Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপকুলে অশান্ত মৌসুম শুরু ডেঞ্জার জোনে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনে নৌযান সংকট

বিআইডব্লিউটসি’র ১৪টি সী-ট্রাকের চলছে ৩টি

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৯, ৭:২২ পিএম

অশান্ত মৌসুম শুরু হলেও দেশের উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ যাত্রী পরিবহনে নৌযানের দেখা নেই। সরকারী অর্থে বিআইডব্লিুউটিসি’র জন্য বিভিন্ন সময়ে সংগ্রহ করা ১৪টি সী-ট্রাকের মাত্র ৩টি ইজারাদারের মাধ্যমে চলাচল করছে। ১১টিই অলস পড়ে আছে। যার বেশীরভাগই বছরের পর বছর ধরে বিকল। অথচ বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশে সরকার দেশের উপকূলীয় নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ‘গন দায়বদ্ধ পরিবহন খাত’ বলে ঘোষণা করেছে। এমনকি উপকূলীয় নৌ-পথে নিরাপদ যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করনের লক্ষেই সরকার প্রতিবছর সংস্থাটিকে ৫০ লাখ টাকার ‘নগদ ভর্তুকি’ও প্রদান করে আসছে। কিন্তু ইজারাদারের ইচ্ছার বাইরে এখন আর উপকুলের কোন রুটে নিরাপদ সীÑট্রাক সার্ভিস পরিচালিত হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে ।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তনুযায়ী প্রতিবছর ১৬ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালকে ‘অশান্ত মৌসুম’ ঘোষণা করে ভোলার ইলিশা ঘাট-এর দক্ষিনে ভাটি মেঘনা অংশ সহ গোটা উপকুলীয় এলাকাকে ‘ডেঞ্জার জোন’ বলে চিহিৃত করা হয়েছে। এসময়কালে ডেঞ্জার জোনে ‘নৌ অধিদপ্তর অনুমোদিত উপকুলীয় নৌ-পথ অতিক্রমকারী’ নৌযান ছাড়া অন্য কোন যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু বেসরকারী খাতে উপকুলীয় এলাকায় সারা বছর চলাচল উপযোগী যাত্রীবাহী নৌযানের সংখ্যা খুবই নগন্য। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই উপকুলবাসীর নিরাপদ নৌ-যোগাযোগ নিশ্চিত করা লক্ষ্যে সরকার ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিআইডব্লিউটিসি’কে ১২টি নতুন সী-ট্রাক সংগ্রহে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এছাড়াও সংস্থাটি তার নিজস্ব অর্থে ‘এসটি রূপালী’ নামের অপর একটি সীÑট্রাকের পূণর্বাসন কাজও সম্পন্ন করে। উপরন্তু ‘এসটি মিতালী’ নামের আরো একটি পুরনো সী-ট্রাক সংস্থাটির হাতে রয়েছে।

কিন্তু এসব সী-ট্রাকের প্রায় সবগুলোই দীর্ঘদিন বন্ধ। শুধুমাত্র ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষীপুরের মজু চৌধুরীর হাট পর্যন্ত ‘এসটি খিজিরÑ৬’ ও ‘এসটি খিজির-৭’ নামের দুটি নৌযান এবং ‘এসটি শেখ ফজলুল হক মনি’ নোয়াখালীর হাতিয়াÑবয়ারচর রুটে ইজারাদারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
অপরদিকে ‘এসটি মিতালী’ ২০০৩ সালের ২মার্চ থেকে, ‘এসটি রূপালী’ ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টম্বর থেকে এবং ‘এসটি খিজিরÑ৬’ ২০১২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে নারায়নগঞ্জের বাংলাঘাটে পড়ে আছে। এছাড়া ‘এসটি শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল’ ২০১২ সাল থেকে সংস্থাটির বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে রয়েছে মেরামতের নামে। ‘এসটি সুকান্ত বাবু’ নৌযানটি ২০১৭-এর ১৪ এপ্রিল থেকে কক্সবাজারে ইজারাদারের কাছে রয়েছে। ইতাপূর্বে বরিশালÑলক্ষ্মীপুর রুটে চলাচলকারী ‘এসটি খিজির-৮’ বছরখানেক ধরে সংস্থার দুই নম্বর ডকইয়ার্ডে কথিত মেরামতে। ‘এসটি ভাষা শহিদ ছালাম ও এসটি ভাষা শহিদ জব্বার’ যথাক্রমে ২০১৭ সালের আগষ্ট ও ’১৮ সালের অক্টোবর থেকে চট্টগ্রামে পড়ে আছে।

এসব সী-ট্রাকের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি টাকায় ২০০০ সালে ‘এসটি শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল ও এসটি সুকান্ত বাবু’ নির্মিত হয়। এছাড়াও চীনা ক্রেডিট লাইনের আওতায় ২০০২ সালে ‘এসটি খিজির-৫, এসটি খিজির-৬, এসটি খিজির-৭ ও এসটি খিজির-৮’ সংগ্রহ করা হয়। একইভাবে সরকারী অর্থে ২০০৮ সালে দেশে নির্মিত হয় ‘এসটি শহিদ শেখ ফজলুল হক মনি, এসটি শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত, এসটি ভাষা শহিদ জব্বার ও এসটি ভাষা শহিদ ছালাম’।

এদিকে ২০০২ সালের জুন মাসে বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট রুটে সী-ট্রাক সার্ভিস চালু করার বছর কয়েকের মধ্যেই বিআইডিব্লিউটিসি তা ইজারা প্রদান করায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। ইজারাদার তার খেয়াল খুশিমত এ রুটের পরিবর্তে সী-ট্রাকটি অন্য রুটে পরিচালনা করে। বছরখানেক ধরে সে সী-ট্রাকটিও মেরামতের নামে সংস্থাটির ডক ইয়ার্ডে রয়েছে। অপরদিকে বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপুরের ঐ রুটে বেসরকারী দুটি নৌযান চালাচলের অনুমতি থাকলেও তা বিঘিœত হচ্ছে নৌ-পথে নাব্যতা সংকটে। বরিশালের পাতার হাট এবং লক্ষ্মীপুরের রহমতখালী চ্যানেল-এর মেঘনা মোহনায় গভীরতা কম থাকায় ভাটার সময় ফেরি সহ সব ধরনের নৌযান চলাচলই বন্ধ থাকছে। ফলে যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা নৌযানগুলোকে চ্যানেলটির মুখে আটকে থাকতে হচ্ছে।

এসব বিষয়ে গতকাল বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে, ‘অশান্ত মৌসুমে নৌ অধিদপ্তরের অনুমোদন বিহীন কোন নৌযানের উপকুলের ডেঞ্জার জোনে চলাচলের সুযোগ নেই’। সে ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিসি’র সী-ট্রাক চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন টিএ’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগন। অপরদিকে বিআইডব্লিউটিসি’র যাত্রী পরিবহন ইউনিটের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, উপকুলীয় এলাকায় যাত্রী পরিবহন খাতে বিপুল লোকসান হয় বিধায় কিছু রুটে সীÑট্রাক ইজারাদারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বরিশালÑলক্ষ্মীপুর রুটে যত দ্রুত সম্ভব একটি সীÑট্রাক চালুর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ