Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভালো ফলনে লাভবান হচ্ছে কৃষক দামুড়হুদায় বাড়ছে উচ্চ ফলনশীল জাতের তিলের আবাদ

প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে
দামুড়হুদায় তৈল জাতীয় ফসল তিলের আবাদ বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে এ ফসলের আবাদ বেড়েছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের তিলের আবাদ করে ভাল ফলন পেয়ে লাভবান হয়ে চাষিরা আবারও তিল চাষের দিকে ঝুঁকছে। জানা যায়, দামুড়হুদায় এক সময় এলাকার ভোজ্য তেলের অভাব মেটাতে উপজেলাসহ পার্শবর্তী এলাকায় তৈল জাতীয় ফসল সরিষা, তিষির সাথে ব্যাপকহারে তিল চাষ হতো। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ভোজ্য তেল হিসেবে বিদেশ থেকে পামঅয়েল ও সয়াবিন তেল আমদানি শুরু হয়। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ও সহজে ভোজ্য তেল পাওয়ার কারণে এসব অঞ্চলে সরিষা, তিষি, সয়াবিন, তিল ইত্যাদি তৈল জাতীয় ফসলের আবাদ কমতে থাকে। তবে এখনও সরিষার তেলের কদর থাকায় স্বল্প পরিসরে হলেও সরিষার আবাদ হচ্ছে। তেল সমৃদ্ধ ফসল সয়াবিন ও তিষির আবাদ বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এ ফসল দেখা তো দূরের কথা নামও জানে না। তিলের আবাদও কমতে কমতে চলে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। সম্প্রতি দেশে তিলের উচ্চ ফলনশীল নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও সেইসাথে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে তিল চাষের প্রতি কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের ফলে তিল চাষের ব্যাপারে আবারও নতুন করে ভাবতে শুরু করে। তারই ফলশ্রুতিতে কয়েক বছর ধরে তিলের আবাদ বাড়তে শুরু করেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় তিল চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল মাত্র ৮৫হেক্টর জমি। সেক্ষেত্রে আবাদ হয়েছে ১১৭হেক্টর জমি। নতুন করে তিল চাষ বাড়ার কারণ হিসেবে কৃষকরা জানায়, এক সময় দেশী জাতের তিলের চাষ করে অন্যান্য ফসলের তুলনায় তেমন একটা লাভ হতো না। তাই এলাকার মানুষ তিলের আবাদ প্রায় প্রায় ভুলতে বসেছিল। বর্তমানে দেশে উচ্চ ফলনশীল তিলের জাত উদ্ভাবন হওয়ায় ও কৃষি বিভাগের তদারকিতে আবারও মানুষ তিল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। চলতি মৌসুমে এলাকায় বারি-২, বারি-৩, বারি-৪ ও আটশিরা(ভারতীয়) জাতের তিলের আবাদ হয়েছে। তবে বারি-৪ জাতের তিলের আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সব জাতের তিলেরই বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। অভিজ্ঞ কৃষকরা জানান, মাটির উর্বরাশক্তি ফেরাতে তিল চাষের জুড়ি নেই। বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরাশক্তি কমে যাচ্ছে। তাই এসব জমিতে তিল চাষ করে একাধারে ফসল লাভ ও জমির হারিয়ে যাওয়া উর্বরাশক্তি ফেরানো সম্ভব। তিল থেকে শুধু তেলই পাওয়া যায় না। এ তিল দিয়ে চাউলের আটা, চাউল ও গুড় অথবা চিনি সহযোগে নানারকম পিঠা পায়েস তৈরি হয়। যার কথা শুনলে ভোজন রসিকমাত্রেরই জিভে জল আসে। কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলেরখাজা তৈরি হয় এই তিল দিয়ে। আর গ্রামাঞ্চালের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে এই তিলের খাজা অত্যন্ত লোভনীয় একটি খাবার। এ ছাড়া ভোজ্য তেল হিসেবে তিলের তেল খুবই উপকারী। যাদের শরীর চড়া তাদের মাথা ঠা-া রাখতে তিলের তেলের জুড়ি নেই। তিলের খৈল গবাদি পশুর খাদ্য ও সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাই তিল চাষ থেকে নানাভাবে লাভবান হতে এ চাষের প্রতি আমাদের যতœবান হতে হবে। দর্শনার ভুষিমাল ব্যাবসায়ী আঃ রহমান জানান, বর্তমান বাজারে প্রতিমণ তিল ১হাজার ৫শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, একজন কৃষক জমিতে তিল চাষ করে একাধারে নানারকম উপকার পেয়ে থাকেন। যেমন, তিল গাছের যেসব পাতা জমিতে পড়ে তা পচে মাটির সাথে মিশে সবুজ সারের কাজ করে তাতে জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায়। একই জমিতে কয়েক বছর তিলের আবাদ করলে অন্যান্য ফসলের আবাদ করতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। এ গাছের কা- অর্থাৎ ডাঁটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তিল থেকে ভোজ্য তেল ও খৈল পাওয়া যায়। এ ফসলে তেমন কোন রোগ-বালাই নেই বলে খুব কম খরচে ও সহজ পদ্ধতিতে আবাদ করা যায়। পানি জমে না, একদিকে ঢালু, দো-আঁশ মাটি ও একটু উঁচু জমিতে তিল ভালো জন্মে। তিল আবাদ করে একটু যতœ নিলেই প্রতি হেক্টর জমি থেকে দেড় মেট্রিক টনেরও বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভালো ফলনে লাভবান হচ্ছে কৃষক দামুড়হুদায় বাড়ছে উচ্চ ফলনশীল জাতের তিলের আবাদ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ