বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহান আল্লাহপাকের কাছে বান্দার আমল কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত আছে। যথা: ১. ঈমান। ২. ইখলাস। ৩. আমল বা কাজে সুন্নাত পদ্ধতির অনুসরণ। সুতরাং ঈমানহীন কোনো কাফের-মুশরিকের, ইখলাসহীন লোক দেখানো দোয়াকারীর এবং সুন্নাত পদ্ধতি পরিত্যাগ করে নিজের ইচ্ছামতো ইবাদতকারীর কোনো আমল বা কাজ আল্লাহ জাল্লাশানুহুর দরবারে কবুল হবে না। এটাই মহান রাব্বুল আলামিনের শাশ্বত বিধান।
এ প্রসঙ্গে পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ইরশাদ করেছেন: ক. হে ঈমানদারগণ, তোমরা গ্রহীতাকে কষ্ট প্রদান ও খোঁটাদানের মাধ্যমে স্বীয় সদকাকে বিনিষ্ট করো না ওই ব্যক্তির মতো, যে লোক প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে সম্পদ ব্যয় (দান) করে। (সূরা আল বাকারাহ: আয়াত ২৬৪)। খ. ওইসব মুসল্লির জন্য ধ্বংস অপেক্ষা করছে, যারা সালাতের ব্যাপারে অলস। যারা লোক প্রদর্শনী করে বেড়ায়। যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় ছোটখাটো বস্তু সাময়িক প্রয়োজনে লোকদেরকে দেয় না। (সূরা আল মাউন: ৪-৭)। গ. তাদেরকে ইসলাম তথা নিখুঁতভাবে, একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের ইবাদত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সূরা আল বাইয়্যিনাহ: আয়াত ৫)। ঘ. আমরা বলি না যে, আমাদের নেক আমলসমূহ অবশ্য গ্রহণযোগ্য, আর আমাদের গুনাহসমূহ অবশ্যই ক্ষমার যোগ্য। এটা বিভ্রান্ত ফেরকাহ মুরজিয়্যাদের অভিমত। এই অভিমত মিথ্যা এবং বাতিল। বস্তুত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সর্বসম্মত অভিমত এই যে, আমল কবুল হওয়ার উপরোল্লিখিত শর্তাবলি পরিপূরণ ও সংরক্ষণ করতে হবে। বাহ্যিক ত্রুটি হতে মুক্ত হতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ ত্রুটি তথা কুফর, অহমিকা, নিজের আমলের প্রতি গর্ব, লোক দেখানো মনোভাব প্রভৃতি দোষ থেকে পবিত্র হতে হবে। (শরহে ফিরহে আকবর, পৃ. ৭৭-৭৮)।
আর এ কথাও সুবিদিত যে, মুমিনের সব আমল কবুল হওয়া এবং সব বদ আমল ক্ষমারযোগ্য হওয়া অবধারিত নয়। এ প্রসঙ্গে সহজ কথা হলো এই যে, কবুল হওয়ার সব শর্তসহ সম্পাদিত নেক আমল যদি অন্য কোনোভাবে বিনাশ না করা হয় এবং ঈমানের ওপর শেষ নিঃশ্বাস নির্গত হয়, তবে আল্লাহপাক তা-ই কবুল করবেন। আর এটাও স্মরণযোগ্য যে, কবুল করা আল্লাহপাকের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। অনুরূপভাবে গুনাহ করার পর তাওবার শর্ত রক্ষা করে তাওবা করলে আল্লাহপাক তাওবা কবুল করবেন। কিন্তু তাওবা কবুল করাও মহান আল্লাহপাকের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
সারকথা, আল্লাহ তায়ালার জন্য কোনো কিছুই বাধ্যতামূলক নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন: ক. আল্লাহপাক যা ইচ্ছা করেন, তা-ই করেন। (সূরা বুরুজ: আয়াত ১৬)। খ. আল্লাহপাক সগিরা গুনাহের ব্যাপারে শাস্তি দিতে এবং কবিরা গুনাহ হতেও মুক্তি দেয়ার ক্ষমতা ও অধিকার সংরক্ষণ করেন। (শরহে আকায়েদ, পৃ. ৮৭)। গ. যে ব্যক্তি সকল শর্ত রক্ষা করে চলে এমনকি বিনষ্টকারী সব দোষ ও ত্রুটি হতে মুক্ত থেকে আমল করে, অতঃপর তা বাতিল করে না দেয় এবং ওই অবস্থাতেই দুনিয়া হতে বিদায় হয়, আল্লাহ তায়ালা তার আমলকে ধ্বংস করবেন না। বরং কবুল ও সওয়াব প্রদান করবেন। আর যে ব্যক্তি শিরক, কুফর ব্যতীত অন্য গুনাহ করে তাওবার আগেই মুমিন অবস্থায় মারা যায়, তার ব্যাপারটি আল্লাহপাকের ইচ্ছাধীন। তার মর্জি হলে শাস্তি দেবেন, মর্জি হলে ক্ষমা করে দেবেন। তবে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামি হবে না। (শরহে ফিকহে আকবর, পৃ. ৭৭-৭৮)।
স্মর্তব্য, একজন ব্যক্তির মুমিন বা কাফের হওয়া তার সর্বশেষ অবস্থার ওপর নির্ভর করে। সারা জীবন মুমিন হিসেবে জীবন অতিবাহিত করার পর মৃত্যুর সময় কুফরি কালেমার ঘোষণা দিলে যে কাফের হবে। পক্ষান্তরে কুফরি অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করে শেষমুহূর্তে ঈমানের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে পরপারে পাড়ি জমালে সে মুমিন হিসেবে বিবেচিত হবে। মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন: ক. তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ১৩২)। খ. হযরত সহল বিন সায়াদ রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, কোনো বান্দাহ জাহান্নামিদের অনুরূপ আমল করল, অথচ সে পরিণামে জান্নাতি হবে। আবার জান্নাতিদের মতো আমল করল, কিন্তু পরিণামে সে জাহান্নামি হবে। কেননা, আমলের বিষয় শেষ পরিণতি হিসেবেই ধর্তব্য হবে। (শেষ পরিণতি তথা মৃত্যু ঈমানের ওপর হলে মুমিন আর কুফরির ওপর হলে কাফের গণ্য হবে)। (সহি বুখারি: খন্ড ১, পৃ. ৯৭৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।