Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দৌলতদিয়ায় অলস ২ পন্টুন

রাজবাড়ী থেকে মোঃ নজরুল ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যায়ে স্থাপন করা বিআইডব্লিউটিএর দুটি পন্টুন কার্যত অলস পড়ে আছে। অপর চারটি পন্টুনে রীতিমত ফেরির জট লেগে থাকলেও ওই দুটি পন্টুনে ফেরি ভিড়ে না বললেই চলে। যে কারণে পন্টুনের দায়িত্বরত কর্মীদেরও তেমন একটা পন্টুনে দেখা যায় না।

ফেরি ঘাট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, দৌলতদিয়ার ৬টি ফেরি ঘাটের মধ্যে চারটি বিআইডব্লিউটির এবং দুইটি বিআইডব্লিউটিএর। বিআইডব্লিউটিসির ঘাটগুলি বেশীর ভাগ সময় অত্যন্ত ব্যাস্ত থাকে। অনেক সময় দেখা যায় পাটুরিয়া থেকে যানবাহন বোঝাই করে আসা একটি ফেরি যখন আনলোড হচ্ছে, তখন আরেকটি ফেরি তার পেছনে চ্যানেলের মধ্যে অপেক্ষা করছে। অথচ বিআইডব্লিউটিএর ঘাট দুটি অলস পড়ে আছে।

ফেরি না ভেড়ার ব্যাপারে পন্টুনের সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই পন্টুন দুটি বিআইডব্লিউটিএর বলে তাদের পন্টুনে ফেরি দেয়া হয় না। এখানকার ফেরি নিয়ন্ত্রণ করে বিআইডব্লিউটিসি কর্র্তৃপক্ষ। তারা তাদের নির্ধারিত ৪টি পন্টুন দিয়েই মূলত ফেরি সার্ভিস চালাচ্ছে।
তবে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ পন্টুন দুটি সাইজে একেবারে ছোট এবং তাদের অবস্থানগত কারণে সেখানে ফেরি যায় না। তাছাড়া পন্টুনের কর্মীরাও ঠিকমতো পন্টুনে থাকেন না। নিজেরা অন্য কাজে ব্যাস্ত থেকে পন্টুনে বাইরের লোককে বদলী হিসেবে রেখে যান।
বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া অস্থায়ী কার্যালয়সুত্রে জানা যায়, প্রায় ৮ মাস আগে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের আবেদনের প্রেক্ষিতে যানবাহন পারাপারে গতিশীলতা আনতে নৌ মন্ত্রণালয় দৌলতদিয়া ঘাটে ছোট ফেরি ভেড়ার উপযোগী দুটি পন্টুন স্থাপনের অনুমোদন দেয় বিআইডব্লিউটিএ কর্র্তৃপক্ষকে।

সরেজমিন গতকাল সোমবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাটের ২ নম্বর ঘাট এলাকায় দেখা যায় পল্টুনের উপর আছিয়া নামের এক বৃদ্ধা ধান শুকাচ্ছেন। এ সময় তিনি জানান, ঘাটটিতে কোন দিনও ফেরি ভীর দেখা যায়নি। একনিতেই পরে আছে যে কারনে অনেকে কাপর ধোয়া ও ধান শুকানোর কাজ করেন।
দৌলতদিয়ায় স্থাপিত বিআইডব্লিউটিএ’র ২নং পন্টুনের লস্কর সহিদুল ইসলাম জানান, প্রায় ৫ মাস হতে চললো এ পন্টুনে কোন ফেরি লাগেনি। এ সময় পন্টুনের অন্য কোন স্টাফকে দেখা যায়নি। তিনি জানান, পন্টুনে ফেরি ভেড়ে না বলে সেখানে অলস বসে না থেকে আমরা মিলতাল করে পন্টুনে অবস্থান করি।

৪ নং পন্টুনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার দায়িত্বরত সারেং ও লস্কর কেউ নেই। তাদের বদলী হিসেবে সেখানে আছেন স্থানীয় যুবক দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, এ পন্টুনে দুয়েকদিন পর পর ১-২ টি ছোট ফেরি ভেড়ে। যে কারণে দায়িত্বপ্রাপ্তরা না থেকে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে।
পন্টুনের কর্মীদের তদারকিতে থাকা সারেং ইব্রাহিম হোসেন দাবি করেন, তাদের লোকজন ঠিকমতোই পন্টুনে থাকেন। তবে যেহেতু ফেরি ভেড়ে না তাই মাঝে মধ্যে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে একটু এদিক ওদিক গিয়ে থাকতে পারে। ফেরি ভেড়ার ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। বিআইডব্লিউটিসি’র ঘাটগুলোতে ফেরি জট লেগে থাকলেও এ ঘাট দুটিতে কোন ফেরি ভেড়ে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মী জানায়, পন্টুনে ফেরি ভিড়লে ফেরি থেকে আনলোড হওয়া যানবাহন থেকে বকশিস আদায় করা হয়। এই বকশিসের টাকা বিআইডব্লিউটিসির কর্মচারীদের পাওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের পন্টুনে সাধারনত ফেরি দেয়া হয় না।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মোঃ শাহ আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের নিয়ন্ত্রিত পন্টুন দু’টি সার্বক্ষনিক ফেরি ভেড়ার মত প্রস্তুত থাকে। ফেরির জন্য ঘাট নির্ধারন করে বিআইডব্লিউটিসি। এ দু’টি ঘাটে কেন ফেরি লাগানো হয় না এটা আমার জানা নেই। অপর ঘাট গুলোতে ফেরির জট লেগে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি দাবি করেন, আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক সেখানে সব সময় থাকে। কিন্তু দিনের পর দিন ফেরি না লাগায় কর্তব্যরতরা কিছুটা হতাশ হয়ে হয়ত বাইরে ঘোরাঘুরি করে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, পাটুরিয়া ঘাট থেকে আসা ফেরিগুলো সাধারণত কাছাকাছি ৬, ৫ ও ৩ নং ঘাটে ভেড়ে এবং ওখান থেকেই পুণরায় লোড নিয়ে ফিরে যায়। বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাট দুটি অনেকটা দূরে অবস্থিত এবং সেখানে লোকজন ঠিকমতো থাকে না বলে বিশেষ প্রয়োজন হলেও ঘাট দুটিতে ঠিকমতো ফেরি ভেড়ে না। বৈষম্যের অভিযোগ সঠিক নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেরি


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ