পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীতে যান চলাচলের জন্য অন্তত ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকার প্রয়োজন। অথচ আছে মাত্র ৭ শতাংশ। এই ৭ শতাংশ দিয়ে চলাচল করে কমপক্ষে ১২ লাখ যানবাহন। এর মধ্যে রাস্তা দখল, অবৈধ পার্কিং, যেখানে সেখানে যানবাহন দাঁড়ানো এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনা তো আছেই।
বিশ্বের অনেক শহর ১০০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে গড়ে তোলা হয়, কিন্তু ঢাকা মূলত অপরিকল্পিত শহর। যদিও বর্তমানে কিছু পরিকল্পনা নিয়ে যানজট নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে, তাও যথেষ্ট নয়। যানজট নিরসনে রাজধানীকে ঘিরে বৃত্তাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা তিন দশক ধরে পরিকল্পনাতেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এর মধ্যে চলছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। ফার্মগেট থেকে শাহবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তার বেশিরভাগ স্থান টিনের বেরা দিয়ে ঘেরাও করে দখলে নিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। দুদিকের সরু অংশ নিয়ে কোনোমতে চলাচল করছে যানবাহন। তাতে ভয়াবহ যানজট লেগেই আছে। ইতোমধ্যে এই পথের শতাধিক বাসের রুট পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে করে বিকল্প রাস্তাগুলোতে চাপ বেড়েছে। সেগুলো দখলমুক্ত না করায় পুরো রাজধানীজুড়েই দিনভর ভয়াবহ যানজটে ভোগান্তি পোহাচ্ছে নগরবাসী।
জানা গেছে, ফার্মগেট থেকে বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ চলায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে। এতে করে বেশিরভাগ যানবাহন এই রাস্তার বিকল্প রাস্তায় চলাচল করছে। তাতে কুড়িল থেকে রামপুরা হয়ে প্রগতি সরণীর উপর চাপ বেড়েছে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটিকে দখলমুক্ত করা হয়নি। এটি ঢাকার পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা।
গত বছর বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্বাঞ্চলে নজর দিলে বদলে যাবে ঢাকা। পূর্বদিকে পরিকল্পিত নগরায়ণ করতে পারলেই দেখা মিলবে নতুন এক ঢাকার। এতে ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়বে। নতুন করে ৫০ লাখ মানুষের আবাসন ও ১৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ঢাকা শহরের মানুষের মাথাপিছু আয় ৮ হাজার ডলার থেকে বেড়ে ৯ হাজার ২০০ ডলারে উন্নীত হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর কুড়িল থেকে শাহজাদপুর হয়ে রামপুরা পর্যন্ত যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত ভয়াবহ এ যানজটের কবল পড়ে মযানুষ অতিষ্ঠ হলেও এ নিয়ে ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের কোনো মাথাব্যাথা নেই। বরং দিন যতো যাচ্ছে যানজটের ভয়াবহতা ততোই বাড়ছে। কুড়িল থেকে রামপুরার দিকে রাস্তাটি প্রশস্ত হলেও রাস্তার দুপাশে রাখা রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, পিকাপ রাখার কারনে রাস্তার প্রায় ৬০ ভাগ বেদখল হয়ে আছে।
এ ছাড়া বারিধারা এলাকা অংশে রাস্তার এক পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ি। এই গাড়িগুলোর কারণে রাস্তার সিংহভাগ দখল হয়ে আছে। জানতে চাইলে এই রাস্তায় চলাচলকারি যানবাহনের চালকরা বলেন, সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি ব্যস্ত রাস্তার উপর রাখার কারণে সকাল থেকে এই অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা যতো বাড়ে যানজট ততোই ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে। ট্রাফিক পুলিশ শত চেষ্টা করেও সেই যানজট আর নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে না। ভুক্তভোগিদের মতে, কুড়িল থেকে মালিবাগ পর্যন্ত অন্তত ৩০টি পয়েন্টে ছোট ছোট যানজট লেগেই থাকে। আর এ যানজটের কারণ রাস্তার উপর ময়লার ডাস্টবিন, রিকশাগুলোর লেন ব্যবহার না করা, বাস স্টপেজের পাশাপাশি ফিলিং স্টেশন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংসহ ফুটপাত ও রাস্তা দখল। সংশ্লিষ্ট জোনের ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, কুড়িল থেকে রামপুরা পর্যন্ত যানজটের প্রধান কারণ রাস্তার উপর বসানো ডাস্টবিনগুলো। তার সাথে রয়েছে রিকশা, ভ্যান ও পিকাপের রাস্তা দখল ও অবৈধ গাড়ি পার্কিং। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত সূয়্যারেজ লাইনের কারণে একটুখানি বৃষ্টি হলেই এই রাস্তায় পানি জমে থাকে। এতে করে গাড়িগুলো ঠিকমতো চলতে পারে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িল থেকে শাহজাদপুরের দিকে আসার সময় যমুনা ফিউচার পার্কের প্রথমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যমুনা ফিউচার পার্কের পাশ দিয়ে বসুন্ধরায় প্রবেশের রাস্তাটিতে গাড়ির ভিড়ে সকাল থেকেই যানজট লেগে থাকে। প্রধান সড়কে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। ভুক্তভোগিদের মতে, সকালে এই যানজট এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে এক ঘন্টায় এক কদমও গাড়ি নড়ে না। ট্রাফিক পুলিশ ও তখন যানজট নিয়ন্ত্রনে হিমশিম খায়। এর সামনে শাহজাদপুরে সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে রিকশা লেনসহ রামপুরাগামী সড়কে দীর্ঘ যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। সুবাস্তুর সামনেই বাস স্টপেজের পাশাপাশি এসটি ফিলিং স্টেশন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই দুই কারণেই পুরো শাহজাদপুর এলাকাজুড়েই যানজট লেগে থাকে। দিনের বেশিরভাগ সময় এই এলাকায় থেমে থেমে চলে যানবাহন। আবার শাহজাদপুরে রিকশার লেনে প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন ঢুকে পড়ায় বাড়তি বিড়ম্বনা সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
শাহজাদপুরের পরে উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারের সামনে সারি সারি রিকশা আর যত্রতত্র বাসসহ টেম্পো, অটোরিকশা দাঁড় করানোর জন্য তীব্র যানজট লেগেই থাকে। রাস্তার দুপাশের মার্কেটগুলোতে আসা যানবাহনগুলোকেও যেখানে সেখানে দাঁড় করানো এই যানজটের অন্যতম কারণ। রাস্তার দুপাশের এ অব্যবস্থাপনা দেখার কেউ নেই। ট্রাফিক পুলিশ আছে মোড়গুলোতে। যানজটের চাপে সেখানেই তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারে না।
জানা গেছে, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে শাহজাদপুর, বাড্ডা, রামপুরা হয়ে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত অন্তত ৩০টি স্পটে কমবেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে রয়েছে আটটি ফিলিং স্টেশন, ছয়টি বিশালাকার ময়লার ভাগাড়, একটি সাতটি ওভার ব্রিজ ও কয়েকটি ইউটার্ন। এসব পয়েন্টেই মূলত যানজট লেগেই থাকে সারাদিন।
জানা গেছে, কুড়িল প্রগতি সরণী দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানীর বাস চলে। সেগুলোর সংখ্যা কতো তা কেউ জানে না। তবে ফার্মগেট-বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ এলাকায় মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ায় বেশ কিছু গাড়ি বিকল্প হিসাবে এখন এই রাস্তা ব্যবহার করছে। বিকল্প রাস্তা হিসাবে গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও রাস্তাটির দখলমুক্ত না করায় পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এখন কোনো কারণ ছাড়াই দিনভর এ রাস্তায় যানজট লেগে থাকে। কুড়িল থেকে সৃষ্ট সেই যানজট মালিবাগ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ট্রাফিক পুলিশের মতে, রাজধানীতে কোনো রাস্তায় একবার যানজটের সৃষ্টি হলে তার প্রভাব পড়ে সবগুলো এলাকায়। অর্থাৎ এই একটি মাত্র রাস্তায় প্রভাবে মগবাজার, বাংলামোটর, সোনারগাঁও মোড় হয়ে যানজট রাসেল স্কয়ার ছাড়িয়ে ধানমন্ডি হয়ে নিউমার্কেটে গিয়ে ঠেকে। সেখান থেকে গুলিস্তান হয়ে পল্টন, কাকরাইল, প্রেসক্লাব, হয়ে আবার শাহবাগ হয়ে এলিফ্যান্ট রোড হয়ে মিরপুর রোডে গিয়ে প্রভাব ফেলে। একইভাবে ফার্মগেট থেকে মহাখালী হয়ে যানজটের বিস্তার ঘটে বিমানবন্দর সড়কে। ব্যস্ত রাস্তা দখল প্রসঙ্গে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিএমপির প্রত্যেকটি জোনের ট্রাফিকের উপ পুলিশ কমিশনারদের ফুটপাথ ও মূল রাস্তায় থাকা দোকানপাট ও অন্যান্য ভাসমান স্থাপনা সরাতে অভিযান চালানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নিয়ে এ অভিযান চালাতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, যে সব এলাকার মূল রাস্তা এখনো দখলে আছে সে সব এলাকায় খুব শিগগিরই অভিযান শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিন লাখ জনসংখ্যার হিসেবে ঢাকার প্রথম মাস্টার প্ল্যান করা হয় ১৯৫৯ সালে। সবশেষ ১৯৯৭ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট প্ল্যান করে রাজউক। কিন্তু সেখানে বিশাল এই জনগোষ্ঠির জন্য যোগাযোগের উপযুক্ত কোন দিক নির্দেশনা ছিলো না। যার ফলে ২৫ শতাংশ সড়কের প্রয়োজনীয় এই শহরে সড়ক রয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। রাস্তার স্বল্পতা, ব্যক্তিগত গাড়ির দৌরাত্ম্য, সমন্বয়হীন রুট পারমিট প্রদান, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল, রাস্তা দখল ও অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে প্রতিনিয়তই যানজট বেড়েই চলেছে নগরে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকার ৭ শতাংশ সড়কের মধ্যে মাত্র ২ থেকে আড়াই শতাংশ মূল সড়ক রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচটি সড়ক হচ্ছে, কুড়িল থেকে প্রগতি সরণি হয়ে রামপুরা ও যাত্রাবাড়ী; আবদুল্লাহপুর থেকে মহাখালী, ফার্মগেট হয়ে প্রেসক্লাব, গাবতলী থেকে আজিমপুর, মহাখালী থেকে মগবাজার হয়ে গুলিস্তান এবং পল্লবী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়ক।
বিআরটিএ’র হিসেবে স্বল্প সড়কের এই শহরে কমপক্ষে ১২ লাখের মত যানবহন চলাচল করছে। এর সাথে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিনশ’ গাড়ি। এর প্রায় ৮০ শতাংশই ব্যক্তিগত। যা যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।