বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিশ্ববাসী বান্দাদের তাকদির নিয়ে বেশি তর্ক-বিতর্ক করা মোটেই উচিত নয়। এ নিয়ে অধিক ঘাঁটাঘাঁটি ও অনুসন্ধানও কল্যাণকর নয়। হাদিস শরীফে এরূপ করা হতে বারবার বারণ করা হয়েছে। কেননা এ বিষয়ের অধিকাংশ কথা, আলোচনা ও পর্যালোচনা মনুষ্য জ্ঞান-গরিমা এবং বিদ্যাবুদ্ধির ঊর্ধ্বে।
হাদিস শরীফে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। যেমন- ক. হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, একদা পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের মাঝে তাশরিফ আনয়ন করলেন, এ অবস্থায় যে আমরা তখন তাকদিরের ব্যাপারে পরস্পরে বাদানুবাদে লিপ্ত ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সা. এতে রাগান্বিত হলেন, এমনকি তার জ্যোতির্ময় মুখমন্ডল ক্ষোভে রক্তিমাভ হয়ে উঠল। যেন তার দুই গন্ডদেশে আনারসের রস ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি রাগত কণ্ঠে বললেন, তোমরা কি এ ধরনের ঝগড়া করতে আদিষ্ট হয়েছ। না আমি এ জন্য তোমাদের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি? তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণ এ ব্যাপারে (তাকদির সংক্রান্ত) বাদানুবাদ শুরু করায় চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি তোমাদের কষ্টে ফেলছি যে, এ ব্যাপারে (তাকদির নিয়ে) কথা কাটাকাটি করো না। (জামে তিরমিজী: খন্ড ২, পৃ. ৪৮০)। খ. হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তাকদিরের ব্যাপারে বেশি কথাবার্তা বলবে তাকে কিয়ামতের দিন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আর যে এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করবে না, সে জিজ্ঞাসিত হবে না। (সুনানু ইবনে মাজাহ: পৃ. ০৯)।
তাকদিরের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের পর কারো এ চিন্তা করে ঈমান-আমল তরক করা সমুচিত নয় যে, আমার ব্যাপারে যা কিছু লেখা হয়েছে, তা তো হবেই। এর কোনো অন্যথা হবে না। এরপর আমার ঈমান-আমলের দ্বারা কী লাভ হবে? এ ধরনের চিন্তা অমূলক, ভিত্তিহীন ও অসার। এর কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীন তিনটি দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।
যথা: ১. কেউ জানে না যে, তার ব্যাপারে কী লেখা হয়েছে। যখন জানা নেই, তখন তো সৎকর্ম ও নেক আমলই করা উচিত। যাতে পরিণতি উত্তম ও কল্যাণকর হয়। ২. এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, তাকদির যেখানে লেখা হয়েছে, সেখানে তার কারণ ও উপকরণও লেখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তাকদিরে যদি লেখা থাকে, অমুক ব্যক্তি জান্নাতি হবে, তাহলে অবশ্যই এ কথাও লেখা হয়েছে, ঈমান এবং সৎ আমলের জন্যই যে জান্নাতি হবে। ৩. বাস্তব জগতের সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়, ‘তাকদিরে যা লেখা আছে তা-ই পাবে।’ এ চিন্তায় বিভোর হয়ে কেউ দুনিয়ার জীবনে ধন-সম্পদ, মান-ইজ্জত, রুটি-রুজি লাভের উপকরণ আহরণের চেষ্টা ও সাধনা পরিত্যাগ করবে না। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে আখেরাতের পুরস্কার লাভের ব্যাপারেও চেষ্টা, সাধনা এবং উপকরণ লাভের জন্য মেহনত পরিত্যাগ করা মোটেই উচিত নয়। এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে সুস্পষ্টভাবে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
ক. হযরত আলী রা. বলেন, একদা আমরা পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে ছিলাম। তিনি শাহাদত অঙ্গুলি দ্বারা মাটিতে দাগ কাটছিলেন। আকস্মাৎ আকাশের দিকে মস্তক উত্তোলন করে বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের জান্নাত বা জাহান্নামের ঠিকানা নির্ধারিত বা লিখিত হয়ে আছে।
তখন সাহাবিরা আরজ করলেন, তবে কি আমরা এর ওপর ভরসা করে বসে থাকব? হে আল্লাহর রাসূল। তিনি উত্তর দিলেন, না। বরং তোমরা আমল করতে থাকো। যার জন্য যা সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য তাই সহজ করা হয়েছে। (জামে তিরমিজি: খন্ড ২, পৃ. ৪৮০-৪৮১)। খ. আল্লাহপাকের কাযা ও কদরকে দলিল ও প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে আল্লাহপাকের আদেশ, নিষেধ ও সৎকর্ম পরিত্যাগ করা আমাদের জন্য মোটেই বৈধ নয়। বরং আমাদের জন্য এ কথা অবগত হওয়া ও বিশ্বাস করা ওয়াজিব যে, আল্লাহপাক কিতাব নাজিল করে এবং নবী-রাসূল প্রেরণ করে আমাদের ওপর তার হুজ্জত ও দলিল পরিপূর্ণ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাতে করে রাসূল প্রেরণের পর আল্লাহর ওপর অপবাদ আরোপের কোনো সুযোগ মানুষের না থাকে।’ (সূরা নিসা: আয়াত ১৬৫)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।