Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অকালে বজ্রপাত আতঙ্ক

শিগগির অত্যাধুনিক পূর্বাভাস ব্যবস্থা : টাওয়ার বৃক্ষ তালগাছের চারা রোপণ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

অসময়ে চোখ রাঙাচ্ছে বজ্রপাত। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়া বিভাগের তথ্য মতে, সাধারণত মার্চের শেষ দিক থেকে এপ্রিল, মে, জুন মাসের প্রথম ভাগই বজ্রপাত বা বজ্রঝড়ের পিক পিরিয়ড এবং সবচেয়ে ঝুঁকির সময়। কিন্তু এ বছর তার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই দেশে বজ্রপাতের ঘনঘটা শুরু হয়। গত ৬ মার্চ পর্যন্ত দুই দফায় বাংলাদেশের উপকূলভাগের কাছাকাছি উত্তর বঙ্গোপসাগরে বজ্রমেঘের ঘনঘটা বিরাজ করে। তাছাড়া বর্তমানে পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ (ওয়েস্টরলি ডিস্টারবেন্স) বজায় রয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে তিন জনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮ ব্যক্তি বজ্রপাতে মারা গেছে।
চলতি মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র) মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২ দিন মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী অথবা বজ্রঝড় সংঘটিত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪ দিন হালকা থেকে মাঝারি আকারে কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় হতে পারে। পরিসংখ্যান মতে, প্রতিবছর দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতবছর ২০১৮ সালে দেশে ২২৪ জন মারা গেছে বজ্রপাতে। গত এক দশকে মারা গেছে ২ হাজার ৭৮৩ জন। মাঠে বিচরণরত গবাদিপশু মারা গেছে অসংখ্য। ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাতকে ‘দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করে। মাঠ-ঘাট, ময়দান, বিলে-হাওর-বাওর, নদ-নদীর মতো খোলা জায়গায় বজ্র সরাসরি আঘাত হানার আশঙ্কা থাকে সবচেয়ে বেশি। এরফলে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃষক-কিষাণী, জেলে, মাঝি-মাল্লা, শ্রমজীবী, পথচারী এবং খোলা জায়গায় বিচরণকারী মানুষজন বজ্রপাতের শিকার হয়ে থাকে। আকাশ হঠাৎ ঘনকালো বা মেঘাচ্ছন্ন হলে কিংবা বৃষ্টিপাতের সময় উপরোক্ত খোলা জায়গাগুলো এড়িয়ে বাড়িঘরে নিরাপদ জায়গায় অবস্থানের বিষয়ে পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ। বজ্রপাতের সময়ে ঘরে-বাইরে মোবাইল সেলফোন ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে।
বাংলাদেশের আবহায়ায় বজ্রপাতের মতো দুর্যোগের হার বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ভাইস চ্যান্সেলর ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল (ইইই) বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম এবং একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাইভোল্টেজ বিশেষজ্ঞ অশোক কুমার সেনগুপ্ত বলেছেন, সামগ্রিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক ধারা এরজন্য দায়ী। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের আধিক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে আতঙ্ক বা ভীতি নয়; বরং বজ্রপাতে প্রাণহানি লাঘবের জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। তারা বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খোলা জায়গা হ্রাস, বন-জঙ্গল ধ্বংস করা, তাল, সুপারি, নারকেল প্রভৃতি উঁচু গাছপালা যেগুলো বজ্র-নিরোধক প্রাকৃতিক ‘টাওয়ার বৃক্ষ’ কমে গেছে।
তাছাড়া মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের ফলে মোবাইল সেলফোন ও বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর (গেজেট) মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে। সেগুলো বজ্র বা বাজের নিচের দিকে ধেয়ে আসার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে খোলা জায়গার অভাব দেখা দিয়েছে। আবার বহুতল অনেক ভবনে বজ্র-নিরোধক রাখা হচ্ছে না। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশেও তাপদাহ বাড়ছে। আর সে কারণে বজ্রপাতের প্রবণতাও বাড়ছে।
এদিকে বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বিশেষত প্রাণহানি লাঘব করার লক্ষ্যে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বজ্রপাত পূর্বাভাস ব্যবস্থা বাংলাদেশেও শিগগির চালু হতে যাচ্ছে। এরফলে আমেরিকার তৈরি বজ্র-সতর্কতাকারী সেন্সরের মাধ্যমে বজ্রপাতের অন্তত আধা ঘণ্টা আগে পূর্বাভাস প্রদান করা সম্ভব হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রায় ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সেন্সর সমন্বিত বজ্রপাত পূর্বাভাসের যান্ত্রিক কাঠামো স্থাপন করা হবে। এরমধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া, নওগাঁ জেলার বাদলগাছি, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনার কয়রা এবং পটুয়াখালী।
সেই সাথে বজ্র-নিরোধক লাগসই প্রাকৃতিক ব্যবস্থা হিসেবে দেশের সর্বত্র বিশেষ করে বজ্রপাত-প্রবণ এলাকাগুলোতে অব্যাহত থাকবে তালগাছের চারা রোপণ। গত ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বজ্র-নিরোধক ‘টাওয়ার বৃক্ষ’ ১০ লাখ তালগাছের চারা ও বীজ রোপণ করা হয়। চলতি বছরেও এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বজ্রপাত

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ