Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডাকসুতে বদলেছে নেতারা

শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ক্যাম্পাস

নুর হোসেন ইমন | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ডাকসু নির্বাচনের বাকী আর মাত্র চার দিন। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী ও বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রতিদিনই মুখরিত থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়। বদলে যাচ্ছে চিরাচরিত দৃশ্যও। এতোদিন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের সাথে হাত মেলানোর জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা গেস্ট রুম, মধুর ক্যান্টিন, টিএসসিতে লাইন দিলেও এখন তার বিপরীত চিত্র। ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী প্রার্থীরা ছুটছেন শিক্ষার্থীদের কাছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর, অধিকার আদায়ে কথা বলার অঙ্গিকার করছেন। অঙ্গিকার আর প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে দিনরাত চলছে ভোটারদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে। আবার একে অন্যের চেয়ে এগিয়ে থাকতে শিক্ষার্থীদের সমস্যার জন্য দায়ি করছেন একে অন্যকে। সব মিলিয়ে এ নির্বাচন ঘিরে ছাত্র রাজনীতির পাদপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন আলোচনার কেন্দ্রে। এর মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিও তার অতীত গৌরবের দিনে ফিরে যাচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হলে ছাত্রনেতাদের আচরণে পরিবর্তন এসেছে। এরফলে বিভিন্ন সময়ের আলোচিত-সমালোচিত নেতারা নিজেদের চরিত্র বিশ্লেষণ করার সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সমস্যা চিহ্নিত করা ও তা নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঘুরছেন শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে। বিভিন্ন সময় ছাত্রবিরোধী অবস্থান নেয়ার কারণে সমালোচিত সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও আসছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি। শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা শুনতে হলে হলে চলছে মতবিনিয়ম ও প্রার্থী পরিচয় সভা। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকে গত কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের কক্ষে গিয়ে তাদের খোঁজ নিচ্ছেন প্রার্থীরা। দিনে ক্যাম্পাস ও সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আবাসিক হলগুলোতে কক্ষে কক্ষে গিয়ে চলছে গণসংযোগ। সম্ভাব্য ছাত্রনেতাদের সমর্থকরা অনলাইনে চালাচ্ছেন জোর প্রচারণা পাশাপাশি মোবাইলেও পাঠানো হচ্ছে খুদে বার্তা।
শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে গতকাল ছাত্রলীগের নির্বাচনী ইসতেহার তুলে ধরা হয়। অন্যদিক ক্যাম্পাসের কলা ভবন, হাকিম চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচার প্রচারণা চালায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থীরা। এসময় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হলেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। বামপন্থী ও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদেরও প্রচার চালাতে দেখা যায়। কার্জন হল, শ্যাডো এলাকা, বিভিন্ন অনুষদের গেটে প্রচারপত্র বিলি করেন তারা।
ছাত্রলীগ তাদের প্রতিশ্রুতিতে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় রূপরেখা, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও সিঙ্গেল সিট নিশ্চিত করা, মানহীন সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিল, সাত কলেজের অধিভুক্তি নিয়ে পুনর্বিবেচনা, ডিজিটাল ল্যাব, আধুনিক লাইব্রেরি ও ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা, অযৌক্তিক সকল ফি এবং জরিমানা বাতিল, ক্যাম্পাসে গণপরিবহন বন্ধ, প্রাইভেট পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করা প্রভৃতি।
ছাত্রলীগের জিএস প্রার্থী গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাদের স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে হবে। যেখানে সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা নিরাপদ আশ্রয়টুকু পাবে।
এদিকে ছাত্রদল আনুষ্ঠানিক ইসতেহার প্রকাশ না করলেও বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংগঠনের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় চালাচ্ছে। এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা, আবাসন ও পরিবহন সমস্যা সমাধান, লাইব্রেরিতে পড়ালেখার পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দফা। ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডাকসু নির্বাচন আদায় করে নিতে ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের কথা বলা হলেও হলগুলোতে আমাদের প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিজয় একাত্তর হলে আমাদের ভিপি-জিএস প্রার্থীকে প্রচারণা চালাতে গেলে বাধা দেয় ছাত্রলীগ, এসময় তারা প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রচারপত্র নিয়ে যায়। তবে আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদি।
অন্যদিকে বিগত বছরগুলোতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের শিক্ষার্থী বিরোধী বিভিন্ন অবস্থানের কথা তুলে ধরে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র ও বাম জোটের প্রার্থীরা। নির্বাচনি প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের থেকে ব্যাপক পরিমাণে সাড়া পাচ্ছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রার্থীরা। প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এতদিন যারা ক্যাম্পাসে দখলদারিত্ব করেছে তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর বলেন, আমরা দেখেছি দীর্ঘদিন যাবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্ব চলছে। যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে তাদের ছাত্র সংগঠন দলীয় লেজুড়ভিত্তি করেছে। তাই এবার শিক্ষার্থীরা দলীয় পরিচয়ের বাইরে তাদের নিজেদের প্রতিনিধিকেই ডাকসুতে বিজয়ী করবে। নির্বাচন ঘিরে অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন স্বতন্ত্রভাবে জিএস পদপ্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান। প্রচারণায় শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, গবেষণা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, আবাসিক সমস্যাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরছেন তিনি। এ আর এম আসিফুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করার ফলে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। ডাকসুতে যারা বিভিন্ন পদে লড়ছেন তারা শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে অবহিত আছেন কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ছাত্রলীগের আচরণ বিধি লঙ্ঘন: এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের প্রার্থীদের পরিচিত সভায় মঞ্চ তৈরী করায় আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।এরআগেও সংগঠনটির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কয়েকবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। গতকাল বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের কাছে প্যানেলের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ সভার আযোজন করে সংগঠনটি। আচরণবিধির ৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কোনো ছাত্রসংগঠন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী গেইট, তোরণ, ঘের নির্মাণ, প্যান্ডেল, ক্যাম্প, শামিয়ানা, মঞ্চ স্থাপন ও আলোকসজ্জা করতে পারবেন না। কিন্তু আচরণ বিধির তোয়াক্কা না করে প্রচারণা সভায় মঞ্চ তৈরী করে সংগঠনটি।



 

Show all comments
  • Nurullah Noor ৭ মার্চ, ২০১৯, ৩:০৬ এএম says : 0
    দেশটা আওয়ামীলীগের হয়েগেছে!! অন্যরা তাবলীগ করতে চলেযান।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Mostafizur Rahman Nayan ৭ মার্চ, ২০১৯, ৩:০৬ এএম says : 1
    বাংলাদেশের গৌরব ময় ইতিহাসের অংশ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বর্তমান ছাত্রসমাজের অহংকার, শোভন / গোলাম রাব্বানী।
    Total Reply(0) Reply
  • Pasha Shahinur ৭ মার্চ, ২০১৯, ৩:০৭ এএম says : 0
    কিসের আচরণ বিধি? বাংলাদেশে কি আইনের শাসন আছে?
    Total Reply(0) Reply
  • ফারহানা ইয়াসমিন ৭ মার্চ, ২০১৯, ৩:০৮ এএম says : 1
    বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আছে বলেই বাংলাদেশ আছে। কোনো ভোটের দরকার নাই। ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কারো নির্বাচিত হবার অধিকার নাই বাংলাদেশে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rasel ৭ মার্চ, ২০১৯, ৩:০৯ এএম says : 0
    আচরণবিধি লংঘন করাটা ছাত্রলীগের জন্য এমন কিছু নয় এ ব্যাপারে প্রশাসন নির্বিকার জানি ওদের প্রতি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না
    Total Reply(0) Reply
  • Jagadish Chandra Mandal ৭ মার্চ, ২০১৯, ৩:০৯ এএম says : 0
    অতীতে ডাকসু নির্বাচনের যে গৌরব ছিল এবার বুঝি তা আর থাকবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam ৭ মার্চ, ২০১৯, ৩:১০ এএম says : 0
    যারা নির্বাচনের আগেই আচরণ বিধি মেনে চলে না ছাত্ররা তাদের মিষ্টি কথায় আস্থা রাখবে কিভাব?
    Total Reply(0) Reply
  • ইফতেখার ১১ মার্চ, ২০১৯, ৭:২৫ এএম says : 0
    ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কেউ বর্তমান সময়ে নেতৃত্ব দিতে পারবেনা। প্রতিক্রিয়াশীলদের দ্বারা ক্ষতিই হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাকসু

৩ নভেম্বর, ২০২১
১৪ মার্চ, ২০২০
২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ