Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে অধরা ইয়াবা গডফাদাররা

‘আত্মসমর্পণ নয়, পাকড়াও করা হবে’

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

অধরাই থেকে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ইয়াবা গডফাদারেরা। মাদকবিরোধী অভিযানের মুখে তারা আড়ালে চলে গেলেও বন্ধ হয়নি তাদের ইয়াবার কারবার। তাদের আত্মসমর্পণ করানোর কোনো উদ্যোগ নেই। নানা কৌশলে রুট বদল করে তারা চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। এখনও র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ছে ইয়াবার চালান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইয়াবা ব্যবসার নেপথ্যে নায়কদের পাকড়াও করা না গেলে চলমান অভিযানে সাফল্য আসবে না।
মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ১০২ জন ইয়াবা কারিবারি আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তিন লাখ পিস ইয়াবা ও ৩০টি এলজিও জমা দেন তারা। তবে চট্টগ্রামে এমন প্রক্রিয়ায় মাদক কারবারিদের আইনের জালে আটকানোর কোনো উদ্যোগ নেই। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মসমর্পণ নয়, তাদের পাকড়াও করা হবে।
বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে ওঠা কয়েকশ কারখানা থেকে ইয়াবার চালান আসছে দেশে। কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে সাগর, সড়ক ও পাহাড়ি পথে ইয়াবার চালান চট্টগ্রাম হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে চট্টগ্রাম। কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের মতো চট্টগ্রামেও রয়েছে অসংখ্য ইয়াবার গডফাদার। বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার থেকে সরাসরি সাগর পথে ইয়াবার বড় চালান আনার সময় অসংখ্য চালান ধরাও পড়েছে। ইয়াবা ব্যবসা করে চট্টগ্রামেও অনেক মাদক ব্যবসায়ী রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। মহানগরীর হালিশহর, চান্দগাঁও, খুলশীসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের রয়েছে আলিশান বাড়ি।
মহানগরীর পাশাপাশি চট্টগ্রামের আনোয়ারাতেও বেশ কয়েকজন ইয়াবা গডফাদার রয়েছে। আনোয়ারা উপকূলে দীর্ঘদিন থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান খালাস হয়ে আসছে। বাঁশখালী এবং সীতাকুন্ড উপকূলেও ইয়াবার চালান খালাস হয়। উপকূলবর্তী এসব এলাকায় বেশ কয়েকজন ইয়াবা গডফাদার তৎপর রয়েছে। চট্টগ্রামে বসেই কয়েকজন গডফাদার মিয়ানমারের ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও জানা গেছে। এসব গডফাদারদের অনেকে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। র‌্যাব-পুলিশের হাতে পাকড়াও হয়েছে বেশ কয়েকজন গডফাদার।
বাকি গডফাদারদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়ার কোন উদ্যোগ নেই। এর ফলে সামনের দিনগুলোতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের গডফাদাররা ইয়াবা ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কব্জায় নিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি আঞ্চলিক টাস্কফোর্সের সভায় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানও এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের পর চট্টগ্রামসহ এ অঞ্চলের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তাদের রুট পরিবর্তন করতে পারে। যেসব মাদক ব্যবসায়ী এখনও আড়ালে থেকে গেছে তারা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এ ব্যাপারে তিনি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর ইয়াবা কারবারি বা গডফাদারদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়ার কোনো উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি। আত্মসমর্পণ নয়, তাদের পাকড়াও করা হবে। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ইয়াবা কারবারিদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাকিদেরও আমরা দৌঁড়ের ওপর রেখেছি। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, ইয়াবা গডফাদার হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হয় এমন কেউ জেলা পুলিশের তালিকায় নেই। যে কয়জন ছিল তাদের কয়েকজন ইতোমধ্যে র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে মারা গেছে। অনেকে গ্রেফতারও হয়েছে। বাকি ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। গোয়েন্দা নজরদারিও অব্যাহত আছে। তবে কক্সবাজারের মতো চট্টগ্রামে মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ করানোর কোনো উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত নেই।
এদিকে গত বছরের মে মাস থেকে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানেও চট্টগ্রামে থেমে নেই ইয়াবা কারবার। আগের মতো বড় বড় চালান ধরা না পড়লেও ছোটখাটো অসংখ্য চালান ধরা পড়ছে। ইয়াবা কারবারিরা কৌশল বদল করে ভিন্ন রুটে এবং ছোট ছোট চালানে ইয়াবা আনছে। সম্প্রতি পিকনিকের বাসসহ বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বাসে ইয়াবার চালান ধরা পড়ে। টেকনাফ সীমান্তে র‌্যাব-পুলিশের সাথে মাদক কারবারিদের বন্দুকযুদ্ধে মধ্যেও আসছে ইয়াবার চালান। মাদক ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মোবাইলে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে আসক্তদের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইয়াবা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ