Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরলোকের অগ্নিগহ্বর

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

জান্নাত শব্দটি যেমন সব মানুষের কাছে সুপরিচিত, তেমনি জাহান্নাম শব্দটিও সবার কাছে খুবই পরিচিত। জাহান্নাম শব্দটি কানে শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই জাহান্নাম শব্দটি হিব্রু ‘জিহিউনম’ শব্দ থেকে আরবি ভাষায় গৃহীত হয়েছে এবং আল কোরআনের ৩৯টি সূরায় জাহান্নাম শব্দটি ৭৭ বার ব্যবহৃত হয়েছে।
গভীর মনোযোগের সাথে আল কোরআন অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, জাহান্নাম শব্দটির দ্বিবচন ও বহুবচন কোরআনুল কারিমের কোথাও ব্যবহৃত হয়নি। জাহান্নাম শব্দের বাংলা অর্থ হলো দোজখ। হিন্দি, ফার্সি, উর্দু ও সংস্কৃত ভাষায় তার অর্থ হলো নরক। সাধারণভাবে দোজখ বুঝাতে আল কোরআনে ‘নার’ শব্দের ব্যবহারও লক্ষ করা যায়। ইসলামী বিশ্বাস ও পরিভাষা অনুসারে জাহান্নাম হলো পাপাচারীদের শাস্তির জন্য পরলোকের অগ্নিগহ্বর।
আল কোরআনে এই অগ্নিগহ্বরের স্বরূপ বিশ্লেষণ করে ইরশাদ হয়েছে : ক. যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। তা কত মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা মুলক : আয়াত ৬)। খ. কিন্তু যার পাল্লা হালকা হবে, তার স্থান হবে হাবিয়া, তা কী, তা কি তুমি জানো? তা অতি উত্তপ্ত অগ্নি। (সূরা কারিয়া : আয়াত ৮-১১)। গ. কখনো না, সে অবশ্যই হুতামায় নিক্ষিপ্ত হবে, হুতামা কী, তা কি তুমি জানো? তা আল্লাহর প্রজ্বলিত হুতাশন, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে, নিশ্চয়ই তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে, দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে। (সূরা হুমাযাহ : আয়াত ৪-৯)।
মোট কথা, জান্নাত যেমন সত্য, জাহান্নামও তেমনি সত্য। জাহান্নাম আল্লাহপাকের চিরশাস্তির স্থান। এখানে সর্বপ্রকার কঠোর প্রকৃতির শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। জাহান্নামে বিশ্বাস করাও ফরজ। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ক. যারা হতভাগা, তারা নিক্ষিপ্ত হবে অগ্নিতে, তথায় তারা আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে। (সূরা হুদ : আয়াত ১০৬)। খ. জান্নাত সত্য, জাহান্নামও সত্য। কেননা, এ দু’টির ব্যাপারে আল কোরআনের আয়াত ও রাসূল সা.-এর হাদিস অতি সুস্পষ্ট, যা গোপন করার উপায় নেই এবং তা এত অধিক, যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। (নিরবাস : পৃ. ২১৯)। গ. জান্নাত এবং জাহান্নামের প্রত্যেকটিই কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতে রাসূলুল্লাহ সা. ও ইজমায়ে উম্মাহ দ্বারা প্রমাণীত সত্য। আর এ শ্রেণীর সব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনয়ন করা অপরিহার্য কর্তব্য। জান্নাত বলতে বোঝায় প্রতিদান ও পুরস্কার লাভের স্থান, আর জাহান্নাম বলতে বোঝায় দুঃখ ও শাস্তি ভোগের স্থান। (শরহে আকীদায়ে সিফারানিয়্যাহ : খন্ড ২, পৃ. ২১৯)।
প্রকৃতপক্ষে জান্নাতের মতো জাহান্নামও আগেই সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তা মজুদ আছে। এতে কোনোই সন্দেহ নেই। কেননা, জান্নাত-জাহান্নামের সৃষ্টি এবং এ দু’য়ের বিবরণের ব্যাপারে আল কোরআন ও হাদিসে অতীতকালীন ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি আয়াতেকারিমার অনুবাদ পেশ করা হলো। যেমন: ক. বিপথগামী ও পথভ্রান্তদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (সূরা আশ শুয়ারা : আয়াত ৯০)। খ. তোমরা সে অগ্নিকে ভয় করো, যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৩১)। গ. তোমরা ভয় করো সে অগ্নিকে যার ইন্ধন হবে মানুষ আর পাথর, অবাধ্যদের জন্য তা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ২৪)।
বস্তুত জাহান্নামের উপযোগী ব্যক্তিরা কিয়ামতের পরই জাহান্নামে নীত হবে। তার আগে তারা বরযখ বা কবরের জগতে শাস্তি ভোগ করবে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ক. বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দ্বার দিয়ে প্রবেশ করো, তথায় চিরকাল অবস্থান করো। এটি অহঙ্কারীদের জন্য ঘৃণ্য আবাসস্থল। (সূরা যুমার : আয়াত ৭২)। খ. (ফেরাউন ও তার অনুসারীদের জন্য বরযখের জগতে) সকাল-সন্ধ্যা তাদের সামনে নরকাগ্নি উপস্থিত করা হয়। আর যেদিন কিয়ামত কায়েম হবে, ফেরাউন তার বংশধরসহ কঠোরতর শাস্তিতে প্রবিষ্ট হবে। (সূরা কাফির : আয়াত ৪৬)।
জাহান্নামের শাস্তি কাফিরদের জন্য চিরস্থায়ী, অনন্তকালের আর গোনাহগার মুমিনদের জন্য সাময়িক। গোনাহগার ঈমানদারগণ জাহান্নামে প্রবেশ করলেও একদিন না একদিন অবশ্যই বের করা হবে এবং পরিশেষে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। কাফের, দুষ্কৃতকারীদের সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তারা তো আদৌ সেখান থেকে বের হতে পারবে না। তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি। (সূরা মায়িদাহ: আয়াত ৩৮)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন