Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি

লজ্জিত পর্যবেক্ষণকারী শিক্ষকরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সর্বাঙ্গীণ সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচনে পর্যবেক্ষণকারী বিশ্ববিদ্যালয়টির আটজন শিক্ষক। ডাকসু নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০জন শিক্ষক আবেদন করেন এবং অনুমতি পান। এর মধ্যে ৮জন শিক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। গতকাল (সোমবার) নির্বাচন শেষে পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতার আলোকে তারা গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তারা ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ১১ মার্চ বহুল প্রতীক্ষিত ঐতিহাসিক ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে এই নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহের সঞ্চার হয়। আমরা কয়েকজন শিক্ষক নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবামূলক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চিফ রিটার্নিং অফিসার মৌখিকভাবে অনুমতি দেন এই বলে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এই দায়িত্ব চাইলেই পালন করতে পারবো। আমরা ভোটের দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ছাত্রদের হল এসএম হল, সূর্যসেন হল, মুহসীন হল, এফ রহমান হল, শহীদুল্লাহ্ হল এবং ছাত্রীদের দুটি হল রোকেয়া হল এবং কুয়েত মৈত্রী হল পরিদর্শন করি।
আমরা কুয়েত মৈত্রী হল থেকে পর্যবেক্ষণ শুরু করি। কারণ, আমরা শুরুতেই জানতে পারি এ হলে ভোটদানে অনিয়মের কথা। ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগে ছাত্রীরা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকাদের কাছে ভোটদানের পূর্বে শূন্য ব্যালট বাক্স দেখতে চান কিন্তু তাদের এই ন্যায্য দাবি অগ্রাহ্য করা হয়। এতে ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং একপর্যায়ে কেন্দ্রের পাশের কক্ষ থেকে একটি বিশেষ ছাত্র সংগঠনের পক্ষে পূরণ করা প্রচুর ব্যালট পেপার উদ্ধার করে। সেগুলোর বেশকিছু আমরাও দেখতে পেয়েছি। এরকম অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়। এ ঘটনায় প্রভোস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ না হলেও আমরা রিটার্নিং অফিসারদের লজ্জিত ও মর্মাহত দেখতে পাই।
একপর্যায়ে রোকেয়া হলে গোলযোগের খবর পাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, সকালে কুয়েত মৈত্রী হলের অভিজ্ঞতার পর, সরকারি ছাত্রসংগঠনের বাইরের বিভিন্ন প্যানেলের শিক্ষার্থীরা ভোটকেন্দ্রের পাশের রুমে ব্যালট পেপারের সন্ধান পান এবং সেগুলো দেখানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেন। কিন্তু সেগুলো ছিল সাদা ব্যালট পেপার। এরপর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এবং সরকারি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিরোধীদের ওপর চড়াও হয়। বিরোধীপক্ষের কয়েকজন আহত হন। উভয় পক্ষের উত্তেজনায় এরকম অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে রোকেয়া হলে, যার নিন্দা জানাই আমরা।
ছাত্রদের হলের ভেতরে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। তবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে কতগুলো অনিয়ম চোখে পড়ে। তা হলো-
ভোটারের আইডি চেক করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সদস্যরাই বেশি ভূমিকা রেখেছেন এবং অনাবাসিক ছাত্রদের ভোট দিতে বাধা প্রদান ও নিরুৎসাহিত করেন তারা। ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করলেও অন্য প্যানেলের প্রার্থী ও কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে বা ভোটারের সারির আশপাশে অবস্থান গ্রহণ করতে বাধাগ্রস্ত হন।
ভোটকেন্দ্রের অব্যাবহিত বাইরে কৃত্রিম জটলা করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা, যাতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শ্লথ হয় এবং বাকিরা ভোটদানে নিরুৎসাহিত হয়। অনেকক্ষেত্রে বুথের ভেতরে আমরা সময় গণনা করে দেখেছি ৫ থেকে ২৩ মিনিট পর্যন্ত সময় ব্যয় করেছে কোনো কোনো ভোটার, যা ইচ্ছাকৃত মনে হওয়ারর কারণ রয়েছে। ভোট চলাকালেই রোকেয়া হলের সামনে একটি সংগঠনের ২০-২৫ কর্মীকে বাইকের হর্ন বাজিয়ে শোডাউন করতে দেখা গেছে, যা আচরণবিধির লঙ্ঘন।
একটি বড় অসঙ্গতি মনে হয়েছে, ব্যালট পেপারে কোনো সিরিয়াল নম্বর ছিল না। ৪৩ হাজার ভোটারের একটি নির্বাচনের ব্যালট পেপারে সিরিয়াল নম্বর না থাকাটা আমাদের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কারণ এতে নির্বাচনের ফলাফলে গুরুতর অনিয়ম ঘটানো অনেক সহজ। কোন হলে কোন সিরিয়াল গেল, তাও ট্র্যাক রাখার উপায় থাকার কথা নয়।
পরিশেষে আমরা এটাই বলতে চাই এই বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচনের অনিয়মের ঘটনাগুলো আমাদের খুবই লজ্জিত করেছে। এ ঘটনা জনগণের কাছে পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন করেছে। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে, যা সার্বিকভাবে একাডেমিক পরিবেশ বিঘ্নিত করবে। এত বছর পরে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন সফলভাবে না করতে পারার ব্যর্থতার দায়ভার প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষক সবার এবং এই ব্যর্থতা পুরো শিক্ষক স¤প্রদায়ের নৈতিকতার মানদন্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা চাই এই ব্যর্থতার একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক। সেই সাথে এই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হোক।
বিবৃতিদাতা শিক্ষকরা হলেন- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর গীতি আরা নাসরীন,পদার্থ বিভাগের প্রফেসর কামরুল হাসান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর ফাহমিদুল হক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেসর কাজী মারুফুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা খানম ও অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অতনু রব্বানী।#



 

Show all comments
  • Masud Hasan ১২ মার্চ, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
    আগামী একশো বছর পর কে এম হুদা সাহেব থাকবেন না, ঢাবির দলকানা প্রশাসন থাকবে না, আমি বা আমরা থাকবো না, রব্বানী কিংবা নুরুও থাকবে না। কিন্তু ইতিহাসে স্থান করে নিচ্ছে, 'মিডনাইট ইলেকশন' আগামী প্রজন্ম এই ইতিহাস পড়ে আমাদের মতো কাপুরষ প্রজন্মের নামে একদলা থুতু ফেলবে -ভাবতেই ঘেন্না লাগছে! ইসি, ভিসি সব যেন একই খোয়াড়ের মেষ!
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Rana ১২ মার্চ, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
    শিক্ষিতরাই দেশ ধ্বংসের জন্য অগ্রণী ভুমিকা রাখছে,,অশিক্ষিত জাতিই এখন আমার কাছে নিরাপদ,,কারন তারা সংস্কৃতি ও সুনাম ধরে রাখে আর শিক্ষিত রা চোর,চুরি করে,
    Total Reply(0) Reply
  • Shawon Rahman Jony ১২ মার্চ, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
    'যেই_ জাতির 'শিক্ষকরা'ই চোর, সেই জাতি মনুষ্যত্ব শিখবে কেমনে..??
    Total Reply(0) Reply
  • তরুণ প্রজন্ম ১২ মার্চ, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
    যে ছেলেটি কিছুদিন আগেও স্ট্যাটাস দিয়েছিল; ফুটবলে কে সেরা রোনালদো নাকি মেসি? সে ছেলেটি আজ স্ট্যাটাস দিচ্ছে, ভোট ডাকাতিতে কে সেরা ইসি নাকি ভিসি ?
    Total Reply(0) Reply
  • Anisur Rahman ১২ মার্চ, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
    লজ্জা উঠে গেছে।লজ্জিত হওয়ার কিছু নাই।ঢাবি নির্বাচন আবার হলে জাতিও নির্বাচনও আবার হতে হবে।সম্ভব না।কাপুরুষ জাতির এটাই প্রাপ্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Khan Md Rajib ১২ মার্চ, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
    লজ্জা হয় যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা জায়গায় সেখানেও ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যায়।কিছু বেহায়া নির্লজ্জ ..লীগ
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Ibrahim Humayun ১২ মার্চ, ২০১৯, ২:২৪ এএম says : 0
    ঢাকা ভার্সিটির ছাত্রদের বলছি, পারবেন এই ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে? যদি না পারেন দয়া করে নিজেদেরকে ছাত্র দাবি করবেন না। ৫২ থেকে শুরু করে, ৭১ এবং স্বৈরাচার বিরুধী সব আন্দোলন ছাত্রদের দিয়েই শুরু হয়েছিলো। আপনারা যেহেতু পারবেন না তবে দয়া করে ছাত্র দাবি করে ছাত্র শব্দটাকে কুলষিত করবেন না। ডাকসু নির্বাচন থেকেই ভোট ডাকাতির আন্দোলন শুরু হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar Pasha ১২ মার্চ, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
    গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এ ঢাবির ভিসির আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী চা, সিংগাড়া, সমুচার দামের সাথে সাথে ২৯ বছর পর অনুস্টিত ডাকসু নির্বাচন এর নজিরবিহীন ভোট এর খবর অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবী জানাচ্ছি।।
    Total Reply(0) Reply
  • Monir Uddin Bhuiyan ১২ মার্চ, ২০১৯, ২:২৫ এএম says : 0
    এই কয়জন মাত্র লজ্জা পাইলো?আর কেহ আছেন লজ্জা পাবার?কেহ নাই!আমিও লজ্জা পাই নাই।কারন আমার লজ্জা আইসিইউ তে আছে।সুতরাং লজ্জাহৗনরা জয়যুক্ত হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাকসু

৩ নভেম্বর, ২০২১
১৪ মার্চ, ২০২০
২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ