বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহানবী সা.-এর আমলে ইহুদি ধর্মীয় পুরোহিতদের একটি শ্রেণী ছিল। তারা আসমানি কিতাবসমূহের (তাওরাত প্রভৃতি) সেসব বক্তব্য সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত ছিল, যা দ্বারা রাসূলুল্লাহ সা.-এর নবুওয়াত ও রেসালাত এবং তার আনীত দ্বীন ও শরীয়তের সত্যতা প্রমাণিত হতো।
কিন্তু তারা নিজেদের সাধারণ লোকদের সামনে সেসব সত্য প্রকাশ করত না; বরং বিকৃতি ও অপব্যাখ্যার আবরণে সেগুলোকে লুকানোর চেষ্টা করত, যাতে নিরীহ জনগণ এমনিভাবে তাদের ফাঁদে আটকে থাকে। নজর-নিয়াজ ও ভেট-উপঢৌকনে যেন ভাটা পড়তে না পারে। কোরআন মাজীদের সূরা বাকারায় সেসব লোকের প্রতি কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা যেসব কিতাব নাজিল করেছেন, যারা সেগুলোর বিষয়বস্তুকে মানুষের কাছে গোপন করে এবং সত্য গোপনের মাধ্যমে সামান্য পয়সা (ভেট-উপঢৌকন) অর্জন করে নেয়, নিঃসন্দেহে তারা শুধু আগুনের দ্বারা নিজেদের পেট ভরছে। (ওরা মানুষকে প্রতারণা করার জন্য এখানে খোদাভক্ত ও আল্লাহওয়ালা সেজেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে কথাটি পর্যন্ত বলবেন না। তাদেরকে (ক্ষমা করে) পাপমুক্ত করবেন না। তাদের জন্য সেখানে রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৭৪)।
কোরআন মাজীদ এক দিকে উপার্জনের অবৈধ পন্থাসমূহ ও হারাম খাদ্যখাবারকে নিষিদ্ধ সাব্যস্ত করেছে এবং সেজন্য কঠোর ভর্ৎসনাবাণী উচ্চারণ করেছে, অপর দিকে এ ব্যাপারেও উৎসাহ দান করেছে যে, আল্লাহ তায়ালা যেসব বস্তুসামগ্রী এবং যেসব উপার্জনকে হালাল বা বৈধ সাব্যস্ত করেছেন (যার পরিধি অতি ব্যাপক), সেগুলোকে আল্লাহর নিয়ামত মনে করে তার হুকুম মোতাবেক স্বাধীনভাবে ব্যবহার করবে এবং শুকরিয়া আদায় করবে। খামাখা নিজেকে কষ্ট ও সঙ্কীর্ণতায় ফেলবে না।
সূরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, আমি যেসব পাক-পবিত্র বস্তুসামগ্রী তোমাদেরকে দান করেছি, সেগুলো নিঃসঙ্কোচে ভক্ষণ করো এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো; যদি তোমরা শুধু তারই উপাসনাকারী হয়ে থাকো (তাহলে তোমাদের কর্মপন্থা এই-ই হওয়া উচিত)।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৭২)।
তেমনিভাবে সূরা নাহলে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী দান করেছেন, সেগুলোকে নির্দ্বিধায় ভক্ষণ (বা ভোগ) করো এবং আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করো, যদি তোমরা একমাত্র তারই এবাদতকারী হয়ে থাকো, তাহলে তোমাদের এমনই করা উচিত।’ (সূরা নাহল : আয়াত ১১৪)।
আর সূরা মায়েদায় ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ তায়ালা যেসব পূত-পবিত্র বস্তুসামগ্রী তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, সেগুলোকে তোমরা নিজেরা নিজেদের জন্য হারাম করো না এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করো না। যারা এমন করে, আল্লাহ তাদেরকে অত্যন্ত নাপছন্দ করেন।
আর আল্লাহ যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী তোমাদেরকে দান করেছেন, সেগুলোকে নিঃসঙ্কোচে ভোগ-ভক্ষণ করো এবং যে আল্লাহর ওপর তোমাদের ঈমান রয়েছে তাকে ভয় করো। (তার সীমা ও নির্দেশাবলি মেনে চলো।)’ (সূরা মায়েদাহ : আয়াত ৮৭-৮৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।