পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৯০’র ডাকসু নির্বাচনে ১৮৮টি পদের মধ্যে ১৫১টিতে জয়ী হয়েছিল ছাত্রদলের নেতারা। তাদের নেতৃত্বেই পতন হয়েছিল এরশাদ সরকারের। ২৮ বছর পর সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনে ২৫৯টি পদের একটিতে জিততে পারেনি আমান (সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান)-খোকনদের (সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন) উত্তরসূরিরা। শুধু পরাজয়ই নয়, শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছেন ছাত্রদলের প্রার্থীরা। বয়স ও ছাত্রত্বের প্রতিবন্ধকতায় শিক্ষার্থীর কাছে পরিচিত প্রার্থী দিতেই হিমশিম খেতে হয়েছে সংগঠনটিকে। অপরিচিত মুখ হওয়ার কারণে ডাকসুর সম্পাদকীয় পদের একটিতে ছাড়া আর কোন পদে হাজারের ওপরে ভোটই পাননি কোন প্রার্থী। ডাকসু নির্বাচনে সরকারদলীয়দের এমন সাফল্যের কারণে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সেসব নির্বাচনেও অংশগ্রহণের চিন্তা করছে ছাত্রদল। আর তাদের সামনে ডাকসুর সেই চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, পর্যায়ক্রমে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। ডাকসুর মতো বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নির্বাচন হোক। আর গত বৃহস্পতিবার তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করে বলেন, শিগগিরই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব বুঝতে পেরে ইতোমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের জন্য এরই মধ্যে গঠনতন্ত্র সংশোধনী ও আচরণবিধি সংশোধনী কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটিতে প্রস্তাবনা ও সুপারিশ প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনকে চিঠিও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর তথ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলেছে বলে জানা গেছে।
সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রস্তুতির সাথে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনও নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করছে। কিন্তু বিপরীতে ডাকসুর মতো অন্যান্য ক্যাম্পাসগুলোতেও অপ্রস্তুত ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নির্ধারণ করা সম্ভাব্য বয়সসীমা ৩০ বছর অতিক্রম করা, ছাত্রত্ব না থাকা, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসগুলোতে যেতে না পারা, শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ ঘাটতি, তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা না বলাসহ নানা কারণেই দুশ্চিন্তায় রয়েছে নেতারা। এমনকি ডাকসুর মতো অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও প্রার্থী সঙ্কটের বিষয়টি ভাবাচ্ছে বিএনপিকেও। তাই ছাত্রদলের কমিটি গঠন, সংগঠন পরিচালনাসহ নানা বিষয়ে সরাসরিই সমালোচনা করছেন অনেক নেতা। বছরের পর বছর পদ ধরে রাখা, কমিটি না হওয়া, ছাত্রত্ব থাকাবস্থায় কমিটিতে পদ না পাওয়া নিয়ে কথা বলছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই।
সংগঠনটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ডাকসু নির্বাচনে তারা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন রাকসু, চাকসুসহ সব ছাত্র সংসদ নির্বাচনেই একই পরিস্থিতিতে তাদের পরতে হবে। নিয়মিত কমিটি না হওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেধে দেয়া বয়সসীমা অতিক্রম করা, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান না থাকার কারণে সেগুলোতেও খারাপ ফল করবে ছাত্রদল।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন সহ-সম্পাদক বলেন, ২৪ বছর বয়সে ডাকসুর ভিপি হয়েছেন নুরুল হক নুর। আর এই একই বয়সের একজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রদলের কর্মী হিসেবেও গণ্য করা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পদ পেতে পেতে একজনের বয়স ৩০ অতিক্রম হয়ে যায়। তিনি বলেন, শীর্ষ নেতাদের প্রটোকলের রাজনীতি বাদ দিয়ে যদি যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে প্রকৃত ছাত্র রাজনীতি শুরু হয় তাহলে ছাত্রদল থেকেই হাজার হাজার নুর তৈরি হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য বলেন, এক কমিটি দিয়ে বছরের পর বছর পার আর যোগ্যতার মূল্যায়ন না করে যদি কমিটি বাণিজ্য হয় তাহলে ছাত্রদলে আর কখনো আমান-খোকন তৈরি হবে না।
ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছাত্রদলের একই অবস্থা। কোথাও নেতাকর্মীরা হলে থাকতে পারছে না। ক্লাস-পরীক্ষা দিতে হলেই হামলার শিকার হচ্ছে। আর ক্যাম্পাসগুলো ছাত্রলীগের দখলে। এই অবস্থায় ছাত্রদলের জন্য বিজয়ী হওয়া অসম্ভব। এছাড়া দীর্ঘদিন পর পর কমিটি গঠন, ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়া, বয়স বেশি হওয়ার কারণে পরিচিত কাউকে প্রার্থীও করা সম্ভব হবে না। ফলে অপরিচিত একজন প্রার্থী হঠাৎ এসে প্রভাব বিস্তার করা, পরিচিত হওয়া, আলোচনায় আসার কোন সুযোগ থাকে না। সংগঠনটির নেতারা মনে করেন, যাদের মধ্যে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্যতা আছে তাদেরকে যদি আগে থেকেই টার্গেট করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা যায় তাহলেই কেবল ছাত্রদলের পক্ষে ভাল ফল করা সম্ভব হবে।
কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সম্পাদক বলেন, ডাকসুতে কেমন নির্বাচন হয়েছে সবাই জানে। তারপরও আমাদের অর্জন মনে করছি, দীর্ঘদিন পর আমরা ক্যাম্পাসে যেতে পারছি। মধুর ক্যান্টিনে বসছি। মিছিল করেছি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও ভালো ফল হবে।
কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকা, তাদের স্বার্থে কথা না বলা, অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব, নির্বাচনে প্রস্তুতির অভাব, সংগঠনে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্কট এবং ক্যাম্পাসে কোনো কার্যক্রম না থাকার ফলে ডাকসুর মতো অন্য ক্যাম্পাসগুলোতেও লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে ছাত্রদলকে।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে ছাত্রদল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে। তবে ডাকসু মডেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে একই রকম ফলাফল হবে। নিয়মিত ছাত্র না থাকায় প্রার্থী সঙ্কট হবে কিনা জানতে চাইলে ইমতিয়াজ আহমেদ এর কোন জবাব দেননি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কিছু নেতার ছাত্রত্ব না থাকলেও হল কমিটিগুলো নিয়মিত ছাত্র দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। একারণে হলে প্রার্থী সঙ্কট হবে না। আর যাদের বয়স আছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে ভর্তি হচ্ছেন। তবে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নেই। আমাদের নেতাকর্মীরা হলে থাকতে পারে না, ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। হলগুলো বহিরাগতদের দখলে, ক্যাম্পাসে ছিনতাই, চুরিও নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তাই নির্বাচনের আগে অবশ্যই এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং ব্যর্থতার কারণে প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ছাত্রসংসদ নির্বাচনের জন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। তবে ডাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই একই অবস্থা। কোথাও কোন সহাবস্থান নেই। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কোন ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে ভোট কেন্দ্র অবশ্যই হলের বাইরে করতে হবে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালটের সিরিয়াল নাম্বার, সকল ছাত্রসংগঠনের সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। নাহলে ডাকসুর মতো অন্যান্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।