বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
শিকার থেকে প্রত্যাবর্তনের পর বাদশাহ নিরিবিলি আলোচনায় শেখকে তলব করেন এবং তাকে উদ্দেশ করে বলতে আরম্ভ করেন, আমার প্রশ্নের যে জবাব তুমি আমাকে দিয়েছিলে আমার তা কিছুই বোধগম্য হয়নি। এখন তুমি আমাকে বুঝিয়ে বলো ‘দ্বীনে হক’ বা সত্য ধর্মের কি অর্থ? ইসলাম প্রচারের জন্য শেখের পক্ষে এটি ছিল এক সুবর্ণ সুযোগ, যা আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন।
শেখ প্রথমে আল্লাহর তওহীদ এবং অতঃপর মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা:)-এর রেসালাত সম্পর্কে অতি উত্তমরূপে এক আকর্ষণীয় বক্তব্য পেশ করেন। অতঃপর ইসলামের অন্যান্য আরকান ও মূল নীতিমালা অতি সুন্দর ও মনোমুগ্ধকরভাবে উপস্থাপন করেন। তার আবেগপূর্ণ ও বাকপটুতায় মুগ্ধ হয়ে তোগলক তৈমুরের পাথর অন্তর একদম মোমের ন্যায় বিগলিত হয়ে যায়।
কুফরের সব মন্দ দিক এবং মূর্তিপূজার সকল দোষ শেখ এমন চমৎকারভাবে তুলে ধরে যে, বাদশাহর দৃঢ়বিশ্বাস জন্মে যে, তিনি এতদিন পর্যন্ত ঘোর অন্ধকার পাপাচারে লিপ্ত ছিলেন এবং তিনি অনুধাবন করলেন যে, মুক্তি ও অন্তরের শান্তি-স্বস্তির প্রকৃত মাধ্যম কেবলমাত্র ইসলামই।
অতঃপর তিনি শেখকে বললেন; আমি আপনার বক্তব্য গভীর মনোযোগের সাথে শ্রবণ করেছি এবং তা শ্রবণ করে আমার বিশ্বাস হয়েছে যে, আপনার ধর্ম সত্য এবং মহানবী (সা:) আল্লাহর রসূল। আমি আপনার খোদার প্রতি দ্রুত ঈমান আনতাম এবং আপনার রসূলকে স্বীকার করে নিতাম। কিন্তু যদি আমি এখনই আমার মুসলমান হওয়ার কথা প্রকাশ করি তাহলে আমার প্রজাসাধারণকে সত্যের পথে আনতে পারব না।
সুতরাং; যুক্তিযুক্ত হবে এখন আপনি নীরব থাকুন। পরিস্থিতি যখন অনুক‚লে হবে এবং আমি যখন সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সক্ষম হব, যেগুলো এখন আমার সামনে বিদ্যমান এবং সমস্ত রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসান ঘটাতে পারব, তখন আপনি আমার নিকট আসবেন। আমি আপনার হাতে ইসলাম গ্রহণ করব এবং আমার প্রজাদেরকে বলব যে, তারা যেন এ ধর্ম গ্রহণ করে। আমার মতে, এভাবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এবং আমাদের উদ্দেশ্যও সফল হবে। অতঃপর শেখ জামালউদ্দীনকে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি তার সঙ্গীদের নিয়ে দেশে চলে যান। অতঃপর সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন।
সে সময় চাগতাই রাষ্ট্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বহু রাজ্যে বিভক্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। বহু বছর পর তোগলক তৈমুর এসব রাজ্যকে একত্রিত করে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যের ভিত রচনা করতে সক্ষম হন। অপরদিকে শেখ জামালউদ্দীন তোগলক তৈমুরের সাথে সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ আর পাননি।
তার মৃত্যুর সময় যখন নিকটবর্তী হয়, তখন স্বীয় পুত্র রশিদউদ্দীনকে ডেকে বললেন; তোগলক তৈমুর কালে একজন বড় বাদশাহ হবেন যখন সে সময় আসবে তখন তুমি তার নিকট গমন করবে এবং আমার সালাম জানিয়ে নির্ভীকভাবে তাকে স্মরণ করিয়ে দেবে, তিনি আমর সাথে কি ওয়াদা করেছিলেন। শেখ জামালউদ্দীনের ইন্তেকাল হয়ে যায়।
কয়েক বছর পর তোগলক তৈমুর যখন শক্তি ও শান-শওকত, প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী হন, তখন রশিদউদ্দীন তার পিতার উপদেশ পূর্ণ করার জন্য তার নিকট গমন করেন। কিন্তু কঠোর নিরাপত্তার কারণে বাদশাহর দরবার পর্যন্ত গমন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।
রশিদউদ্দীন অবশেষে একটি অভিনব কৌশল অবলম্বন করতে বাধ্য হন। তিনি একদিন খুব ভোরে অতিউচ্চ কণ্ঠে বাদশাহর রাজপ্রাসাদের নিকট আজান ধ্বনি উচ্চারণ করতে থাকেন। আজানের শব্দে বাদশাহর আরামের নিদ্রা ভেঙে যায় এবং তিনি জাগ্রত হয়ে অত্যন্ত ক্রোধের সঙ্গে নির্দেশ দেন যে, লোকটিকে গ্রেফতার করে তার সামনে হাজির করা হোক, যে বিনা কারণে চিৎকার করে তার নিদ্রায় ব্যাঘাত করেছে।
যখন রশিদউদ্দীনকে গ্রেফতার করে বাদশাহর সামনে হাজির করা হয়, তখন তিনি বাদশাহকে বললেন যে, আমি এ কৌশলটি আপনার নিকট পৌঁছার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে অবলম্বন করেছিলাম এবং তাতে আমি সফল হয়েছি। অতঃপর তিনি পিতার পয়গাম বাদশাহকে শোনান।
বাদশাহ বললেন, স্বীয় ওয়াদা আমার স্মরণে আছে এবং আমি শেখের প্রতীক্ষায় ছিলাম। এই খবর জেনে আমি খুবই মর্মাহত হলাম যে, তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেছে। এখন আমি তোমার হাতেই ইসলাম গ্রহণ করছি। অতঃপর কলেমা পাঠ করে তিনি মুসলমান হয়ে যান। এরপর তিনি তার প্রজাদের মধ্যে ইসলাম প্রচার করেন। তার যুগে যেসব রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ধর্ম হয়ে যায় ‘ইসলাম’, সেগুলো চাগতাই খান ইবনে চেঙ্গিজ খানের বংশধরগণের অধিকারে ছিল।
বংশানুক্রমে মোগল তাতারি চেঙ্গিজ বংশে ইসলাম প্রচারের রাষ্ট্রীয়ভাবে এটি ছিল দ্বিতীয় পর্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।