পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন আজ। সবার দৃষ্টি থাকবে মিনি পার্লামেন্টখ্যাত এই নির্বাচনের দিকে। প্রায় ৪৩ হাজার ভোটারের পাশাপাশি সারাদেশের মানুষ চায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ভোটের আগের রাতে ‘ব্যালটে সিল’ মারার পুনরাবৃত্তি ডাকসু নির্বাচনে মানুষ দেখতে চায় না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশী বিদেশী মিডিয়াগুলোর সজাগ দৃষ্টি এখন ঢাবির দিকে। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়া প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী প্রায় সব দলের প্রার্থীই নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ভোটের দিন সকালে ব্যালট বাক্স কেন্দ্রে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পরও আগের রাতে সে বাক্স কেন্দ্রে নেয়ায় নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। বিগত ডাকসু’র নেতৃত্বে যারা ভিপি-জিএস ছিলেন তাদের প্রায় সকলেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বক্তৃব্য-বিবৃতি দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের ভোটগ্রহণ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে। তবে দুপুর ২টার মধ্যে যারা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারবে তাদের সবার ভোট গ্রহণ করা হবে বলে জানান প্রধান রিটার্নিং কর্মকতা। মোট ৪২ হাজার ৯২৩ জন ভোটারের বিপরীতে ১৮টি হলে স্থাপন করা হয়েছে ৫০৮বুথ। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ভোটারদের আইডি কার্ড দেখানো শর্ত দিলেও গতকাল বিভিন্ন হলের রিটার্নিং অফিসাররা ভোটার তালিকায় নাম থাকা সকল প্রার্থী ভোট দিতে পারবে বলে ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছেন। তবে এক্ষেত্রে এসব শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রত্ব থাকার অন্য কোন প্রমাণ দেখাতে হবে। এদিকে আগের দিন কেন্দ্রে ব্যালট প্রেরণ করা, অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোটগ্রহণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে প্রার্থীরা। ভোটকেন্দ্রে আগের দিন ব্যালট পাঠানো, অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রতিবাদ ও ভোটগ্রহণের সময় ৪ ঘন্টা বাড়ানোসহ ৭ দফা দাবিতে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেয় বিভিন্ন জোট থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা। এসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর, জিএস প্রার্থী রাশেদ খান, স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী এ. আর. এম. আসিফুর রহমান, বামজোটের লিটন নন্দী, স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী অরণী সেমন্তি খান, ছাত্র ফেডারেশন থেকে জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজির প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। ছুটির দিনগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পরিবহণগুলো বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণের সময় কেন্দ্রগুলোতে প্রার্থীদের কোন এজেন্ট না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ভোট গণনার সময় প্রার্থী এবং প্রার্থীর এজেন্ট উপস্থিত থাকতে পারবে বলে জানান বিভিন্ন হলের রিটার্নিং অফিসাররা। আগের রাতে কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স পাঠিয়ে দেয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, মুহসীন হলসহ বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রদের ৩টি হলকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হলেও এসব হলগুলো চিহ্নিত করে নেয়া হচ্ছে না বিশেষ কোন ব্যবস্থা।
ভোটগ্রহণের সময় বাড়াতে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবি উপেক্ষা করেই সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ডাকসুতে ২৫টি পদের জন্য লড়ছেন ২২৯ প্রার্থী। আর ১৮টি আবাসিক হলে মোট প্রার্থী ৫০৯ জন। প্রত্যেক শিক্ষার্থী ৩৮টি করে ভোট প্রধান করতে পারবে। ডাকসু ও হল সংসদের জন্য শিক্ষার্থীদের আলাদা ব্যালট প্রধান করা হবে। ব্যালট পেপারে কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদে ভিপি-জিএস-এজিএসসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আলাদা পৃষ্ঠা রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আলাদা ব্যালট বাক্সে হল সংসদ ও কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট প্রধান করবেন। ভোটগ্রহণ শেষে ইলেক্টনিক্স মেশিনের মাধ্যমে হল সংসদের ভোট হলেই গণনা করা হবে। আর কেন্দ্রীয় সংসদের বাক্স পাঠিয়ে দেয়া হবে প্রশাসনিক কার্যালয়ে। সব হলের ব্যালট বাক্স আসার পর প্রশাসনিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা শুরু হবে।
ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ ব্যবস্থা চালু থাকবে। রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিবহন ম্যানেজার মো: কামরুল হাসান। এবিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আবাসিক হলের বাইরের শিক্ষার্থীরা যেন ভোট দিতে আসতে পারে সেজন্য পরিবহণ সেবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাজধানীর ১৪টি রুটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস সেবা চালু রয়েছে। এদিকে রাতেই কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপার পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে ভোট নিয়ে আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুৃজিবর রহমান হলসহ বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রদের ৩টি হলকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে ভিন্ন মতের শিক্ষক না থাকায় সাদা দলের শঙ্কা
এদিকে ডাকসু নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে বিরোধী মতের কোন শিক্ষককে যুক্ত করা হয়নি উল্লেখ করে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামাতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাদা দলের আহবায়ক প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিলো ডাকসু নির্বাচনকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার স্বার্থে নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন কমিটিতে ভিন্ন মতের শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব রাখা হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা করেন নি। নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষতা নিয়েও বিরোধী প্রার্থী ও সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সাদা দলের প্রচার সচিব প্রফেসর ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ডাকসু নির্বাচনে অতীতে স্টিলের ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা হতো। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম, এবার যাতে স্বচ্ছ বাক্স ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সে দাবি মানা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে সকল ভয়-ভীতি ও চাপ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ করা হয়। এ পর্যন্ত ডাকসুতে ৩৬টি নির্বাচন হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭বার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।