরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের এমন একটি উম্মত (দল) থাকা অপরিহার্য যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান (দাওয়াত) জানাবে, সৎকর্মের জন্য মানুষকে বলবে এবং মন্দ কর্ম থেকে বারণ করবে। বস্তুত যারা এ কাজ করবে তারাই সফলকাম হবে।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১০৪)।
এ আয়াতে ‘মিনকুম’ (তোমাদের মধ্য থেকে) শব্দের দরুন মানুষের সন্দেহ হয়ে যায় যে, এ কাজের দাবি বুঝি কোরআনের অনুসারী সমগ্র উম্মতের নিকট করা হয়নি; বরং কোনো বিশেষ শ্রেণীর দায়-দায়িত্ব। কিন্তু লক্ষ্য করলে এ আয়াতেরই শেষ বাক্য ‘ওয়া উলাইকা হুমুল মুফলিহুন’-এর দ্বারা এ বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে যায়। কারণ, এতে প্রতীয়মান হয়, কল্যাণ ও সৌভাগ্য লাভের অধিকারী শুধু সেসমস্ত লোকেরাই হবে, যারা এ কাজটি সম্পাদন করবে।
পক্ষান্তরে যে কাজের ওপর কল্যাণ ও সৌভাগ্য নির্ভরশীল, তার দাবি যে শুধু একটি বিশেষ শ্রেণীর প্রতি করা যায় না, সে কথা বলাই বাহুল্য। বরং গোটা উম্মতের প্রতিই এ দাওয়াত দেওয়া উচিত। এছাড়া এই আয়াতের চার-পাঁচ আয়াত পরেই কোরআন তার এ দাবির পুনরাবৃত্তি করেছে। তার শব্দাবলি এ ধরনের, ‘হে মুহাম্মাদ সা.-এর অনুসারীবৃন্দ, তোমরা হলে সমস্ত উম্মতের মধ্যে উৎকৃষ্টতর উম্মত, যাদেরকে মানুষের (সংশোধন ও হেদায়াতের) জন্য আবির্ভূত করা হয়েছে। তোমাদের কাজ হলো সৎকর্মের নির্দেশদান আর মন্দ কর্ম থেকে বারণ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখা।’ (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১১০)।
এ আয়াতে এই উম্মতের অস্তিত্বের ও আবির্ভাবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই তুলে ধরা হয়েছে যে, এক আল্লাহর ওপর ঈমান স্থাপনের সাথে সাথে ‘আমর বিল মা’রূফ’ (সৎকর্মের নির্দেশ দান), নাহি আনিল মুনকার’ (অসৎ কর্ম থেকে বারণ) এবং মানুষের সংশোধন ও হেদায়াতের কাজটিও সম্পাদন করতে হবে।
মোটকথা, এ আয়াতের দ্বারাও এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, উম্মতের কোনো বিশেষ শ্রেণী এ কাজের জন্য দায়ী নয়; বরং সমগ্র উম্মতের কাছেই এ দাবি। তবে এ কাজটির বিশেষ প্রকৃতি এমন যে, অধিকাংশ পরিস্থিতিতে উম্মতের প্রত্যেকটি লোকের জন্য তাতে আত্মনিয়োগ করা অপরিহার্য হয় না। বরং তার যোগ্যতা ও সামর্থ্যরে অধিকারী ব্যক্তিবর্গ যদি প্রয়োজনানুপাতে তাতে নিয়োজিত থাকে এবং অন্যদের সহযোগিতা তাদের সাথে থাকে তাতেও কাজটি সম্পন্ন হতে থাকে। আমার ধারণা, সম্ভবত এদিকে ইঙ্গিত করার উদ্দেশেই প্রথমোক্ত আয়াতে ‘মিনকুম’ (তোমাদের মধ্য হতে) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। তবে আল্লাহই ভালো জানেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।