পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
থেমে নেই আকাশপথে মানবপাচার। বেশ কিছু দেশে জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকায় আকাশ পথে মানবপাচারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল যুবকদের স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়াসহ পশ্চিমা দেশে পাচার করতে সক্রিয় রয়েছে। যুবকদের স্বপ্নের দেশে পৌঁছে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র। বিদেশে গোপন আস্তানায় দালাল চক্রের কবলে অবরুদ্ধ যুবকদের ফিরিয়ে আনতে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বাড়িতে থামছে না কান্নার রোল। সুযোগ বুঝে দালাল চক্র এসব যুবকদের কারো কারো পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণও আদায় করছে। দীর্ঘ চার বছর যাবত মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। দেশটিতে স্বল্প কিছু মহিলা গৃহকর্মী যাচ্ছে। দশ সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারও বন্ধ রয়েছে।
হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে কুয়ালালামপুরে ট্রানজিট দিয়ে ভিয়েতনামে ও ইন্দোনেশিয়ায়ও যুবকদের ভিজিট ভিসায় পাচার করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই ট্রানজিট হয়েও পশ্চিমা দেশে পাচার হচ্ছে যুবকরা। দালাল চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে আকাশপথে পাচার হওয়া ৬ শতাধিক বাংলাদেশী যুবক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করে বর্তমানে মেক্সিকোর কারাগারে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে। বিদেশের কারাগারের আটককৃত এসব যুবকদের আত্মীয়-স্বজনরা দ্বারে দ্বারে কান্নাকাটি করেও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না। মেক্সিকো সরকার এসব বাংলাদেশী যুবককে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলেও এখনো তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চিরঞ্জীব সরকার ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানবপাচারের শিকার মেক্সিকোর কারাগারে ৬৭৫ জন বাংলাদেশী রয়েছে। চিরঞ্জীব সরকার বলেন, ৬০ দিনের মধ্যে মেক্সিকোর আদালতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্থাপন করতে না পারলে দেশটির সরকার সহনশীল দৃষ্টি দিয়ে আটককৃতদের মুক্তি দিয়ে থাকেন।
আকাশ পথে মানবপাচারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিমান বন্দর টাস্কফোর্সের প্রধান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নাজীবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। তিনি এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রৌনক জাহানের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন।
বায়রার নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকায় দালাল চক্রের মাধ্যমে আকাশ পথে মানবপাচারের সংখ্যা বাড়ছে। মানবপাচারের সাথে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সীর মালিকরা জড়িত নয়। তিনি বলেন, মানবপাচারকারী চক্রের সাথে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক জড়িত রয়েছে। বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সাথে মানবপাচারকারী চক্রের দহরমহর সম্পর্ক থাকার অভিযোগ রয়েছে। বায়রা সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, বিমান বন্দর ইমিগ্রেশন ও টাস্কফোর্সের চোখে ধুলা দিয়ে কিভাবে এসব যুবকদের প্রতিনিয়ত ভিজিট ভিসার নামে বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে। বন্ধকৃত দেশগুলোতে শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
দালাল চক্র মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের লক্ষ্যে নতুন রুট হিসেবে ইন্দোনেশিয়াকে বেছে নিয়েছে। ভিজিট ভিসার নামে প্রতারক চক্র গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল যুবকদের মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঢাকা থেকে বিমান যোগে ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি দেশটির পুলিশ মেদান শহরের একটি দোতলা ভবনে অভিযান চালিয়ে ১শ’ ৯২ জন বাংলাদেশীকে আটক করে। এছাড়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে আরো ৫৯ জন বাংলাদেশি যুবককে। গত এপ্রিল মাসে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ও মেরিন পুলিশ সাগরপথে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টাকালে ৩০ জন বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসেও মালয় ইমিগ্রেশন পুলিশ থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ায় অনুপ্রবেশকালে ১০ জন বাংলাদেশী ও ২১ জন মায়ানমারের নাগরিককে আটক করে।
এদিকে, দালাল চক্র পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামে ভিজিট ভিসার নামে অবাধে মানবপাচার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দালাল চক্র অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে দেশটিতে যুবকদের পাঠিয়ে জনপ্রতি তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মানবপাচারের শিকার শতাধিক বাংলাদেশী এখনো ভিয়েতনামে অনাহার-অনিদ্রায় জীবন-যাপন করছে। প্রতারণার শিকার এসব যুবকদের কেউ কেউ দেশের আত্মীয়-স্বজন থেকে বিমান ভাড়ার টাকা নিয়ে নিরুপায় হয়ে দেশে ফিরছে। রাজধানীর উত্তরার দালাল সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে গত ৬ মাস আগে ঝিনাইদহ জেলার কোর্ট চাঁদপুরের খালেসপুর গ্রামের মোস্তফা, পাবনার সারোয়ার, নোয়াখালীর সোহেল রানা, নরসিংদীর রুহি দাস, নয়ন সরকার, ও নেত্রকোনার মুজাহিদ ভিয়েতনামে গিয়ে দেশটির ভোন্না সিটিতে শিপইয়ার্ড-এ পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। প্রতারণার শিকার এসব যুবক নিজের টাকায় বিমানের টিকিট কেটে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রতারণার শিকার ঝিনাইদহের মোস্তফা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিয়েতনাম থেকে প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসা নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার টংগীরপাড় গ্রামের স্বপন দাস জানান, ফেনীর দালাল কাজী ওমর ফারুক প্যারাগ ট্রাভেলসের মাধ্যমে লক্ষীপুরের জসিম, অঙ্গরাজ দাস, মিঠু শীল, হানিফ, নারায়ণগঞ্জের এমরান, কুমিল্লার হাবিব ও জনি লাল ঘোষ বেশি বেতনের চাকরি দেয়ার কথা বলে ভিয়েতনামে গিয়ে পথে বসেছে। ভিয়েতনামে কাজকর্ম না পেয়ে দেশটির পাম্পুলার পার্কেও ঘুমাতে হয়েছে বাংলাদেশী এসব যুবকদের। দালাল সাইদুর রহমানের মাধ্যমেও অনেকেই ভিয়েতনামে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। ভিয়েতনাম থেকে প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফিরে বরগুনা জেলার তরিকুল ইসলাম জানান, উত্তরার একটি ট্রাভেলসের মালিক কামাল হোসেনের মাধ্যমে প্রায় ২৮ জন যুবক ভিয়েতনামে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসেছে। ভিয়েতনামে নিয়ে সকল কাগজপত্র করে দিয়ে চাকরি দেয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কামাল হোসেন। ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকা বিমান বন্দর দিয়ে কুয়ালালামপুর ট্রানজিট দিয়ে যুবকদের ভিয়েতনামে নিয়ে যায় প্রতারক চক্র। ভিয়েতনাম থেকে বরিশালের আগৈলঝড়া থানার ছয় গ্রামের মো. আরিফ জানান, চাঁদপুরের সাইফুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জের আলমগীর হোসেনসহ বর্তমানের ৯ জন ভিয়েতনামে চরম দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে। উত্তরার কামাল হোসেন এসব যুবকদের ভালো বেতন চাকরি দেয়ার কথা বলে গত ৬ মাস আগে ভিয়েতনামে নিয়ে কোনো কাজ দিতে না পেরে পালিয়ে দেশে চলে এসেছে।
রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ সাসকো ট্রেডিং লিমিটেডের (আর এল-১১০৩) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শহিদুল্লাহ তার বন্ধুর মাধ্যমে ভিয়েতনামে সুয়েটার ফ্যাক্টরিতে থাকা-খাওয়া ফ্রি ও ৩শ’ মার্কিন ডলার বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে কুমিল্লার হাবিবুর রহমান, শরিফ, নোয়াখালীর রেলের সাবেক স্টেশন মাস্টার জসীম উদ্দিনের ছোট ভাই দাউদ, হারুন , আলমগীর, মোহাম্মদ হাবার, চট্টগ্রামের হানিফ, কিরন বড়–য়া, শওকত আলীকে গত ২ সেপ্টেম্বর নিউ দিল্লি নিয়ে যান। সেখান থেকে ব্যাঙ্কক হয়ে তাদেরকে ট্যুরিস্ট ভিসায় ভিয়েতনাম পাঠানো হয়। প্রতারণার শিকার ৯ জন যুবক ১৪ দিনের মধ্যে দেশে ফিরে আসে। আবুল কাসেম গত ২৬ জানুয়ারি সাসকো থেকে ২ লাখ ৮ হাজার টাকা ফেরত নিয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি বাকি টাকা ফেরত এবং প্রতারণার বিচারের দাবিতে বিএমইটির মহাপরিচালকের কাছে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।