বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানবদেহ মূলত পানি দিয়ে গঠিত। এর অন্তত ৭০ শতাংশই পানি। নানাভাবে দেহ থেকে পানি বের হয়ে যায়। সে কারণে পানির ঘাটতি পূরণের জন্য দিনে-রাতে কয়েক লিটার (অন্তত ৮ গ্লাস) পানি পান করার প্রয়োজন বলে মনে করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
শুধু ঘাটতি পূরণের জন্যই নয়, পানিতে রয়েছে খনিজসহ পুষ্টি, যা দেহের জন্য খুবই দরকার। দ্বিতীয়ত, দেহের মধ্যে জমা হওয়া বিভিন্ন বর্জ্য পানি বের করে দেয়। পানি পান করলেই হবে না, পানি যেন বিশুদ্ধ হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। পানির অপর নাম জীবন, একথা যেমন সত্য, তেমনি পানি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, মানবদেহের ৭৫ শতাংশ রোগ-ব্যাধির কারণ অবিশুদ্ধ পানি। কাজেই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। আমাদের দেশে বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। জার বা বোতলজাত পানিকে বিশুদ্ধ বলে মনে করা হয়। অথচ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, এসব পানিরও অধিকাংশই বিশুদ্ধ নয়।
আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষ পানিজনিত ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এতে শারীরিক বিপর্যয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ জন্য বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা বিধান করা কেবল জরুরিই নয়, অপরিহার্যও বটে। পানি বিশুদ্ধ করার নানা উপায় ও পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো অবলম্বন করলে বিশুদ্ধ পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত হতে পারে। এ ব্যাপারে প্রত্যেকের যথাযথ সচেতনতা প্রয়োজন।
পানি কিভাবে পান করতে হবে, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায়, অনেকেই বাইরে থেকে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে এসে ঘরে ঢুকেই পানি পান করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বসারও প্রয়োজন বোধ করেন না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পান করেন। এটা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে বিপত্তি যেমন ঘটতে পারে তেমনি এভাবে পানি পান করলে পুষ্টিও সম্পূর্ণভাবে পাওয়া যায় না। এতে ক্ষতির পাশাপাশি মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
দাঁড়িয়ে পানি পান করলে পানি সরাসরি পাকস্থলিতে চলে যায়। দেহের অন্যান্য অংশে যেতে পারে না। ফলে ভারসাম্যপূর্ণ পুষ্টি থেকে দেহ বঞ্চিত থেকে যায়। সবচেয়ে বড় কথা, পানি সব অঙ্গে যেতে না পারায় সেই সব অঙ্গে জমা হওয়া বর্জ্য বের হতে পারে না, যা পরে সমস্যা সৃষ্টি করে। এ জন্য পানি বসে ধিরস্থিরভাবে পান করা উচিত। মানবদেহ এমনভাবে তৈরি, যাতে বসে ও পিঠ সোজা করে পানি পান করলে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসুবিধা ও কল্যাণ পাওয়া যায়।
বিস্ময়কর এই যে, মহানবী সা. ১৫শ’ বছর আগে পানি পান করার দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। মানবদেহে পানির গুরুত্ব কতটা তাও তিনি বলে গেছেন। একটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, মানুষের জন্য তার মেরুদন্ড সোজা (শক্ত) করে রাখার জন্য যতটুকু খাদ্য (কয়েক গ্রাস) প্রয়োজন ততটুকু খাওয়াই যথেষ্ট।
অধিক যদি খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক-তৃতীয়াংশ পানি এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য হওয়াই উচিত। বলা বাহুল্য মহানবী সা. এই হাদিসের মাধ্যমে খাদ্যগ্রহণ বিধিই মূলত বর্ণনা করেছেন এবং তাতে পানির গুরুত্বটাও উঠে এসেছে। পানির অন্য একটি উপকারের কথা তিনি অন্য একটি হাদিসে বলেছেন।
একালের চিকিৎসকরা জ্বর হলে ঠান্ডা পানি বা বরফ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মহানবী সা. অনেক আগেই এ বিধানটি দিয়েছেন। জ্বর ও তার উপশমের বিষয়ে তিনি বলেছেন, জ্বর জাহান্নামের উত্তাপের অংশবিশেষ। সুতরাং ঠান্ডা পানি দিয়ে দূর করো।
রাসুলুল্লাহ সা.-এর নির্দেশিত পানিপানের বিধান হলো : ১. বসে পান করা। ২. পানির পেয়ালা ডান হাতে নিয়ে পান করা। ৩. কমপক্ষে তিন শ্বাসে পান করা। ৪. পানি পানে কোনো সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহার না করা। ৫. মাটির মাত্র যদি এমন হয়, যার ভেতরটা নজরে না আসে, তবে সেটার মুখে মুখ লাগিয়ে পান না করা (কারণ, তাতে বিষাক্ত ও অখাদ্য কিছু থাকতে পারে)। ৬. বিসমিল্লাহ বলে পান করা এবং পান করে আলহামদুলিল্লাহ বলা।
মহানবী সা.-এর পানিপান বিধি অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিপূর্ণ কল্যাণদায়ী। আমরা তার পানিপান বিধি অনুসরণ করলে সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক কল্যাণের অধিকারী হতে পারব। রাসুল সা.-এর এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত পালনের তাওফিক আল্লাহ আমাদের সবাইকে দান করুন, এই কামনা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।