বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলাম মানুষের কষ্ট প্রশমন, উপকার ও কল্যাণ-সাধনের দিকে অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এমনকি নামাজের মধ্যেও যেন কারও কষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। হাদীস শরীফে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ জনসাধারণের নামাজের ইমামতি করে সে যেন নামাজ দীর্ঘ না করে। কেননা, তাদের মধ্যে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ লোকজনও থাকে। যখন তোমরা একাকী নামাজ পড়ো তখন যত ইচ্ছা দীর্ঘ করতে পারো। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)। অপর বর্ণনায় রয়েছে, ঠেকাগ্রস্ত, প্রয়োজনের মুখাপেক্ষী। যেমন, প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হওয়া বা নির্দিষ্ট সময়ে যানবাহন ছেড়ে যাওয়া বা কথামতো কোনো কাজ করা বা কোথাও পৌঁছানো ইত্যাদি প্রয়োজন।
অপর এক হাদীসে হযরত আবু কাতাদাহ রাযি. বর্ণনা করেছেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি নামাজ পড়তে দাঁড়াই এবং ইচ্ছা থাকে দীর্ঘ করে শান্তিতে নামায পড়ব। কিন্তু যখন কোনো বাচ্চার কান্না শুনতে পাই, নামায সংক্ষেপ করে দিই এ জন্য যে, তার মায়ের কষ্ট বা পেরেশানী হবে। (সহীহ বুখারী)
আরও একটি হাদীসে হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো এমন আমল করা ছেড়ে দিতেন, যা তিনি করতে ভালোবাসতেন। এমনটি শুধু এ ভয়ে করতেন, হয়তো তা আমার উম্মতের ওপর ফরজ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।
সুবহানাল্লাহ! এই না হলে কি দয়াল নবী! আর আমরা! আমরা কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এইসব মানবিক চরিত্র-মাধুর্যকে তাঁর সুন্নত বলে মনে রাখি? মনেও রাখি না, পালনও করি না। আল্লাহ আমাদের এহেন গাফলত ও জাহালত থেকে মুক্ত রাখুন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। তাই সে তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করতে পারে না। তার ভাইকে কোনো শত্রুর হাতে তুলে দিতে পারে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের কোনো প্রয়োজন পূরণ করে দেয়, মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের একটি বিপদ বা কষ্ট দূর করে দেয়, মহান আল্লাহ তার কিয়ামতের বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন। -সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এমন আরেকটি হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ করবে না। ক্রয়-বিক্রয়ে একে অপরকে প্রতারিত করবে না। পরস্পর শত্রুতা রাখবে না। একে অন্যকে এড়িয়ে চলবে না। একজনের ক্রয়-বিক্রয়ে দামদরকালে অন্যজন তাকে ডিঙিয়ে যাবে না এবং তোমরা আল্লাহর অনুগত ভাই ভাই হয়ে জীবনযাপন করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।