Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেঘনার সাথে জ্যোতি বসুর বাড়ীর শতবর্ষী ঘাটও দখল করেছে বেঙ্গল গ্রুপ

নদীখেকোদের কবলে মেঘনা : শেষ

মোক্তার হোসেন মোল্লা, সোনারগাঁও | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

সোনারগাঁও উপজেলার বারদী এলাকায় অনেক দূর থেকে মেঘনা নদীর দিকে তাকালে চোখে পড়ে নদীর তীরবর্তি বিশাল এলাকাজুড়ে দখলদারিত্ব। শুধু নদীর জায়গা নয়, শাখা নদীর জয়গাও দখল করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। নদী দখলকারী প্রতিষ্ঠানের নাম বেঙ্গল সিমেন্ট লিমিটেড। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা একের পর এক নদী ও শাখা নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তুলছে স্থাপনা। কোথাও কোথাও বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোনারগাঁওয়ের বারদী মৌজায় কিছু ব্যক্তিগত জমি ক্রয় করে অবৈধভাবে সরকারী হালট ও সরকারি খাল এবং মেঘনা নদীর জমি দখল করা শুরু করে বেঙ্গল সিমেন্ট লিমিটেড। ধীরে ধীরে তারা প্রায় ১০ একর নদীর জমি অবৈধভাবে দখল করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সোনারগাঁও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ের সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনেও বেঙ্গল সিমেন্টের বিরুদ্ধে মেঘনা নদীর তীরবর্তী ফোরশোর ল্যান্ডভূক্ত ভূমিতে অবৈধভাবে প্রবেশ ও স্থাপনা নির্মাণের প্রমান মিলেছে। উক্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সোনারগাঁও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয় থেকে মেঘনা নদী, নদী তীরবর্তী খাস ভূমি এবং ফোরশোর ল্যান্ডভূক্ত ভূমিতে অবৈধ দখলকৃত জমি স্ব-উদ্যোগে অপসারণের জন্য বেঙ্গল সিমেন্ট লিমিটেডকে ৩ দিনের সময় দেয়া হয়। কিন্তু সহকারী কমিশনারের (ভূমি) উক্ত নোটিশের প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি বেঙ্গল গ্রুপ।
এদিকে, নদী দখলের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বেঙ্গল সিমেন্ট লিমিটেডকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআইডব্লিউটিএ)। এমনকি, গত বছর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ এর যুগ্ম-পরিচালক একেএম আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বেঙ্গল গ্রুপ পরিদর্শন শেষে নদী দখলের সত্যতা পায়। পরে বিষয়টি সর্ম্পকে কারণ দর্শাতে এবং নদী থেকে ভরাটকৃত বালু স্ব-উদ্যেগে অপসারনের নির্দেশ দেন তারা। কিন্তু তাতেও বেঙ্গল সিমেন্ট এক বিন্দুও নড়েনি। বরং থেমে নেই তাদের দখলদারিত্ব। সংশ্লিষ্ট এজন কর্মকর্তা বলেন, বেশ কয়েকবার বেঙ্গল গ্রুপকে তাদের বক্তব্য জানানোর জন্য তলব করা হলেও কার্যত বেঙ্গল গ্রুপ নদী দখল ছাড়েনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বহুদূর থেকেই বেঙ্গল গ্রুপের নদী দখলের চিত্র দেখা যায়। বেঙ্গল গ্রুপ মেঘনা নদীর শাখা স্থানীয়দের ভাষায় ছাওয়াল বাগিনী নদের মুখও দখল করেছে। সোনারগাঁওয়ের বারদী বাজারের জন্য নির্ধারিত ঘাট ও সরকারী জমির উপর নির্মাণ করেছে বেঙ্গল সিমেন্ট লিমিটেড। শতবর্ষী বারদী বাজার ও বারদী শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্র²চারী আশ্রমকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী এই ঘাট এখন বেদখলে। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতী বসুর বাড়ীর পাশের এই ঘাটটির সাথে অসংখ্যা ইতিহাস জড়িত।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বেঙ্গল সিমেন্ট লিমিটেড প্রথমে কাটা তারের বেড়া দিয়ে মেঘনা নদী দখল করে। পরবর্তীতে বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে দখল করে মেঘনা নদী, নদীর তীরবর্তী খাস ভূমি এবং ফোরশোর ল্যান্ডভূক্ত ভূমি এবং স্থানীয়দের ভাষায় মেঘনা নদীর শাখা ছাওয়াল বাগিনী নদের মুখ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এভাবে ঘাট, নদী ও জমি দখল করেছে বেঙ্গল গ্রুপ। স্থানীয়দের ভাষায়, ছাওয়াল বাগিনী নদের মুখ দখল করার সময় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোন ফল পাওয়া যায় নি। বেঙ্গল গ্রুপের নদী দখলের ফলে বারদীর ইতিহাস-ঐতিহ্য ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথে নদীর নাব্যতাও হারাতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিএম রুহুল আমিন রিমন বলেন, বেঙ্গল গ্রুপের বিরুদ্ধে নদী দখলের খবর পেয়েছি। তাদেরকে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধভাবে দখলকৃত নদী উচ্ছেদ অভিযানে যাবো।

সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, আমি থাকা কালীন কাউকে নদী দখল করতে দিবো না। দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

Show all comments
  • অরুণাভ ভট্টাচার্য্য ৫ মার্চ, ২০১৯, ১১:০৩ পিএম says : 0
    দখলীকৃত জমি উদ্ধারের ব‍্যবস্থা করা উচিত ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ