নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
৪৮১ রান করে ইনিংস হার এড়ানোই ছিল প্রায় অসম্ভব। অথচ সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে চলেছিলেন সৌম্য সরকার আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চতুর্থ দিনে কিউই পেসারদের পেস, স্যুয়িং আর বাউন্সারের পসরা সামলে দুজনেই লড়ছিলেন বুক চিতিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিকে সৌম্য রাঙিয়েছিলেন রেকর্ডময় বীরোচিত ইনিংসে, অধিনায়ক খেলেছেন দায়িত্বের সবটা দিয়ে। তবু দুজনে থামতে থেমে গেছে বাংলাদেশও।
হ্যামিল্টন টেস্ট চতুর্থ দিনের চা বিরতির পরই শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ৪২৯ রানে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ২৩৪ রানের জবাবে ৭১৫ রানের পাহাড় গড়ায় আরেকবার আর ব্যাট করতে নামতে হয়নি নিউজিল্যান্ডকে। তারা জিতেছে ইনিংস ও ৫১ রানের বড় ব্যবধানে।
রোববার সেডন পার্কের মাঠে দলকে বাঁচাতে ১৭১ বলে ১৪৯ রান করেন সৌম্য, প্রিয় এই মাঠে আগে দুই সেঞ্চুরি থাকা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ২২৯ বলে ১৪৯ রানের ইনিংস। পঞ্চম উইকেটে দুজনে গড়েন ২৩৫ রানের জুটি। তবু শেষ পর্যন্তই বড় হারই সঙ্গী তাদের।
রান দিলেও বাংলাদেশের এই ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ সব আঘাত হেনে কিউইদের সেরা ট্রেন্ট বোল্ট। ১২৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
টিম সাউদির বলটা স্কয়ার কাটে বাউন্ডারিতে পাঠাতে চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু শট মাটিতে রাখতে না পারায় পয়েন্টে জমা পড়ে বোল্টের হাতে। ১৪৬ রানের ইনিংস শেষ অধিনায়কের। আরেক উইকেট থাকলেও তখনই আসলে ম্যাচ শেষ। খানিকের মধ্যে ইবাদত হোসেনের আউটে হয়েছেও তাই। টেল এন্ডারদের নিয়ে অবিশ্বাস্য কিছু আর করতে পারেননি তিনি।
রোদ ঝলমলে সকালের পর এর আগে আরেকটি দৃশ্যও বাংলাদেশকে পুড়িয়েছে হতাশায়। মাত্র ৯৪ বলে সেঞ্চুরি করে আস্থার ছবি হয়ে ছিলেন সৌম্য। পঞ্চম উইকেটে অধিনায়কের সঙ্গে হয়ে গিয়েছিল তার ২৩৫ রানের জুটি। ১৪৯ রানে থাকা সৌম্য দিচ্ছিলেন ডাবল সেঞ্চুরিরও আভাস। তার দাপটে মনে হচ্ছিল ইনিংস হার এড়ানো কেবল সময়েরই ব্যাপার। ট্রেন্ট বোল্টের বলে তিনি থামতেই সব গড়বড়। লিটন দাস এসেই স্টাম্পে টেনে বোল্ড, মেহেদী হাসান মিরাজ ছক্কার নেশায় শেষ।
বাকি আর কেউ ব্যাটিংয়ে পটু নন, তাদের কাছ থেকে আশা করাও বাড়াবাড়ি। মাহমুদউল্লাহ তবু সেই আবু জায়েদ আর খালেদ আহমেদকে নিয়ে আশা বাড়িয়েছিলেন কিন্তু তীরে গিয়ে ভেড়াতে পারেননি তরি।
অথচ দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্যে অদ্ভুত সুন্দর। যারা দেরি করে ঘুম থেকে উঠে টিভির সামনে বসেছেন হয়ত বিস্মিতই হতে হয়েছে তাদের। আগের দিনের ৪ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে নেমে আর কোন উইকেট না খুইয়ে পুরো প্রথম সেশন পার করে দেয় বাংলাদেশ। আগ্রাসী সৌম্য সাউদি, বোল্ট, ওয়েগনারদের পিটিয়ে ততক্ষণে তুলে নেন সেঞ্চুরি।
তার ব্যাটে ছিল দাপট, ছিল রাজকীয় ঢঙ, ছিল চোখ ধাঁধানো সৃষ্টিশীল স্ট্রোকের পসরা। এমন্দিনে ২০১০ সালে তামিম ইকবালের গড়া দেশের হয়েছে ৯৪ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরিতেও ভাগ বসান সৌম্য। সেঞ্চুরির পরই অবশ্য খোলনলচে বদলে নিয়েছিলেন। আরও অনেকক্ষন উইকেটে থাকতে হবে এমন চিন্তায় নিজেকে করেন সংযত। ৯৪ বলে ১০০, কিন্তু পরের ৪৯ করেছেন ৭১ বলে। কিন্তু শেষটা করে আসতে পারেননি। বোল্টের বলে কিছুটা আলসে ভঙিতে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরত যান।
এরপরের কয়েক মিনিট দলকে ডুবিয়েছেন লিটন আর মিরাজ। ব্যাট করতে জানেন বলে ওই পরিস্থিতিতে দুজনের কাছে চাহিদা ছিল বেশি। কেবল তারা কেউ একজন মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেই ইনিংস হার এড়ানো যেত। দুজনের ফিরেছেন বাজে শটে।
দ্বিতীয় ইনিংসের এই ব্যাটিং আফসোস বাড়িয়েছে প্রথম ইনিংসে ব্যর্থতায়। কেবল তামিম ছাড়া কেউই টানতে না পারায় দারুণ ব্যাটিং উইকেটেও বাংলাদেশ থেমে যায় ২৩৪ রান। উইকেট, পরিস্থিতি, প্রতিপক্ষ আর অ্যাওয়েতে নিজেদের সামর্থ্য হিসাবে নিলে ম্যাচ আসলে তখনই শেষ। কিউইদের দেওয়া ৭১৫ রানের পাহাড় পরে ঠিক করে দেয় ম্যাচের গতিপথ। যে গতিপথ বদলাতে প্রাণপণে লড়েও পারলেন না সৌম্য-মাহমুদউল্লাহরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৩৪
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ১৬৩ ওভারে ৭১৫/৬ (ইনিংস ঘোষণা)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১০৩ ওভারে ৪২৯ (আগের দিন ১৭৪/৪) (সৌম্য ১৪৯, মাহমুদউল্লাহ ১৪৬, লিটন ১, মিরাজ ১, আবু জায়েদ ৩, খালেদ ৪*, ইবাদত ০; বোল্ট ২৮-৩-১২৩-৫, সাউদি ২৪-৪-৯৮-৩, ডি গ্র্যান্ডহোম ১০-১-৩৩-০, ওয়েগনার ২৪-৪-১০৪-২, অ্যাস্টল ১৫-৩-৫৮-০, উইলিয়ামসন ২-০-১৩-০)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ইনিংস ও ৫২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: কেন উইলিয়ামসন
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।