পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন আছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। হার্টে তিনটি ব্লক নিয়ে গতকাল সকাল পৌনে আটটায় হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সকালের শুরুতে হার্টে একটি রিং পরানো হলেও অবস্থার উন্নতি ও অবনতির মাঝেই দিন কেটেছে তার। সর্বশেষ গতকাল রাত ৯টার পর চিকিৎসকরা তার অবস্থা স্থিতিশীল বললেও দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর মত শারীরিক অবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তিনি চোখ খুলছেন, পা নাড়াচ্ছেন, কথা বলার চেষ্টা করছেন। কেউ ডাকলে তিনি অবশ্যই রেসপন্স করছেন। তবে এখনো শঙ্কামুক্ত নন তিনি। তার চিকিৎসার্থে ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছেন। পৌনে ৮টায় হাসপাতালে আসেন তারা। এয়ার অ্যাম্বেুলেন্সের সঙ্গে তারা এসেছেন।
বিদেশি চিকিৎসকরা ওবায়দুল কাদেরকে পর্যবেক্ষণন করার পর গতকাল রাতের সর্বশেষ ব্রিফিংয়ে বিএসএমএমইউ’র ভিসি কনক কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছেন, ওবায়দুল কাদেরকে বিদেশে নেয়ার মত শারীরিক অবস্থা নেই। আর যে এয়ারঅ্যাম্বুলেন্স আনা হয়েছে তা আইসিইউযুক্ত নয়। তাই এতে করে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। দেশেই তার চিকিৎসা হবে।
তিনি গতকাল সন্ধ্যায় বলেছেন, আমরা শতভাগ আশাবাদী, তবে শঙ্কামুক্ত নই। ওনার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। উনি চোখ খুলছেন, পা নাড়াচ্ছেন, কথা বলার চেষ্টা করছেন। কেউ ডাকলে তিনি অবশ্যই রেসপন্স করছেন। তিনি বলেন, তার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর এনজিওগ্রাম করে রিং পরানো হয়েছে। বন্ধ হওয়া নালী দিয়ে ফের রক্ত চলাচল শুরু হয়েছে। তার যে রিপার্কুইশন ইনজুরি হয়েছে, সেটা থেকে বের হতে সময় লাগবে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ায় তার শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুর বা অন্য কোনো দেশে নেয়ার মত শারীরিক অবস্থাও নেই। তিনি ৭২ ঘণ্টা চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তাকে বিএসএমএমইউর ‘করোনারি কেয়ার ইউনিটের’ (সিসিইউ) ২ নম্বর শয্যায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া গতকাল সকাল থেকেই সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার বিভিন্ন রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হবার কারণ উচ্চমাত্রার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও মারাত্মক ধরনের হার্ট অ্যাটাকের কারণে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়া। তবে তার অবস্থা স্থিতিশীল এবং ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে বলে ইনকিলাবকে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউ’র প্রো-ভিসি শহিদুল্লাহ সিকদার।
এর আগে গতকাল দুপুরে ডা. সৈয়দ আলী আহসান বলেছিলেন, ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা ওঠানামার মধ্যে আছে। দোয়া করা ছাড়া কিছু করার নেই। তবে, যেহেতু উনি ভেন্টিলেশনে আছেন, সেহেতু উনি জীবন শঙ্কায় আছেন বলা যেতে পারে। ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টা না গেলে বলা যাবে না স্টাবল অবস্থায় আছেন।
তিনি আরও বলেন, তার (ওবায়দুল কাদের) যে রক্তনালিটা সবচেয়ে বেশি ক্রিটিক্যাল ছিল, আমরা শুধু সেটাই ঠিক করেছি। কিন্তু সেটা বোধ হয় পর্যাপ্ত নয়। কারণ তিনটি নালি প্রয়োজন হয় রক্ত সরবরাহের জন্য। কিন্তু এই মুহূর্তে সেগুলো সারানো যাবে না। সেগুলো ঠিক করতে গেলে আরও বিপদ ঘটবে। যে নালিটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল, ওই নালিটা ঠিক করার পর তার পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির পর্যায়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন অবস্থার উন্নতি হয়-অবনতি হয়, এমন অবস্থা চলছে।
এদিকে গতকাল বিকালে চিকিৎসাধীন সেতুমন্ত্রীকে দেখতে বিএসএমএমইউতে যান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে বিএসএমইউতে পৌঁছে ডি-ব্লকের দোতলায় কার্ডিওলজি বিভাগে যান প্রেসিডেন্ট। এ সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার সহধর্মিনীও ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসাধীন কাদেরকে দেখতে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে বিএসএমএমইউতে যান। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ওবায়দুল কাদের সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রীর ডাকে আশ্চর্যজনকভাবে দুই-তিন সেকেন্ডের জন্য চোখের পলক ফেলে সাড়াও দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু এরপর কয়েকবার ডাক দিলে আর সাড়া দেননি। প্রেসিডেন্টের কয়েক মিনিট পর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও হাসপাতালে যান কাদের দেখতে। এছাড়া ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দুপুর ১টার দিকে তিনি সেতুমন্ত্রীকে দেখতে যান এবং সেখানে চিকিৎসকদের কাছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বর্তমান শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।
এছাড়া গতকাল রাত দশটার দিকে বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল বিএসএমএমইউ’তে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে যান। তারা হলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও ড. মঈন খান। এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম ও উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া তাদের ওবায়দুল কাদেরের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে বের হয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, চিকিৎসকদের কাছ থেকে তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়েছি। দলের পক্ষ থেকে সহমর্মিতা এবং আরোগ্য লাভে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া কামনা করছি।
ওবায়দুল কাদেরের অসুস্থ্যতার বিষয়ে সেতুমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, রোববার সকালে ফজরের নামাজ শেষে হঠাৎ করেই স্যারের (ওবায়দুল কাদের) শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বিএসএমএমইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে চেকআপ করেন ও দ্রুত এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে কার্ডিওলজি বিভাগে নেয়া হয়। পরে তার এনজিওগ্রাম করা হয়। তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়।
গতকাল সকালে বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর ডা. কনক কান্তি বড়–য়া জানিয়েছিলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হার্ট অ্যাটাক হয়। গতকাল সকাল পৌনে আটটার দিকে তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তখনই তাকে হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে এনজিওগ্রাম করে দেখা যায়, তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক। একটিতে স্টেন্টিং করে দেওয়া হয়েছে।
অসুস্থ্য দলের সাধারণ সম্পাদককে দেখতে সকাল থেকেই ছুটে যান মন্ত্রীসভার বর্তমান ও সাবেক অনেক সদস্যসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। ভীড় জমান দলীয় নেতাকর্মীরা। এসময় অনেক কর্মীকে নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নৌ-পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পানিসম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ অনেকেই।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেই তাকে বিদেশে নেওয়া হবে। এ ছাড়া দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ জানিয়েছেন, ওবায়দুল কাদেরকে দেখার জন্য হাসপাতালে ভিড় না করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আরোগ্য কামনায় দোয়া-মিলাদ
গুরুতর অসুস্থ্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক সুস্থ্যতা কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকালে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়ায় ওবায়দুল কাদেরের সুস্থ্যতা কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন, দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীতে যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, ওয়ারী, উত্তরা থানা আওয়ামী লীগ দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু ও আনোয়ার হোসেন বীরপ্রতীক জানান, ঢাকাসহ দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বিএলএফ মুজিব বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কাদেরের জন্য কোরআন খতম দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমে মোনাজাত করেন ইমাম মহিবুল্লা এবং মিরপুরে মোনাজাত করেন ইমাম মিজান সাহেব।
এছাড়া ওবায়দুল কাদেরের দ্রুত সুস্থতা কামনায় চট্টগ্রামবাসীর দোয়া চেয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। নোয়াখালীতেও দলীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।