Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লেনদেনের পবিত্রতা ও হালাল ভক্ষণ-১

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কোরআন মাজীদ মানব জীবনের স্বচ্ছতা ও চরিত্র নির্মাণ প্রসঙ্গে তার অনুসারীবৃন্দকে যে সমস্ত হেদায়াত বা দিক-নির্দেশনা দিয়েছে, তন্মধ্যে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হেদায়াত হলো নিজের লেন-দেনে পুরোপুরি পবিত্র হওয়া এবং নিজের জীবিকা শুধুমাত্র বৈধ ও পবিত্র উপায়ে অর্জন করা। কোনো অবৈধ পন্থায় একটি পয়সাও উপার্জন না করা।
সূরা বাকারায় মাহে রমজানের রোজার ফরজ হওয়া এবং সে সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ হুকুম-আহকাম ও বিধি-বিধান বর্ণনার পর বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা একে অপরের সম্পদ পারস্পরিক অবৈধ পন্থায় খেয়ো না (বা ভোগ করো না। অর্থাৎ, হারাম ও অবৈধ উপার্জন থেকে তোমরা সতত দূরে থেকো)।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৮)।
প্রায় একই রকম শব্দে সূরা নিসায় বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা পরস্পর একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে তোমাদের মাঝে বৈধ ব্যবসায়িক লেন-দেন হলে তাতে কোনো ক্ষতি নেই।’ (সূরা নিসা : আয়াত ২৯)।
এ আয়াত দু’টিতে অবৈধ জীবিকা উপার্জনের নিষিদ্ধতার জন্য এমনি ব্যাপক ও সাধারণ শিরোনাম অবলম্বন করা হয়েছে, যাতে উপার্জনের সমস্ত অবৈধ ও নাজায়েজ পন্থা অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এতে করে এসব আয়াতের দ্বারা সুদ, উৎকোচ, জুয়া, ছক্কা, লটারী, ধোঁকা-প্রতারণার ব্যবসায় এবং এগুলো ছাড়াও উপার্জনের সমস্ত নাজায়েজ বা অবৈধ পন্থা তা পুরনোই হোক অথবা নবাবিষ্কৃত সবই নিষিদ্ধ ও হারাম হয়ে গেছে।
তাছাড়া সুদ ও জুয়া প্রভৃতির হারাম হওয়ার ব্যাপারটি পৃথকভাবে কোরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, সূরা বাকারার ৩৮ তম রুকুতে সুদখোরদের নিন্দা এবং তাদের অশুভ পরিণতির কথা উল্লেখের সাথে সাথে ‘হাররমার রিবা’ বাক্যে পরিষ্কারভাবে সুদকে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতঃপর ‘ইয়ামহাকুল্লাহুর রিবা’ বাক্যে সুদের অভিশাপ ও আল্লাহর দৃষ্টিরত সুদের অভিশপ্ততা ও প্রত্যাখ্যাত তাকে অধিকতর ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তারপর যারা এসব কিছু শোনার পরও সুদী কারবার পরিহার করে না, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘ফা’জানু বিহারবি মিনাল্লাহি ও রাসুলিহি’ অর্থাৎ, এখন তোমাদের সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, তোমাদের বিরুদ্ধে এখন আল্লাহ ও রাসূলের যুদ্ধ। এখন থেকে তোমরা আল্লাহ রাসূলের শত্রু আর আল্লাহ ও রাসূল তোমাদের শত্রু। (নাউযুবিল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ)।
উপার্জন ও খাবার-দাবারের ব্যাপারে মদ ও জুয়া প্রভৃতি যেসব অপবিত্রতা আরবদের জীবনে বলতে গেলে মূল বিষয়ে পরিণত হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো সম্পর্কে সূরা মায়েদায় বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, এই যে মদ ও জুয়া, এই যে স্থানসমূহ (অর্থাৎ, মিথ্যা উপাস্যদের আখড়া ও তার নৈবেদ্য) এবং এই যে পাশা (অর্থাৎ, পাশার মাধ্যমে লটারী, যা জুয়ারই একটি বিশেষ রূপ) সবই অপবিত্র শয়তানী কর্মকান্ড। এসব থেকে বেঁচে থাক। তাহলেই তোমরা কল্যাণ আশা করতে পার।’ (সূরা মায়েদাহ : আয়াত ৯০)।
মাপজোখ হ্রাসবৃদ্ধি বহু পুরনো ও ব্যাপক ভ্রষ্টাচার। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর যখন তোমাদেরকে কোনো কিছু পরিমাপ করে দিতে হয়, তখন পাত্র পুরোপুরি ভরে দেবে। আর (যখন কাউকে মেপে কিছু দিতে হবে, তখন) সঠিক ডাটে ওজন করবে (পাল্লায় বা ডাটে কোনো রকম হেরফের করবে না)।’ (সূরা বনী ইসরাইল : আয়াত ৩৫)। সূরা আর রাহমানে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ন্যায়সঙ্গতভাবে সঠিক ওজন করো। ওজনে কমতি করো না।’ (সুরা আর রাহমান : আয়াত ৯)।



 

Show all comments
  • Kamrul Hasan ১১ মার্চ, ২০১৯, ১০:১২ এএম says : 0
    আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার সকল হালাল বস্তু আহারসহ তাঁর সকল বিধি-বিধানের প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রদর্শনের পাশাপাশি কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী যাবতীয় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ১১ মার্চ, ২০১৯, ১০:১৩ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলার বিধান পালনে হালালকে হালাল মেনে, হারামকে হারাম মেনে সঠিক পথে চলা এবং শয়তানের অনুসরণ না করাই ঈমানদারে একমাত্র কাজ।
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ১১ মার্চ, ২০১৯, ১০:১৪ এএম says : 0
    আল্লাহ সকলকে হারাম থেকে রক্ষা করুন, হালাল দ্বারা জীবন যাপনের তাওফীক দান করুন। দ্বীনী সহীহ ইলম হাসিল করার তাওফিক দিন। সকল প্রকার চিন্তার ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • জামাল ১১ মার্চ, ২০১৯, ১০:১৫ এএম says : 0
    হালাল উপার্জন মুমিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনন্য শর্ত। হালাল উপার্জন ব্যতিত কোন মুমিন তরীকায় উন্নতি লাভ করতে পারেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসির ১১ মার্চ, ২০১৯, ১০:১৬ এএম says : 0
    জীবন-জীবিকায় উপার্জন করা আল্লাহ মহানের আদেশ এবং প্রিয় নবিজির [সা.] সুন্নাত। আমাদের নবিজিও [সা.] নিজে কর্ম করে জীবিকা উপার্জন করেছেন। তিনি ছিলেন হালাল রিজিকের উপার্জক। হারাম কখনো তিনি উপার্জন করেননি এবং হারাম উপার্জনকে কখনো তিনি সমর্থনও করেননি; বরং হারাম উপার্জন ত্যাগ করার ভয়াবহতা বর্ণনা করে সতর্ক করেছেন। হারাম অর্থ দান করলেও গুনাহ হবে হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন করা যেমন ইবাদাত ও পুণ্যের কাজ, তেমনি অসৎ পন্থায় জীবিকা উপার্জন করা গুনাহ ও অন্যায় কাজ।
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক আহমেদ ১১ মার্চ, ২০১৯, ১০:১৮ এএম says : 0
    সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে হারাম উপার্জনের প্রভাব ব্যক্তি ও সমাজের ওপর হারাম উপার্জনের প্রভাব খুবই মারাত্মক। হারাম উপার্জনের ফলে মানবজীবনের সব ধরনের বরকত ছিনিয়ে নেয়া হয়। রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। আর্থিক অনটন-সংকট দেশে-সমাজে শক্তভাবে শিকড় গেড়ে বসে। বেকারত্ব অভিশাপ আকারে প্রকাশিত হয়। জুলুম, অন্যায়, প্রতিহিংসা ও রেষারেষির সয়লাব ঘটে। যারা হারাম খায়, পরিবার-পরিজন, ছেলে-সন্তানদের হারাম অর্থে লালন করে, তারা মারাÍক ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • মাসুদ ১১ মার্চ, ২০১৯, ১০:২২ এএম says : 0
    হারাম উপার্জন নিজের জন্য ব্যয় করা যেমন হারাম, অন্যকে দেওয়াও তেমন হারাম। এমনকি অর্থ থেকে দান-খয়ারত করাও ইসলামে হারাম।
    Total Reply(0) Reply
  • তরিকুল ইসলাম ১১ মার্চ, ২০১৯, ১০:২৪ এএম says : 0
    ইসলাম হারাম উপার্জন, অবৈধ অর্থ-সম্পদের ব্যপারে খুবই কঠিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন