নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এতক্ষণে শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট। সফরের শেষ ম্যাচটি জয়ের ছক কষছিলো বাংলাদেশ দল। আগের দিন সকাল থেকেই ছিলেন কঠোর অনুশীলনে। তাদের মাঝে সামিল মুশফিকুর রহিমও। চোট কাটিয়ে তার দলে ফেরা এক প্রকার নিশ্চিতই ছিল। আর তাতেই নিউজিল্যান্ডকে হারানোর স্বপ্ন দেখছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অনুশীলন শেষে অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলন। আর তার পরই শুক্রবার জুম্মার নামাজটি জামাতে আদায় করার ইচ্ছায় হ্যাগলি ওভালের পাশেই নূর মসজিদের পথে বাংলাদেশ টিম বাস। যে বাসে দু’জন বাদে ছিলেন সকল ক্রিকেটার, ম্যানেজারও। মসজিদ থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে থাকতেই শান্ত নিউজিল্যান্ড হঠাৎ অশান্ত মুহুর্মুহু গুলির শব্দে! কিছু বুঝে ওঠার আগেই মসজিদ থেকে শোনা গেল আর্ত চিৎকার, আতঙ্কভরা চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকলো রক্তাক্ত মুসল্লির ঢল। নামাজরত অবস্থায় নিরীহ মুসলমানদের উপর অতর্কিত সশস্ত্র হামলা চালায় সেনাবাহিনীর পোষাক পরা দুই আততায়ী। আর সেই হামলায় ঘটনাস্থলেই প্রান হারায় প্রায় ৯ জন মুসল্লি। আর ৩-৪ মিনিট আগে সেখানে পৌঁছালে কি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভাগ্যে সেই দু:স্বপ্নও দেখতে চায় না কেউ। একটু জন্য বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন তামিম-মুশফিকরা।
গতকালের দুঃসহ সেই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা জানালেন খালেদ মাসুদ পাইলট, ‘দুপুর তখন ১টা ৪০ মিনিট। নামাজের জন্য মসজিদের সামনে চলে এসেছি। সামনে বলতে ৫০ গজের মত আর বাকি আছে। আমরা বাসে অনেকজন ছিলাম। কমপক্ষে ষোলো সতের জনের মতো। এর মধ্যে সৌম্য সরকারও ছিল। আমরা সবাই নামাজ পড়তে যাচ্ছিলাম। দুইজন খেলোয়াড় হোটেলে ছিল। বাকী সবাই ছিলাম। আমরা খুবই কাছে ছিলাম। আমরা মসজিদ বাস থেকে দেখছিলাম। বলবো খুবই ভাগ্যবান। আর যদি তিন চার মিনিট আগেই চলে আসতাম তাহলে মসজিদের মধ্যে থাকতাম। তাহলে বিশাল বড় একটা ঘটনা ঘটে যেত।’
ঘটনা বর্ননার সময়েও আতঙ্ক কাটেনি বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারের। অস্বাভাবীক ভঙ্গিতেই বলতে থাকেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে আমরা ভিতরে ছিলাম না। বাইরে থেকে দেখেছি। আমরা ভিডিওর মতো দেখেছি। সিনেমার মধ্যে দেখলে যেমন দেখায় বাসের ভিতর বসে দেখেছি যে মানুষজন রক্তাক্ত অবস্থায় বেরিয়ে আসছে। বেশ কিছু মানুষ বেরিয়ে আসতে পেরেছে। প্রায় আট দশ মিনিট বাসের মধ্যে মাথা নিচু করে ছিলাম। কোনো কারণে যদি গুলি এদিকেও ছুড়তে থাকে। যদি তারা বের হয়ে বাসের ভিতর এতো মানুষ দেখে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে এই ভেবে তখন সব খেলোয়াড়রা আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে মাঝের যে পেছনের দিকের গেট আছে সেটা দিয়ে চলে যাব। তারপর আমরা পার্ক দিয়ে পেছন দিয়ে চলে গিয়েছি।’
সামরিক বাহিনীর পোশাক পরে এসে এক ব্যক্তি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে আল নূর মসজিদে মুসল্লিদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় পুরো দলই আতঙ্কিত। দলের অবস্থার কথাও জানালেন ম্যানেজার, ‘আপনি ধরেন সামনে থেকে দেখেছেন সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে একেবারে জীবন্ত দেখেছেন রক্তাক্ত অবস্থায় মানুষ বেরিয়ে আসছে। সব মানুষেরই তখন ভেঙে পড়ার কথা। নিজের গায়ে যে তখন এটা আসবে না, এমনটা কেউ জানত না। আমার মনে হয় খেলোয়াড়দের অনেকেই কান্নাকাটি করেছে, অনেকে কি করতে পারে, কি করলে কি হবে, কীভাবে বেরিয়ে আসতে পারে, এসব আলোচনা চলেছে। আমার মনে হয় এটা খুবই কঠিন। (এসব ঘটনা) প্রত্যেককে মানসিকভাবে আঘাত করে মনে হয়। এই মুহূর্তে আমাদের খেলোয়াড়রা সবাই হোটেলে আছে। আমি ম্যানেজার হিসেবে চেষ্টা করেছি সবাই হোটেলে নিয়ে আসার। এখানে মিটিংয়ে নিয়ে এসেছিলাম এবং যারা যায়নি হোটেলে ছিল বেশ কিছু স্টাফও ছিলেন।’
মসজিদে ন্যাক্কারজনক এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বাতিল হয়েছে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।